ভাদ্র মাসের কৃষ্ণা অষ্টমী তিথিতে জন্মাষ্টমীর পরদিন পালন করা হয় নন্দ উৎসব। পুরাণ অনুযায়ী এইদিন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কংস বধের জন্য মাতা দেবকীর কোলে বিষ্ণুর ষষ্ঠ অবতার রূপে মর্তলোকে জন্মগ্রহণ করেন। সেই আনন্দে তাঁর পালিত পিতা গোকুলরাজ নন্দ এই উৎসবটি পালনের সিদ্ধান্ত নেন। এই দিনে সমস্ত গোকুলবাসী আনন্দে মেতে ওঠেন।
কথিত আছে এই দিন গভীর রাত্রে শ্রীকৃষ্ণ জন্মের পর তাঁর পিতা বাসুদেব গোকুলরাজ নন্দের কাছে শ্রীকৃষ্ণকে রেখে আসেন এবং তার পরিবর্তে মা যশোদার কন্যা সন্তানকে মাতা দেবকীর কোলে তুলে দেন। এই ঘটনার ঠিক পরদিন সকালবেলা নন্দরাজ গোকুল বাসীদের তার পুত্র সন্তান হওয়ার খবর দিলেই এই নন্দ উৎসব পালনের জন্য সবার আকুল হয়ে ওঠেন।
নন্দ উৎসব পালনের কিছু নিয়ম-আচার-
• এই অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রকমের লোভনীয় পদ তৈরি করা হয়। যেমন- তালের বড়া, ফুলুরি, লুচি, বিভিন্ন রকমের মিষ্টি ইত্যাদি।
• শুধু তাই নয়, দেশের বিভিন্ন জায়গায় নন্দ উৎসবের দিন পিরামিড তৈরি করে দইয়ের হাঁড়ি ভাঙ্গার প্রচলন রয়েছে।
• শ্রীকৃষ্ণের প্রিয় খাদ্যদ্রব্যাদি যেমন ননী, মাখন, নাড়ু, দই, দুধ ইত্যাদি পুজোর সময় ভগবানকে অর্পণ করা হয়।
উৎসব পালনের স্থান-
সাধারণত দেশের বিভিন্ন জায়গাতে নন্দ উৎসব পালন করা হয়। মথুরা, বৃন্দাবন, মণিপুরে এই অনুষ্ঠান পালনের এক বিশেষ প্রচলন রয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার বেশ কিছু বনেদি বাড়ি, যেমন- শোভাবাজার রাজবাড়িতে বেশ জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে গোবিন্দের পুজো করা হয়।
দর্জিপাড়ার রাজকৃষ্ণ মিত্রের বাড়িতেও এই পুজোর প্রচলন রয়েছে। মধ্য কলকাতার গোবিন্দ সেন লেনে চুনিমুনি দাসের বাড়িতে জন্মাষ্টমীর সঙ্গে নন্দ উৎসব পালিত হয়। জন্মাষ্টমীর পরের দিন এই পরিবারের বয়সজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি একটি হাঁড়িতে দই ও হলুদ নিয়ে উঠোনে সাতবার প্রদক্ষিণ করেন এবং সেই হাড়ি ফাটানো হয়। তারপর পায়েস ভোগ বিতরণ করা হয়।
কলকাতার এলবার্ট রোডের ইসকনের গোবিন্দ মন্দিরে জন্মাষ্টমীর সঙ্গে নন্দ উৎসব পালিত হয়। শুধু বাঙালি সম্প্রদায় নয়, অবাঙালি সম্প্রদায়ের ব্যক্তিবর্গরাও এই উৎসব সাড়ম্বরে পালন করেন। কলকাতার বড়বাজার, হরিরাম গোয়েঙ্কা স্ট্রিট, সত্যনারায়ণ পার্ক, যদুবাবুর বাজার প্রভৃতির জায়গায় নন্দ উৎসব পালিত হয়। খড়দহের শ্যামসুন্দর মন্দির, নৈহাটির কাঁঠালপাড়া শ্রী শ্রী বিজয়রাধাবল্লবজিউর মন্দির, কাঁচরাপাড়া ও কল্যাণী সংযোগস্থলে কৃষ্ণরাইজিউর মন্দির, নদিয়ার চাকদহ, শান্তিপুর, নবদ্বীপ ও মায়াপুরে নন্দ উৎসব পালন করতে দেখা যায়।