আমরা যারা ঘুরতে ভালোবাসি, অবসর সময়ের মধ্যে একটু নিরিবিলি খুঁজে পেতে চাই, তাদের বেড়াতে যাওয়ার পিছনে এক অন্যতম উদ্দেশ্য হল দৈনন্দিন হৈ-হট্টগোলকে পিছনে ফেলে প্রকৃতির কোলে এমন কোনও জায়গায় হারিয়ে যাওয়া, যেখানে না আছে রোজকার রুটিনের ঘেরাটোপ, না আছে আর পাঁচজন ট্যুরিস্টদের দৌরাত্ম্য। এরকম নিরিবিলি, নির্জন জায়গায় পৌঁছতে চাইলে চলে আসতে হবে পশ্চিম সিকিমে, পেলিং থেকে ৩২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ছায়াতাল নামের এই ডেস্টিনেশনে। অফবিট জায়গার মধ্যে আপনি যা যা চাইতে পারেন, চারিদিকে ঘন রডোডেনড্রোন গাছের জঙ্গল, নিস্তব্ধ পরিবেশে ডেকে যাওয়া নাম না জানা পাহাড়ি পাখির ডাক বা যেদিকে চোখ যায় সেখানে বরফে ঘেরা পাহাড়চূড়া, ছায়াতালে আছে সবকিছু আপনার অপেক্ষায়।
ছায়াতলে কী কী করবেন
উপভোগ করুন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য : গড়পড়তা পর্যটকদের ভিড় থেকে দূরে, পশ্চিম সিকিমের ম্যাপে, ছায়াতাল কিন্তু বেশ আনকোরা একটি জায়গা। এখানকার প্রধান আকর্ষণ হল নিস্তব্ধ নীরব পরিবেশের মাঝে প্রকৃতির সান্নিধ্যে অনেকটা সময় কাটিয়ে নিতে পারা।
বার্ড ও বন্যপ্রাণী ওয়াচিং : সাথে রাখুন দূরবীন, কারণ এখানেই সুযোগ পাবেন হিমালয়ের নানান পাহাড়ি পাখি এবং জীবজন্তুদের দেখার সুযোগ। হিমালয়ান রেড পান্ডাদের নিজস্ব পরিবেশে দেখতে চাইলে ছায়াতাল অন্যতম সেরা জায়গা।
ছায়া লেক ভ্রমণ : ছায়াতালের নামকরণ হয়েছে ছায়া লেকের নাম অনুসারে। গভীর ঘন সবুজ জলের এই লেকের পাড়ে বসে উপভোগ করতে পারেন প্রিয়জনের সাথে পিকনিক বা করতে পারেন বোটিং। ঘন সবুজ পরিবেশের মাঝে বিস্তৃত এই লেকের সান্নিধ্য মনে এনে দেয় গভীর প্রশান্তি।
ট্রেকিং : ট্রেকিং করার ইচ্ছে থাকলে বেরিয়ে পড়তে পারেন পাশেই হি-বার্মিওক থেকে, যেখান থেকে পাবেন কাঞ্চনজঙ্ঘা রেঞ্জের কাবরু পিকের অসাধারণ ভিউ। ছায়াতাল থেকে ওখরে এসে শুরু করতে পারেন বার্সে রোডোডেনড্রোন ট্রেক।
ছায়াতাল কীভাবে পৌঁছবেন
ছায়াতাল পৌঁছাতে চাইলে চলে আসতে হবে সিকিমে। বাগডোগরা এয়ারপোর্ট বা নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে পৌঁছে সেখান থেকে ছায়াতালের দিকে গাড়ি ভাড়া করতে পারেন। ১৪০ কিলোমিটার দূরত্ব মোটামুটি ঘণ্টা পাঁচেকের মধ্যেই পৌঁছতে পারবেন।
ছায়াতালে কখন যাবেন
ছায়াতালে যাওয়ার জন্যে সেরা সময় পাবেন বছরে দুবার, নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসে শীতের মরসুমে পাবেন একরকম সৌন্দর্য, শীতল সিকিমের নৈস্বর্গিক আনন্দ। আবার এপ্রিল থেকে মে মাসে, বর্ষার পূর্বে, পাবেন রৌদ্রোজ্জ্বল ঝলমলে আবহাওয়া। এছাড়াও, রোডোডেনড্রোন গাছের ফুল দেখতে চাইলে, এই এপ্রিল মে মাস-ই শ্রেয়। মে মাসের মাঝামাঝি পাবেন স্থানীয় কালেজ ভ্যালি হেরিটেজ ফেস্টিভ্যাল দেখার সুযোগ।
ছায়াতালে কোথায় থাকবেন
পশ্চিম সিকিমের এই অফবিট ডেস্টিনেশন, ছায়াতলে থাকার জন্যে কিন্তু পাবেন না কোনও হাই ফাই হোটেল বা বিলাসবহুল ট্যুরিস্ট লজ। কিন্তু এই গ্রামের মাঝেই পাবেন, লেকের ঠিক পাশেই একটি গেস্টহাউস। গেস্টহাউসটি ছাড়াও বিগত কয়েক বছরে এখানে গড়ে উঠেছে কয়েকটি হোমস্টে। স্থানীয় সিকিমিজ পরিবারগুলির সাথে একসাথে থাকতে পারেন অতিথি হয়ে, তিন বেলা খাওয়া দাওয়া আর থাকা মিলিয়ে জনপ্রতি খরচা প্রতিদিন ৮০০ থেকে ১০০০ টাকার মধ্যে। স্থানীয় মানুষজনদের থেকেই পেয়ে যাবেন লোকাল গাইড অথবা কোথাও যাওয়ার জন্যে গাড়ির সন্ধান।