আদি অকৃত্রিম সময় থেকেই বাঙালিদের কাছে রেলভ্রমণ আলাদা মাত্রা বহন করে। সাধ আর সাধ্যের মেলবন্ধন ঘটে সপরিবারে দূর পাল্লার কু ঝিক ঝিকের সাথে তাল মিলিয়েই। তবে চেয়ার কার, স্লিপার কার পেরিয়ে ইচ্ছে করলেই বাতানুকূল এসি কোচে চড়ে বসাটা কিছুটা হলেও ছিল খরচ সাপেক্ষ। সেই খরচের হাত থেকে মুক্তি পেতেই ওয়েস্টার্ন রেলওয়েজ এর হাত ধরে আসছে নতুন এসি ইকোনমি ক্লাস। প্রাথমিকভাবে ভারতীয় রেলের পশ্চিম ডিভিশনের দূরন্ত ট্রেনগুলিতে এই কোচগুলির সংযোজন করা হবে। থাকবে মোট ৮৩টি বার্থ, যা আজ অবধি একটি এসি কোচের হিসাবে সর্বোচ্চ।
বিগত কয়েক বছর ধরেই সাধারণ মানুষ ভারতীয় রেলের কাছে বাতানুকূল ভ্রমণকে আরও সহজলভ্য করে তোলবার জন্যে দাবি জানিয়েছে। সেই কথা মাথায় রেখেই ২৭টি এসি ইকোনোমিক কোচ তৈরি করে পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হবে শীঘ্রই।
এই ২৭টি কোচ ভারতীয় রেলের প্রত্যেকটি ডিভিশনের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হলেও, প্রথম চড়ার সুযোগ পাওয়া যাবে ওয়েস্টার্ন রেলের দূরন্ত ট্রেনেই। যাত্রী সাধারণের উৎসাহ এবং ফিডব্যাকের উপর ভিত্তি করে ভবিষ্যতে এসি ইকোনোমিক কোচগুলিকে আরও জনপ্রিয় করে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে।
কেমন হবে নতুন এসি ইকোনোমিক ক্লাসের ভাড়া
যদিও এখনও পর্যন্ত এই বিশেষ কোচগুলির ক্ষেত্রে যাত্রী সাধারণের কাছে কত করে ভাড়া নেওয়া হবে তা নির্ধারিত করা হয়নি। মনে করা হচ্ছে আনুমানিক ভাড়া বর্তমান এসি থ্রি টিয়ার কোচের ভাড়ার থেকে কিছুটা কম হবে। এর ফলে যাঁরা সাধারণ স্লিপার ক্লাসে ভ্রমণ করেন, তাঁরা এয়ার কন্ডিশন ভ্রমণের স্বাদ নিতে পারবেন। গত মে মাস থেকে সরকার পক্ষ হতে এসি ইকোনোমিক ক্লাসের ভাড়া নির্ধারণ নিয়ে কথা বার্তা শুরু হলেও, রেলমন্ত্রক এখনও অন্তিম ভাড়া ধার্য করেনি। মনে করা হচ্ছে, শীঘ্রই এ সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করা হবে।
এসি ইকোনোমিক ক্লাসের ইতিহাস
তবে কম খরচের এসি কোচের প্রচলনের আগেও করা হয়েছিল। প্রায় এক দশক আগে গরিব রথ ট্রেনগুলিতে এসি ইকোনোমিক রেক চালু করা হয়েছিল। কিন্তু তাতে কোচের ডিজাইন বদল না করেই, পুরোনো কোচের ভিতরেই বেশি করে বার্থ যোগ করা হয়েছিল। সাইড অপার ও সাইড লোয়ার বার্থের মাঝে একটি সাইড মিডল বার্থ যোগ করা হয়। কিন্তু এর ফলে চলাচল করার ও বসার জায়গা কমে যাওয়ায় এতে যাত্রী অসন্তোষ বৃদ্ধি পায় এবং অচিরেই গরিব রথের এসি ইকোনোমিক কোচ চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়।
নতুন এসি ইকোনোমিক কোচের ডিজাইন
নতুন কোচগুলিতে এসি ভেন্টগুলি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে প্রতিটি বার্থে পর্যাপ্ত পরিমাণে এসির হওয়া পৌঁছায়। এছাড়া প্রতিটি বার্থের আকার, আয়তন ও অবয়বে এমন কিছু ছোট ছোট পরিবর্তন করা হয়েছে যার ফলে যাত্রীদের অভিজ্ঞতা হবে আর সুরক্ষিত এবং আরামদায়ক। প্রতিটি বার্থের সাথে থাকছে বটল হোল্ডার, মোবাইল চার্জিং পয়েন্ট আর রিডিং লাইট। থাকবে মোবাইল এর ম্যাগাজিন বা কাগজপত্র রাখার জায়গাও। সবমিলিয়ে জমজমাট হয়ে উঠতে চলেছে কম পয়সার এই এসি রেল ভ্রমণ।
নতুন এসি ইকোনোমিক কোচ গুলিকে থ্রি-ই বা 3E নামকরণ করা হবে বলে জানা গিয়েছে।