মেঘেদের রাজ্য মেঘালয় কিন্তু সব সময় নিজের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত। খাসি পর্বত, জয়ন্তিয়া গোষ্ঠী, সবুজ অরণ্যভূমি সংমিশ্রণে গড়ে ওঠা এই মেঘালয় বিস্ময়কর এক আশ্চর্য ভূমি, সেখানে প্রতিটি অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমী ভ্রমণকারীরা খুব সহজেই খুঁজে পান তাদের রোমাঞ্চের স্বাদ। ঠিক এইরকমই একটা উৎসাহে মেঘালয় কিছু অজানা জায়গারা সন্ধানে আমরাও গিয়েছিলাম।
অত্যন্ত সৌন্দর্যবর্ধনকারী শহর শিলং হল মেঘালয়ের রাজধানী। এই শহরের সৌন্দর্য আপনাকে অবাক করে তুলবে আর তার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা বিশেষ বিশেষ কিছু গল্প শুনলে আপনার গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠবে।
নোহখালিকাই জলপ্রপাত
ভারতের দীর্ঘতম জলপ্রপাত নোহখালিকাই মেঘালয় চেরাপুঞ্জিতে অবস্থিত, যার উচ্চতা ১১১৫ ফুট। পাহাড়ের গা বেয়ে প্রবাহমান এই জলপ্রপাতের যেখানে এসে সমতলে পড়েছে সেই স্থানে একটি সবুজ রঙের জলাশয় সৃষ্টি হয়েছে। আশেপাশে সবুজ বনভূমি এবং মেঘলা পরিবেশের জন্য এই জলপ্রপাতটি সব সময় বৃষ্টির জলধারায় পুষ্ট। এই জলপ্রপাতটির সৌন্দর্য যে কোনও রমণীকে হার মানায়। তাই এখানে ঘুরতে আসা প্রতিটি পর্যটক এই জলপ্রপাতের সৌন্দর্যের প্রশংসা না করে পারেন না। তবে এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে একটি ভয়ঙ্কর কাহিনি। মূলত, নোহখালিকাই শব্দটি খাসি শব্দ যার অর্থ হল “জাম্প অফ কা লিকাই”। খাসি ভাষায় ‘কা’ শব্দের অর্থ হল মহিলা। আর ‘লিকাই’ হল আপনি যে ভয়ঙ্কর গল্পটি জানতে চলেছেন, তার মূল নায়িকা।
নোহখালিকাই জলপ্রপাতের অজানা কাহিনি
এই জলপ্রপাতের কাছে অবস্থিত রংজ্যেরতে গ্রামে লিকাই নামে একজন সুন্দরী যুবতী মা বসবাস করতেন।তিনি খুব অল্প বয়সে বিধবা হন এবং নিজের জীবন অতিবাহিত করার জন্য স্বামীর কাজে যোগদান করেন। সেই জন্য ঘরে থাকা তাঁর নিজের সন্তানের প্রতি তিনি একটু কম নজর দিতেন। সেই সময় গ্রামের অন্যান্য মহিলারা তাকে বিবাহের জন্য প্রস্তাব দেন, কারণ সকলেই বুঝেছিলেন বাচ্চাটিকে একজন বাবার দরকার। দুর্ভাগ্যবশত এই মহিলার যার সঙ্গে বিবাহ হয় সেই লোকটি অত্যন্ত ভয়ঙ্কর একজন ব্যক্তি ছিলেন। একদিন কাজ থেকে ফিরে মহিলাটি ঘরে ঢুকতেই দেখতে পান তার স্বামী তার জন্য অত্যন্ত ভয়ানক একটি খাবার রান্না করেছেন। কিন্তু তিনি কিছু না বলে খাবারটি খেতে শুরু করেন। বেশ কিছুক্ষণ পরে তার খেয়াল হয় তার সন্তান ঘরে নেই। তখন তিনি ভাবেন বাচ্চাটি হয়ত পাড়ায় খেলতে গিয়েছে। এরপর বহু সময় কেটে যায় কিন্তু বাচ্চাটিকে আর খুঁজে পাওয়া যায় না।
আশা করছি আপনারা বুঝতে পারছেন গল্পটির কতটা ট্রাজিক পরিণতি হতে চলেছে। মহিলার স্বামী বাচ্চাটির প্রতি এত ঈর্ষাপরায়ন ছিলেন যে বাচ্চাটিকে মেরে, কেটে রান্না করে সেই খাবার তার মাকে পরিবেশন করে। খাবার খেয়ে প্রতিদিনের মত লিকাই যখন জঙ্গলে ঝুড়ি নিয়ে সুপারি পাতা এবং বাদাম সংগ্রহ করতে যান, তখন সেখানে তিনি ছোট্ট একটি হাতের কাটা আঙ্গুল দেখতে পান। সঙ্গে সঙ্গে তিনি বুঝে যান এই আঙ্গুলটি তার সন্তানের। সম্পূর্ণ ঘটনা বুঝতে পেরে ভয় ও আশঙ্কায় লিকাই দৌড়ে এসে ঝরনার কিনারায় পৌঁছে আত্মহত্যা করেন। আর এই ঘটনার পর থেকে এই জলপ্রপাতটির নাম হয় নোহখালিকাই।
এই ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক তবুও জলপ্রপাতের সৌন্দর্য দেখতে বহুদূর থেকে মানুষজন ছুটে আসেন। আর উত্তর-পূর্বের এমন অনেক রহস্যময় জায়গা রয়েছে যেগুলো আপনাকে ক্রমাগত মন্ত্রমুগ্ধ করে তুলবে।
সুইট জলপ্রপাত
হ্যাপি ভ্যালি থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত শিলংয়ের এই সুইট জলপ্রপাতটি উচ্চতা প্রায় ৯৬ মিটার। এই জলপ্রপাতটি একদিকে যেমন ‘সর্বাধিক সুন্দর’ অন্যদিকে, তেমনই ‘সবথেকে বিপজ্জনক’ জলপ্রপাত হিসেবে বিখ্যাত।
বর্তমানে এই জলপ্রপাতটির প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং নির্মাণকার্য দুর্বল হওয়ায় পর্যটকদের এই জলপ্রপাতের কাছে যাওয়া নিষিদ্ধ। জলপ্রপাতের আশেপাশে খেঁজুর গাছ দ্বারা পরিপূর্ণ। এছাড়া বিভিন্ন প্রজাতির গাছ যেমন- ইউটিপোরিয়াম, ল্যান্টানা, রুবাস, ফার্ন, ওসমান্ডাস্ট্রাম, দারুচিনি এবং ফেজোপটারিস দেখতে পাওয়া যায়।
স্থানীয় মানুষেরাই এই জলপ্রপাতটিকে ভয়ঙ্কর বিপজ্জনক জলপ্রপাত বলে চিহ্নিত করেছেন। শোনা যায়, এই জলপ্রপাতটি দেখতে যদি কেউ বিজোড় সংখ্যায় যায় তাহলে তারা নাকি জোড় সংখ্যায় ফিরে আসে। তবে এই জলপ্রপাতে বহু আত্মহত্যা এবংঅসংখ্য মৃত্যুর গল্প রয়েছে।
দাওকি-
দাওকির জলের রং অনেকটা পান্না পাথরের মতো সবুজ, যা দেখলে মনে হয় হাতে আঁকা কোন ছবি। উমাঙ্গট নদীর স্বচ্ছ কাঁচের মতো জলের উপর দিয়ে যাত্রা করার মতন আনন্দ আর কিছু নেই যাত্রাপথে এর আশেপাশের প্রাকৃতিক পরিবেশের দৃশ্য আপনাকে মুগ্ধ করবে। সেই সাথে এক ঝলক বাংলাদেশকেও দেখে নিতে পারবেন।
দাওকির ঘটনা-
শোনা যায়, একবার দুই বোন সুরমাহ উপত্যকা (বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ) জুড়ে গোটা পৃথিবী ঘোরার সিদ্ধান্ত নেয়। তারা প্রতিযোগিতা শুরু করে এদের মধ্যে একজন, উমাঙ্গট এই দীর্ঘ পথটি সংক্ষেপে এবং দ্রুততায় অতিক্রান্ত করার জন্য নরম ভূ-খণ্ডের মধ্যে দিয়ে অতিক্রান্ত সহজ পথ থেকে বেছে নেয়। অন্যদিকে, উমিও নিজেকে অন্যজনের কাছে শক্তিশালী প্রমাণ করার জন্য পাহাড় অতিক্রম করার সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর উমাঙ্গট গন্তব্যে পৌঁছলেও, তার দিদি উমিও-র কোনও সন্ধান পাওয়া যায় না। এইভাবে বহুদিন কেটে গেল তবুও উমিও-রা খোঁজ মেলে না।
কিন্তু যেটা ঘটেছিল, যখন উমিও উপত্যকায় এসে পৌঁছায়, তখন দেখে তার ছোট বোন উমাঙ্গট আগেই সেখানে পৌঁছে গিয়েছে। এই পরাজয় সে মেনে নিতে পারে না। তাই সে ঠিক করে সে আর কোনদিনও বাড়ি ফিরবে না। অন্যদিকে দিদির এই কথা শুনে বোন উমাঙ্গটও সেই উপত্যকায় থেকে যাওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নেয়।বাংলাদেশের নদীগুলির পিছনে এই গল্পটি প্রচলিত রয়েছে। ছোট বোন যে পথে এগিয়ে ছিল সেটি মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
বলপাকরাম জাতীয় উদ্যান
বলপাকরাম জাতীয় উদ্যানটি হিমালয়ের গারো পাহাড়ের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থান করছে। এটি ভারতবর্ষের অন্যতম একটি জাতীয় উদ্যান হিসেবে স্বীকৃত এবং বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সীমান্তের খুব কাছে অবস্থিত।
বলপাকরাম জাতীয় উদ্যানের পিছনে লুকিয়ে থাকা কিছু কাহিনি
এখানকার স্থানীয় বাসিন্দারা বিশ্বাস করেন যে এই জাতীয় উদ্যানটি সঙ্গে ভুতুড়ে কিছু অলৌকিক কাহিনী জড়িয়ে রয়েছে। কিন্তু এই সব গল্প কী দুঃসাহসিক অভিযাত্রীদের ভ্রমণ আকাঙ্ক্ষা থামিয়ে দিতে পারে?? হয়ত পারে না। তাই এই সমস্ত অলৌকিক কাহিনীকে উপেক্ষা দিয়ে ভ্রমণপিপাসু মানুষেরা এগিয়ে চলে গভীর অরণ্য এবং অন্ধকারে মধ্যে ডুবে থাকা গুহাগুলির রহস্য উঠঘাটনে।
এই জাতীয় উদ্যানটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩ হাজার ফুট উচ্চতায় অবস্থান করে এবং এটি প্রায় ২০০ বর্গ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে বিস্তৃত। দেশের মধ্যে এটি অন্যতম একটি বায়ো হটস্পট বলে স্বীকার করতে কোন দ্বিধাবোধ করা হয় না। এই উদ্যানে কিছু বিরল এবং বিপন্ন প্রজাতির জীবজন্তু দেখতে পাওয়া যায়। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল এশিয়ান গোল্ড বিড়াল, বেঙ্গল বাঘ, কলসি উদ্ভিদ, ভারতীয় হাতি এবং আরও অনেক কিছু। গারো অধিবাসীদের কাছে এই জায়গাটি দ্যা ল্যান্ড অফ স্পিরিট অর্থাৎ আত্মার দেশ হিসেবে পরিচিত। তাই এই স্থানটিকে তারা পবিত্র বলে মনে করেন। তবে এই বনাঞ্চলের রহস্য এখনও বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হয় নি। এর মধ্যে সচিমা ওয়ালিছি গাছগুলি বেশ রহস্যজনক। বাসিন্দাদের মত এই গাছগুলির কাণ্ডে এক অদ্ভুত গর্ত দেখতে পাওয়া যায়। ফলে তারা এই স্থান দিয়ে যাত্রা করার সময় জায়গাটিকে মৃতদের বাসস্থান বলে থাকে।
তবে পর্যটকদের এই বনে ট্রেকিং-এর সময় সাবধানতা অবলম্বন করতে বলা হয়ে থাকে। কারণবশত বলা হয়, অন্য জগতে পাড়ি দেওয়ার সময় মৃত আত্মারা যেন জাগ্রত না হয়।
নিজের বেড়ানোর অভিজ্ঞতা ট্রিপোটোর সঙ্গে ভাগ করে নিন আর সারা বিশ্ব জুড়ে অসংখ্য পর্যটকদের অনুপ্রাণিত করুন।
বিনামূল্যে বেড়াতে যেতে চান? ক্রেডিট জমা করুন আর ট্রিপোটোর হোটেল স্টে আর ভেকেশন প্যাকেজে সেগুলো ব্যবহার করুন।
(এটি একটি অনুবাদকৃত আর্টিকেল। আসল আর্টিকেল পড়তে এখানে ক্লিক করুন!)