আচ্ছা আপনারা কি বিশ্বাস করেন ভূত আছে? এমন কোনও ঘটনা ঘটেছে যেখানে বুঝতে পেরেছেন কোন অলৌকিক অশুভ শক্তির অস্তিত্ব আছে? জানি বৈজ্ঞানিক যুগে হয়তো অনেকেই এই কথাটা বিশ্বাস করতে চাইবেন না যে ‘নেগেটিভ এনার্জি’ বলে কিছু হয়। আর সেই কারণেই একটা ছোট্ট অভিজ্ঞতা শেয়ার করে আজ আমার এই লেখা।
বীরভূম জেলার বোলপুর শহরের ইলামবাজারের কাছেই একটি গ্রাম রয়েছে যার নাম রাইপুর। প্রাচীন এই গ্রামের ঐতিহাসিক ঘটনাবলী আজও আমাদের আকর্ষণ করে। প্রাককথায় জানা যায়, অজয় নদীর তীরে আদমপুর নামে একটি গ্রাম ছিল। একবার বন্যার ফলে গ্রামবাসীরা স্থানান্তরিত হয়ে উপর দিকে বসতি স্থাপন করে। সেখানেই রায়চৌধুরীর তৎকালীন জমিদার হিসাবে প্রাধান্য পায় এবং পরবর্তীতে তাদের নাম অনুসারে এই গ্রামের নাম রাখা হয় রাইপুর।
বহু ঐতিহাসিক ঘটনার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাওয়া রায়চৌধুরী পরিবার এবং সিংহ পরিবারের কালবিন্যাসে পতনের পরে রাজবাড়িটি আজ প্রায় ভগ্ন অবস্থায় পড়ে রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে এই রাজবাড়িটিকে এখন একটি ভৌতিক স্থান হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
গা ছমছমে অভিজ্ঞতায় মোড়া রাইপুর রাজবাড়ি
এই বছর জানুয়ারি মাসে হঠাৎ করেই আমার বোন তার বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে ঘুরতে যায় বোলপুরে। বোন ছোট থেকে একটু ভূতের বই পড়তে ভালোবাসে। সেই কারণে বোলপুরে পা রাখার পরেই ওর মনের মধ্যে রাইপুর রাজবাড়ি ঘুরে দেখার একটি সুপ্ত বাসনা জাগতে থাকে। যেমন হয় তেমনি কাজ। একদিন সকালে কোনও পরিকল্পনা ছাড়াই ওরা বেরিয়ে পড়ে রাইপুর রাজবাড়ির উদ্দেশ্যে। পৌঁছনোর পর প্রথমে ছবি তোলার জন্য খুব সুন্দর সুন্দর জায়গা খুঁজে বেড়ায়। যথারীতি বেশ কিছু ছবিও তোলা হয়। কিন্তু এরপরে ঘটতে থাকে বেশ কিছু অদ্ভুত ঘটনা। প্রথমে ওরা লক্ষ্য করে ওদের ছবি তুলতে তুলতে ফোনের ক্যামেরা হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যায় এবং ফোনের ব্যাটারির চার্জ সম্পূর্ণ শেষ হয়ে যায়, যে ঘটনাটি সত্যিই অবিশ্বাস্য। কারণ ওখানে পৌঁছনোর আগে প্রত্যেকের ফোনের চার্জ একদম সম্পূর্ণ ছিল।
এই ঘটনাতে ওদের তেমন একটা খটকা লাগল পরবর্তীতে ওরা পৌঁছে যায় রাজবাড়ীর একেবারে ছাদের দিকে, যেখানে যাওয়া সাধারণত প্রত্যেকেই নিষেধ। ছাদে উঠতে ওদের যতটা না কষ্ট হয়, নামার সময় ওদের কষ্ট আরও দ্বিগুণ হয়ে যায়। কারণ সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় হঠাৎ করেই আমার বোন সেখান থেকে পড়ে যায় এবং তার মনে হয় তাকে কেউ ইচ্ছাকৃত ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছে। রাজবাড়িতে ঢোকার পর থেকে ওদের প্রত্যেকেরই মনে হতে থাকে কেউ যেন ওদেরকে একটা পেছন থেকে অনুসরণ করছে। কিন্তু কাউকে ওরা দেখতে পায় নি।
এরপর পুরো রাজবাড়িতে ঘুরতে ঘুরতে যখন প্রায় সন্ধ্যা নেমে আসে, তখন দেখা দেয় আরও এক নতুন চমক। প্রসঙ্গত বলে রাখি, এই রাজবাড়িতে ওরা চারজন বন্ধু গিয়েছিল। বোন পড়ে যাওয়ার ঘটনার পর এক বন্ধু বিপদ বুঝতে পেরে যখন তারা বাইক নিয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে ঠিক সেইসময় রাজবাড়ির পরিবেশ হঠাৎ করে আশেপাশের পরিবেশের থেকে একটু বেশি শীতল হয়ে ওঠে। ওদের সাথে শীতের সমস্ত বস্ত্র থাকা সত্ত্বেও ওরা এই রাজবাড়ি থেকে রীতিমতন কাঁপতে কাঁপতে বের হয়ে আসে। কিন্তু বাইরে এসো না বুঝতে পারে সেখানকার তাপমাত্রা অতটাও কম নয়। এর মধ্যে নতুন আরেকটি নতুন বিপদ দেখা দেয়। ওদের হেলমেটগুলো ভেঙে যায়।
রাইপুর রাজবাড়ি থেকে একটু দূরেই সুরুল রাজবাড়ি অবস্থিত। বাইকে করে ওরা সুরুল রাজবাড়ি পৌঁছানো পর্যন্ত রীতিমতন বুঝতে পারে ওদের পিছ পিছ কোন কিছু একটা ধাওয়া করছে। আর এটা সুরুল রাজবাড়ি পৌঁছানোর আগে অবধি ওরা অনুভব করে। সুরুল রাজবাড়ি পৌঁছে ওদের এই আতঙ্কগ্রস্থ মুখগুলি দেখে রাজবাড়ির লোকেরা ওদের অনেক সাহায্য করে এবং ওখানে বসে ওরা জানতে পারে এই রাইপুর রাজবাড়িতে সত্যিই এমন কিছু অদ্ভুত বিষয় রয়েছে যা আজ অনেকের কাছে অজানা। আর ওখান থেকে শনিবার এই রাজবাড়ি ভ্রমণে আসার জন্য নিষেধ করা হয়।
শুধু তাই নয় রায়পুর রাজবাড়িতে এমন অনেক জিনিসের দেখা মিলবে যেগুলি সাধারণত কোন ভালো কাজে ব্যবহার করা হয় না। কোনোক্রমে ভয় কাটিয়ে ওখান থেকে বেরিয়ে রিসোর্টে ফিরে আমার বোন দেখতে পায় তার গায়ের লেদারের জ্যাকেটিতে নখের আচর। এটি দেখে তারার বলতে কিছু বাকি থাকে না। নিজেকে এবং বাকীদের কোনক্রমে সামলে সেই রাতটি রিসোর্টে কাটিয়ে তারা পরেরদিনই ভোরের ট্রেনে বাড়ি ফিরে আসে। যদিও এই ঘটনাটি শুনে অনেকেই বলেছেন এই জায়গাটিতে এমন কোন বিষয় নেই। এটি শুধুমাত্র লোকজনকে ভয় পাওয়ানোর জন্য বলা হয়। তবুও আমার বোন নিজে যা অনুভব করেছে ঠিক সেইটুকুই আজ আমি আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম। বিশ্বাস-অবিশ্বাস পুরোটাই আপনাদের নিজস্ব ব্যাপার।
তবে আপনাদের এইরকম কোনও অভিজ্ঞতা বা জায়গা সম্বন্ধে জানা থাকলে অবশ্যই আমাদেরকে কমেন্ট বক্সে জানান।
( কোনও অতিলৌকিক বা অলৌকিক বিষয়কে প্রচার করা কখনওই প্রধান উদ্দেশ্য নয়, কাজেই কোনও জায়গায় যাওয়ার আগে একবার সব দিক বিচার-বিবেচনা করে যাবেন)