এই কয়েকটি কারণের জন্যই আপনার উত্তর-পূর্ব ভারত ঘুরতে যাওয়া উচিত নয়...

Tripoto
Photo of এই কয়েকটি কারণের জন্যই আপনার উত্তর-পূর্ব ভারত ঘুরতে যাওয়া উচিত নয়... 1/3 by Aninda De
প্রকৃতির নিখুঁত সৌন্দর্যের হাতছানি (ছবি সংগৃহীত)

মীরাবাঈ চানু, মেরি কম আর লাভ্ললিনা বরগোহাইন এর মধ্যে কি মিল বলুন তো? খুব সোজা, তিন জন্যেই অলিম্পিকে দেশের জন্যে স্বর্ণপদক নিয়ে এসেছেন | আবার ভাইচুং ভুটিয়া বা সুনীল ছেত্রী? নিশ্চয়ই বলবেন যে তাঁরাও জাতীয় ক্রীড়াস্তরে ভারতের মুখ উজ্জ্বল করেছেন | প্রতিটি উত্তর ঠিক হলেও, ব্যাট চলে যাচ্ছে একটি অন্যতম গুরুত্ত্বপূর্ণ তথ্য| যা হল, প্রত্যেকেই কিন্তু ভারতবর্ষের উত্তর পূর্ব বা নর্থ ইস্ট ইন্ডিয়ার সন্তান| দুঃখের বিষয়, আমরা বাকি ভারতীয়রা কিন্তু নর্থ ইস্ট ইন্ডিয়ার কথা তখনি ভাবি, যখন সেখানকার কৃতি সন্তানরা দেশের নাম উজ্জল করেন| অন্য সময় কিন্তু নর্থ ইস্ট ইন্ডিয়া, মানে মেঘালয়, মনিপুর, মিজোরাম, অসম, অরুণাচল প্রদেশ, নাগাল্যান্ড আর ত্রিপুরার কথা কিন্তু আমরা সেভাবে মাথাতেই আনি না!

Photo of এই কয়েকটি কারণের জন্যই আপনার উত্তর-পূর্ব ভারত ঘুরতে যাওয়া উচিত নয়... 2/3 by Aninda De
ছবি সংগৃহীত

নর্থ ইস্ট ইন্ডিয়া বর্তমান সময়ের মধ্যেও যেন রোজকার জনসভ্যতার অনেক বাইরে, তাই এখানে গেলে না পাবেন হাই স্পিড ইন্টারনেট, না পাবেন নাইটক্লাব বা পাবে ছড়াছড়ি| সত্যি যেন প্রকৃতির কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়া আস্ত এক হারানো সভ্যতার মধ্যে আজকালকার দিনে কি আর হারিয়ে যাওয়া যায়? তা সে যতই রোম্যান্টিক, যতই অ্যাডভেঞ্চারাস হোক? নর্থ ইস্ট ইন্ডিয়া এখনও ট্যুরিস্টদের ভারে নুয়ে পড়েনি, তাই নেই ইনস্টাগ্রামে দেওয়ার মতো দামি ক্যাফে , বা ডিজাইনার লেবেলের জামা কাপড় পরে নাইট-লাইফে গা ভাসিয়ে দেওয়ার অবকাশ| তার বদলে শুধুই প্রকৃতি, নীল আকাশ, অঝোর বৃষ্টি, কুয়াশা ঘেরা পাহাড় আর নিজের পথ নিজে খুঁজে নেওয়ার চ্যালেঞ্জ| দেখে নি, আরো কি কি কারণে আমাদের একেবারেই নর্থ ইস্ট ইন্ডিয়াতে যাওয়া উচিত নয়|

Photo of এই কয়েকটি কারণের জন্যই আপনার উত্তর-পূর্ব ভারত ঘুরতে যাওয়া উচিত নয়... 3/3 by Aninda De
পর্বতের সঙ্গে প্রকৃতির নিখাদ বন্ধুত্ব (ছবি সংগৃহীত)

দিনের প্রথম সূর্যকিরণ এসে পরে এই ভূখণ্ডেই, পূর্বতম রাজ্য অরুণাচল প্রদেশের মাটিতে| তাই দুপুর পর্যন্ত নাক ডাকানোই যদি উদ্দেশ্য হয়, তাহলে এযাত্রায় এই স্থানটুকু বাদ-ই দিন|

মনের মতন শব্দদূষণ, দৃশ্যদূষণ বা চারপাশ নোংরা করতে না পারলে যদি আপনি তেলেবেগুনে জলে ওঠেন, তাহলেও থাক| কারণ এখানে দূষণ করলেই ফাইন হতে পারে, আর সমস্ত অঞ্চলটি এখানকার নাগরিকরা রাখেন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন এবং স্বচ্ছ| তাদের মানসিকতার সাথে না মিলিয়ে চলতে পারলে আর নর্থ ইস্ট ভারতে গিয়ে কি লাভ বলুন?

চলবে না আপনার ক্রেডিট কার্ড, চলবে না ফোর জি বা ফাইভ জি| নেই কোনও মানিমেকিং ইন্ডাস্ট্রি| আছে শুধুই প্রকৃতি পাহাড় আর পাহাড়ি মানুষদের মন ভালো করা হাঁসির অমলিন ভালোবাসা| পারবেন তো, তাদের বাড়িতে তাদের সাথে তাদের মতন করে থাকতে?

এখানে কিন্তু সবাই সবার বন্ধু| সমস্থানীয় মনে করে সকলেই বুকে জড়িয়ে নেন একে অপরকে, সে টুরিস্ট হোক বা স্থানীয় বাসিন্দা, নেই কোনো বর্ণ বিদ্বেষ| তাই যারা যারা এখানকার মানুষ জনদের এতদিন চিনকি বলে ডেকে এসেছেন, তাদের বোধয় নর্থ ইস্ট এড়িয়ে যাওয়ায় উচিত!

পাবেনা না আপনার চেনা ভাষা, নেই চোস্ত ইংরিজি বা বাবুয়ানা দিয়ে সাজানো শহুরে বাংলা| প্রাচীন জনজাতির মানুষদের সাথে কথা বলার , কমিউনিকেট করার তাই একটাই উপায়, প্রাণ মন খুলে সাবলীল হাসি!

সমস্যা খাবার বেলাতেও কিন্তু, নাই লুচি তরকারি, নাই বিরিয়ানি মোঘলাই| অবশ্য ফুড়ি মানুষদের যদি একটু এডভেঞ্চার করার শখ থাকে, তাহলে পেয়ে যাবেন অসাধারণ সব লোকাল কুইজিন! খাসি, গারো, জয়ন্তীয়া মানুষদের ঘরোয়া খাবার খেতে চাইলে কিন্তু এরম সুযোগ আর পাবেন না|

নর্থ ইস্ট ইন্ডিয়ার বিভিন্ন রাজ্যে সমাজ ব্যবস্থা কিন্তু মাতৃতান্ত্রিক এবং এই সমস্ত জায়গায় মহিলারা পান বিশেষ সম্মান এবং নিরাপত্তা| আপনার পরিবারের সমস্ত মহিলা সদস্যরা কিন্তু এখানে পাবেন সেই আশ্বাস| তবে আপনার যদি চিরাচরিত ভাবে সেই পুরুষতান্ত্রিক সমাজেই ঘোড়া ফেরা করার ইচ্ছে থাকে, তাহলে আপনিও এড়িয়ে চলুন এই স্বপ্নের নর্থ ইস্ট|

ব্যঙ্গাত্মকভাবে রচিত এই লেখার মূল উদ্দেশ্য হল, পাঠকদেরকে এখনো অপরিচিত নর্থ ইস্ট ভারতবর্ষ সম্পর্কে অবহিত করা এবং তাদের মধ্যে নর্থ ইস্ট ভ্রমণের ইচ্ছা জাগিয়ে তোলা| সমগ্র ভারতবর্ষই আমাদের দেশ এবং দেশের প্রতিটি অংশ এবং মানুষজনকে নিয়ে আমরা গর্বিত!

নিজের বেড়ানোর অভিজ্ঞতা ট্রিপোটোর সঙ্গে ভাগ করে নিন আর সারা বিশ্ব জুড়ে অসংখ্য পর্যটকদের অনুপ্রাণিত করুন।

বিনামূল্যে বেড়াতে যেতে চান? ক্রেডিট জমা করুন আর ট্রিপোটোর হোটেল স্টে আর ভেকেশন প্যাকেজে সেগুলো ব্যবহার করুন।

Further Reads