বাঙালি; এই তিনটি অক্ষরের মধ্যে রয়েছে অফুরান প্রাণশক্তি । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর , সুভাষচন্দ্র বোস থেকে অমর্ত্য সেন বিশ্বের দরবারে বাঙালী জাতির বেশ কদর রয়েছে । বলাই বাহুল্য,প্রত্যেকটা বাঙালির মধ্যে বিশেষ একটা গুণ রয়েছে, যা সমস্ত ভারতকে কোনও না কোনও ক্ষেত্রে সমৃদ্ধ করেছে ।
বাঙালির নৈপুণ্য , বুদ্ধিদীপ্ত মনোভাব, সৌখিন পরিবেশন, বন্ধুবৎস আতিথেয়তা, স্বজনপ্রীতি এই কয়েকটি শব্দের সঙ্গে বাঙালি জাতি ওতপ্রোতভাবে জড়িত । একান্নবর্তী পরিবারের এক সঙ্গে জমিয়ে ভুঁড়িভোজ কিংবা রাজবাড়ির দূর্গাপুজোর আয়োজন এই সংস্কৃতিগুলি বাঙালি জাতির রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিশে রয়েছে । তবে সব বাঙালির মধ্যে একটা সমন্বয় লক্ষণীয়।
কলকাতা -
বাঙালীদের কলকাতা শহরের প্রতি একটা আত্মিক সংযোগ রয়েছে ।বাঙালিদের প্রাণের শহর কলকাতা নদীমাতৃক, উর্বর, ব্যবসার জন্য উন্নত হওয়ার কারণে তৎকালীন ব্রিটিশ সাম্রাজ্য কলকাতাকে ভারতের রাজধানী হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন ।আজও কলকাতা শহরে ঔপনিবেশিকতার স্মৃতি হিসেবে রয়ে গিয়েছে হাওড়া ব্রিজ, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, রাইটার্স বিল্ডিং ইত্যাদি । যানজট, হরতাল দ্বারা পরিপূর্ণ হলেও বাঙালীর হৃদয়ে এই শহরের একটা চিরস্থায়ী অবস্থান থাকবেই ।
দীপুদা -
বাঙালিরা যতই ভারত এবং বিশ্বভ্রমণ করুন না কেন, দীঘা পুরী, দার্জিলিং নিয়ে একটা অন্যরকমের আবেগ রয়েছে । আমাদের সকলেরই ছেলেবেলায় পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দীঘা, পুরী, দার্জিলিং কিংবা এই সব কটি স্থানেই ভ্রমণের স্মৃতি রয়েছে ।
আজও ছোটবেলার সেই ভ্রমণের দিনগুলির স্মৃতি রোমন্থন করতে ধুলোপড়া, পোকা খাওয়া অ্যালবামের সাহচর্য নিতে বাঙালি মন ভোলে না ।
দূর্গাপুজো -
বাঙালিদের একমাত্র একমাত্র বড়ো পুজো হল দূর্গাপুজো । এই উৎসবটিকে ঘিরে বাঙালিদের কত আবেগ, পরিকল্পনা জড়িয়ে থাকে । শুভ শক্তির উন্মোচনের প্রাক মুহুর্ত থেকে কলকাতা সহ গোটা বাংলার মানুষ মাতোয়ারা হয়ে ওঠেন ।
ষষ্ঠী থেকে দশমী গোটা বাংলা নিজেদের মতো করে এই উৎসবে মুখরিত থাকেন । নতুন পোশাক, বন্ধুদের সঙ্গে রিইউনিয়ন থেকে সারারাত প্যান্ডেল হপিং এবং ঠাকুর দর্শন করার উচ্ছাসে শিহরিত হতে একমাত্র বাঙালিরাই জানেন ।
ফুচকা -
এককথায় বাঙালীরা কিন্ত ফুচকাপ্রেমী । দুপুর গড়িয়ে বিকেল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাস্তার ধারে ফুচকার দোকানে বাঙালীরা ভিড় জমায় । চিরাচরিত জল ফুচকা ছাড়াও দই ফুচকা, চুড়মুড়, জেলি ফুচকা ইত্যাদি বাঙালিদের সান্ধকালীন একটি বিশেষ খাদ্যে পরিণত হয়েছে ।
মিষ্টি -
নিত্য নৈমিত্তিক জীবনে বাঙালীরা মিষ্টি ছাড়া অসহায় । বাঙালিদের প্রতিদিনের পাতে একটা মিষ্টি অবশ্য প্রয়োজনীয় ।প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি, এই বাংলা কিন্তু বিভিন্ন ধরণের মিষ্টির জনক ।মতভেদ থাকলেও মিষ্টির রাজা রসগোল্লার আসল উৎপত্তি কিন্তু এই বাংলাতেই । বাঙালি পরিবারের অতিথি আপ্যায়ন থেকে যে কোনও শুভ অনুষ্ঠানে মিষ্টি ছাড়া কোনও কিছুই যেন সঠিকভাবে সম্পন্ন হয় না ।
মাছ -
বাঙালিরা বরাবরই মাছে - ভাতে থাকতে ভালোবাসে । রোজকার পাতে রুই, কাতলা,চিংড়ি, ট্যাংরা, কিংবা পার্শে ছাড়া বাঙালীদের মন যেন তৃপ্ত হয় না। আর হ্যাঁ, বর্ষার আগমনের সঙ্গে সঙ্গে ডিম ভরা ইলিশের নানান পদের সঙ্গে ভুঁড়িভোজ করে একটা ভাতঘুমের মজা শুধুমাত্র বাঙালিরাই বোঝেন ।
সরস্বতী পুজো -
শৈশব থেকে যৌবনের প্রতিটি পদক্ষেপে সরস্বতী পুজোকে ঘিরে নানান স্মৃতি থাকে বাঙালিদের । শৈশবে শাড়ি পরে বন্ধুদের সাথে স্কুলে গিয়ে পুষ্পাঞ্জলি দেওয়া সরস্বতী পুজোর দিনটা, যৌবনে বাঙালিদের কাছে ভ্যালেন্টাইন্স ডে বা একটা রোমান্টিক দিনে পরিণত হয় । তাই বিদ্যার দেবী সরস্বতীর আরাধনা করার দিনটিতে সব বাঙালিদের মনেই নানান রঙিন স্মৃতি ভিড় করে ।
শাড়ি -
প্রত্যেকটা বাঙালী নারীর শাড়ির প্রতি একটা দুর্বলতা রয়েছে । যেহেতু বাঙালিরা শাড়ি পড়তে ভালোবাসে তাই শাড়ির কালেকশন করতেও ভালোবাসে । তাঁত, ঢাকাই, বেগমপুরী, নীলাম্বরী, বালুচরী, কাঁথাস্টিচ, এমনকি বেনারসি বাঙালি নারীদের সিঁন্দুকে রকমারি শাড়ির লক্ষ করা যায় । বাংলায় শাড়ির জনপ্রিয়তার কারণে এই বাংলাতে বহু শাড়ি শিল্প এবং বুটিকের প্রাচুর্য রয়েছে ।
আদ্যপান্ত বাঙালি মননে এবং জীবনে এই বং কানেকশনগুলি চিরকালীন অক্ষয় থেকে যাবে ।