অনন্য ভারতের উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিম প্রকৃতির নানা রূপসৌন্দর্যের সাক্ষী থাকা যায় । তবে রূপসৌন্দর্যের মাপকাঠি দ্বারা বিচার করলে উত্তর-পূর্ব অঞ্চলগুলিকে ও কিন্তু কোনওভাবেই অবহেলা করা চলে না । গারো- খাসি পাহাড়ের চিত্রাকর্ষক দৃশ্যপট থেকে শুরু করে ব্রহ্মপুত্র নদীর প্রবহমানতা যে কোনও পর্যটককে অভিভূত করে।
এবার উত্তর-পূর্ব ভারতের জনপ্ৰিয় ভ্রমণস্থান গুলি সম্পর্কে সংক্ষেপে জেনে নেওয়া যাক।
উত্তর-পূর্ব ভারতের বিখ্যাত ভ্রমণস্থান:
মেঘ পাহাড়ের গোপন মিলনের সাক্ষী থাকতে পৌঁছে যান মেঘালয় । ঘন সবুজের আস্তরণে নির্মীয়মান পাহাড় আর সাথে বর্ষার ধূসর কালো মেঘের লুকোচুরি খেলার প্রত্যক্ষদর্শী থাকতে পারেন।
দর্শনীয় স্থান - চেরাপুঞ্জি, শিলং, ডাউকি নদী, প্রাকৃতিকভাবে নির্মিত ডবল ডেকার ব্রিজ, ইত্যাদি।
সবুজ তৃণভূমিকে দেহরক্ষী পর্বতাঞ্চল দীর্ঘদিন প্রেয়সী প্রেমিকার মতো রক্ষা করে চলেছে । এমনি প্রাকৃতিক দৃশ্য এর সম্মুখীন থাকতে মণিপুরকে বেছে নিতে পারেন ।
দর্শনীয় স্থান -ইমফল, উখরুল, ঠবাল, সেনাপতী ইত্যাদি ।
নাগাল্যান্ড রাজ্যটিকে একটা স্বপ্নের রাজ্য হিসেবে চিহ্নিত করা যায় । তাই এই রাজ্যের সৌন্দর্যের মায়াময়তাকে কখনোই অস্বীকার করা যায় না ।
দর্শনীয় স্থান- দিমাপুর, কোহিমা, মোককচুঙ, মন, ওখা ইত্যাদি ।
এই পার্বত্য শহরের ও একটা নিজস্বতা রয়েছে । হিমালয় দর্শন থেকে স্থানীয় মানুষের আতিথেয়তা পর্যটকদের মনোরঞ্জনের জন্য এক্কেবারে আদৰ্শ ।
দর্শনীয় স্থান- গ্যাংটক, নাথুলা পাস, লাচেন, লাচুং, পেলিং, জুলুক ইত্যাদি ।
উত্তর-পূর্বের অঞ্চলগুলির মধ্যে একমাত্র এই রাজ্যেই রাজকীয়তাকে উপলব্ধি করা যায়।
দর্শনীয় স্থান- আগরতলা, উদয়পুর, জোলাইবাড়ি ইত্যাদি ।
উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের আদি বাসিন্দাদের জীবনযাপন সম্পর্কে বিশদে জানতে পৌঁছে যেতে পারেন মিজোরাম। প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি মিজোরাম কথার অর্থ হল - ' মিজোদের বাসস্থান' ( মিজো হল - এই অঞ্চলের আদি বাসিন্দা)।
দর্শনীয় স্থান- আইজল, লুঙলেই, মামিট, ফাগপুই, ইত্যাদি ।
ভারতের একেবারে পূর্বকোণে অবস্থিত এই রাজ্যটি উদীয়মান সূর্যের দেশ নামে পরিচিত । এছাড়াও এই সীমান্তবর্তী রাজ্যটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জুড়ি মেলা ভার ।
দর্শনীয় স্থান- ইটানগর, তেজু, তাওয়াং, রৈয়িং ইত্যাদি ।
উত্তর পূর্ব ভারতের বন্য জীবন যাত্রা, চা বাগান, প্রত্নতাত্ত্বিক দৃশ্যপট সমন্বয়ে গঠিত রাজ্যটি হলো আসাম। তবে আসাম রাজ্যটি "সিল্ক" শিল্পের জন্য বিশেষ ভাবে পরিচিত।
দর্শনীয় স্থান - কামাক্ষ্যা মন্দির, গুয়াহাটি, কাজিরাঙা ন্যাশনাল পার্ক, মাজুলি দ্বীপ ইত্যাদি।
কেন বর্ষাকালীন সময়টা উত্তর-পূর্ব অঞ্চল ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত?
১. প্রাকৃতিকভাবে নির্মিত ব্রিজ এবং গুহা ভ্রমণ করে বর্ষার সিন্গ্ধতাকে উপভোগ করতে পারেন । এছাড়াও বৃষ্টিবহুল এলাকা মৌসিনরাম ভ্রমণ করে নিতে পারেন ।
২. বৃষ্টির সময়ে উত্তর-পূর্ব ভারত দর্শন করে প্রকৃতির আর্দ্রতা এবং শীতলতা অনুভব করতে পারেন । প্রকৃতপক্ষে এই স্থানগুলি বেশ নিরিবিলি, তাই নিজের সাথে সময় কাটানোর জন্য সেরা গন্তব্য হতে পারে ।
৩. এখানে প্রকৃতির রঙিন খেলার একমাত্র দর্শক থাকতে পারেন । ঘন সবুজে মোড়া পাহাড়ের সাথে কখনো রৌদ্রচ্ছল দিনে নীল আকাশের সাদা মেঘের ভেলা অথবা আকাশের মন খারাপের দিনে মেঘ পিওনের ঝুলি থেকে হঠাৎ অবাধ বর্ষণের মতো প্রকৃতির নানান মহাজাগতিক দৃশ্যর প্রত্যক্ষদর্শী হতে পারেন ।
৪. প্রকৃতির সরলতার মতো এই অঞ্চলের মানুষজনও কিন্তু সরল প্রকৃতির । স্থানীয় মানুষদের কাছে অথিতি মানেই ভগবান । তাই তারা যত্নসহকারে অতিথি আপ্যায়ন করেন ।
৫. আমরা সকলেই জানি দার্জিলিং এর মতো আসামও চা চাষের জন্য বিখ্যাত । দূর থেকে পাহাড়ের গায়ে একের পর এক সুসজ্জিত চা- বাগানের মধ্যে রয়েছে চোখ জোড়ানো শোভা; আর বর্ষায় এই চা বাগানের রূপসজ্জা কিন্তু মনোমুগ্ধকর।
ভারতের এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের গুপ্তভাণ্ডার উন্মুক্ত করতে এবার ঘুরেই আসুন উত্তর -পূর্ব ভারতে ।