তেঁতুলগোলা জল, রকমারি মশলা, ছোলা সেদ্ধ আর গন্ধরাজ লেবুর গন্ধে ম ম করছে আশপাশ... আর একদিকে আলুসেদ্ধ, মরিচ, লঙ্কাগুঁড়োর ঝাঁজ আর সবকিছুকে পাশ কাটিয়ে নিপুণ হাতে একজন ফুচকাওয়ালা আলুসেদ্ধ মাখছেন এবং ফুলকো ফুলকো ফুচকার ভিতরে আলুর পুর ভরে পরিবেশন করছেন শাল পাতা ধরে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করা ফুচকাপ্রেমীদের।
হ্যাঁ ! ফুচকার প্রতি রয়েছে আপামর বাঙালি তথা কলকাতাবাসীর এক আলাদা ধরনের নস্টালজিয়া। বাঙালি ফুচকা খেতে ভালবাসে, ফুচকা খাওয়াতেও ভালবাসে... আর সব থেকে বড় কথা ফুচকার স্বাদ বিষয়ে নানা রকমের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতেও ভালবাসে। কলকাতাতেই পাওয়া যাবে রকমারি ফুচকার সম্ভার যেমন- টকজল ফুচকা, মিষ্টিজল ফুচকা, দই ফুচকা, আলুর দম ফুচকা। এ হেন ফুচকার রয়েছে বেশ কিছু নাম ভেদ যেমন- উত্তরভারতে ফুচকা জনপ্রিয় গোলগাপ্পা নামে, অন্যদিকে মহারাষ্ট্রে ফুচকা জনপ্রিয়তা পায় পানিপুরি নামে। নামের মতোই ফুচকা বানানোর পদ্ধতিতেও রয়েছে নানা ধরনের প্রকারভেদ, গোলগাপ্পা-র স্বাদের সঙ্গে আপনি কখনওই ফুচকার স্বাদকে মেলাতে পারবেন না, এখানেই কলকাতার স্বাদের বিশিষ্টতা।
কলকাতার কয়েকটি জনপ্রিয় ফুচকার দোকান
প্রভেশ পানিপুরি, আলিপুর
আলিপুরে উডল্যান্ড রোড বরাবর যেতে গিয়ে পেট্রোল পাম্পের ডানদিকের রাস্তা বরাবর চলতে গিয়ে আপনি পাবেন এই ফুচকার দোকানটি, অত্যন্ত জনপ্রিয় এখানকার ফুচকা সে কথা বলাই বাহুল্য।
বিশিষ্টতা- টকজল এবং মিষ্টিজলের ফুচকার পাশাপাশি আপনি পাবেন ১৭ রকমের ফুচকা, তার মধ্যে রয়েছে বেশ কিছু ফিউশন ফুচকা যেমন- চকোলেট ফুচকা, ঘুঘনি, দই এবং সেজওয়ান ফুচকা।
কৃষ্ণকান্ত শর্মার ফুচকা স্টল, বর্ধন মার্কেট
বর্ধন মার্কেট চত্বরে কৃষ্ণকান্ত শর্মার ফুচকার স্বাদ কিন্তু বেশ অন্যরকম। আপনার খেলে মন ভাল হতে বাধ্য।
বিশিষ্টতা- এইখানকার ফুচকার অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্যই হল, ফুচকা প্রস্তুতির ক্ষেত্রে যে ধরনের মশলা ব্যবহার করা হয়ে থাকে, তা পুরোপুরিই বাড়িতে তৈরি যেমন- জিরে, ধনেগুড়ো, মেথি এবং অন্যান্য মশলাগুলোও বাড়িতে তৈরি করা হয়ে থাকে, মূলত মশলার স্বাদ থেকেই যার আস্বাদ পাওয়া যায়।
ম্যাক্স মুলার ভবন সংলগ্ন, পার্কস্ট্রিট
ম্যাক্স মুলার ভবন সংলগ্ন ফুচকা স্টলটিও বিশেষ ভাবে পপুলার বলা যেতে পারে।
বিশিষ্টতা- এখানকার সাধারণ ফুচকার পাশাপাশি আপনি ট্রাই করে দেখতে পারেন, মিন্ট এবং পুদিনার জল দিয়ে পরিবেশিত ঝাল ঝাল ফুচকা।
বড়বাজার থানা সংলগ্ন
বড়বাজার থানার সংলগ্ন ফুচকা স্টলটি বেশ পপুলার। ফুচকাপ্রেমীদের ভিড় সবসময়েই চোখে পড়বে আপনার।
বিশিষ্টতা- এইখানে যে ফুচকা পরিবেশিত হয়, তার তেঁতুল জলে হিং মেশানো হয়, ফলে আলাদা রকমের টেস্ট পাওয়া যায় তেঁতুল জলে।
দিলীপ দা-র ফুচকা, বিবেকানন্দ পার্ক
ফুচকা প্রেমী বাঙালিদের কাছে বিবেকানন্দ পার্কের সংলগ্ন দিলীপ দা-র ফুচকা সম্পর্কে নতুন করে কিছু বলার নেই। কলেজ ফেরত টিনএজার ছাড়াও নানা বয়সের ক্রেতাদের ভিড়ে এই দোকানে সারাবছরেই ভিড় চোখে পড়ে।
বিশিষ্টতা- এখানকার দই ফুচকা ভীষণভাবেই সুস্বাদু।
রাম গুপ্তার ফুচকা স্টল, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল
ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল ঘুরতে গেছে অথচ রাম গুপ্তার ফুচকা কেউ খায় নি, এমনটা খুব কমই চোখে পড়বে। নানাস্বাদের এই ফুচকা আপনার আনন্দকে দ্বিগুণ করতে বাধ্য।
রাজেন্দ্র ফুচকা, ঢাকুরিয়া
দক্ষিণ কলকাতাবাসীদের মধ্যে অত্যন্ত পপুলার একটি ফুচকার দোকান হল ঢাকুরিয়ার দক্ষিণাপণ সংলগ্ন রাজেন্দ্র ফুচকার স্টলটি।
বিশিষ্টতা- আপনি এখানকার টক-মিষ্টি জল ভরা ফুচকার পাশাপাশি ট্রাই করবেন দই ফুচকা এবং আলুর দম ফুচকা।
(আপনারাও আমাদের জানান আর কোনও ভাল ফুচকার দোকান, যার স্বাদ ভোলবার মতো নয়)