ভারতের বিখ্যাত তীর্থযাত্রাগুলির মধ্যে অন্যতম প্রসিদ্ধ তীর্থক্ষেত্র হল কেদারনাথ। আমরা সকলেই জানি উত্তরাখণ্ড রাজ্যটি দেবরাজ্য হিসেবে পরিচিত। নানান বর্ণময়তার সাক্ষী এই দেবরাজ্যেকে মন্দির রাজ্য হিসেবে ও অভিহিত করা যায়।
অবস্থান
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩৫৮৪ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত কেদারনাথ মন্দির। এই কেদারনাথ শহরটি মূলত উত্তরাখণ্ডের রুদ্রপ্রয়াগ জেলায় অবস্থিত । কেদারনাথ মূলত চার ধাম যাত্রার (বৈদ্যনাথ, কেদারনাথ, গঙ্গোত্রী, যমুনেত্রী) অন্তর্ভূক্ত।
কেদারনাথ মন্দিরের প্রাচীন ইতিহাস
মহাভারত অনুসারে জানা যায়, একদা পাণ্ডবরা ভগবান শিবকে তুষ্ট করার জন্য কেদারনাথ মন্দির নির্মাণ করেন। শোনা যায়, ৮ম শতকে হিন্দু দার্শনিক আদি শঙ্করাচার্য তাঁর শিষ্যদের নিয়ে এই মন্দির দর্শনে এসেছিলেন। তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো - ২০১৩ সালে বিধ্বংসী বন্যায় কেদারনাথ শহরের প্রচুর ক্ষতি হলেও মন্দিরের কোনও রকম ক্ষতি হয়নি।
কেদারনাথ মন্দিরের পৌরাণিক কাহিনি
পুরাণে বর্ণিত আছে, মহাভারত যুদ্ধের পর পাণ্ডবরা শিবের আর্শীবাদ প্রাপ্তির জন্য যাত্রা শুরু করেন। যাত্রাপথে বহুবার বাঁধা আসার পর ষাঁড়ের বেশে শিব ভীমকে দর্শন দেন।
এরপর ভীম ষাঁড় বেশধারী শিবকে ধরার জন্য তার গদার সাহায্যে সেই ষাঁড়কে আঘাত করেন। আঘাত হওয়ার পর সেই ষাঁড়ের দেহ বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত হয়ে মাটির চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে । ধার্মিকদের বিশ্বাস এই ষাঁড়ের পশ্চাৎ অংশ রূপেই কেদারনাথ মন্দিরে ভগবান শিব স্থাপিত আছেন । মনে করা হয় ভগবানের এই রূপদর্শনের ফলেই পান্ডবদের পাপ মুক্তি ঘটে । ভগবান শিব সেই সময় পাণ্ডবদের বলেছিলেন তিনি ত্রিকোণ আকৃতি রূপেই ভক্তদের কাছে বিরাজমান থাকবেন। সেই কারণেই আজও কেদারনাথ মন্দিরে গর্ভগৃহে ত্রিকোণ আকৃতি রূপেই মহাদেব বিরাজিত আছেন ।
প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি, শিব বেশধারী ষাঁড় ভীমের গদার আঘাতে মোট পাঁচটি খণ্ডে বিভক্ত হন । কেদারনাথ ছাড়াও বাকী শিবলিঙ্গ গুলি হল - তুঙ্গনাথ, রুন্দ্রনাথ, মদমহেশ্বর, কল্পেশ্বর, যা পঞ্চকেদার নামেও পরিচিত।
কেদারনাথ প্রসঙ্গে কিছু তথ্য -
১. কেদারনাথ হলেন চারধাম যাত্রার অন্যতম প্রধান যাত্রা । সম্পূর্ণ চারধাম যাত্রা যেমন হিন্দু ধর্মপ্রাণ মানুষকে পুন্য দান করে, একই সাথে প্রকৃতিপ্রেমী ভ্রমণপ্রিয় মানুষকে পরিতৃপ্তি এনে দেয়।
২. এই মন্দিরটি প্রতি বছর বৈশাখ মাসে দর্শণার্থীদের জন্য খোলা হয় এবং কার্তিক মাসের প্রথম দিনে বন্ধ করে দেওয়া হয় ।
৩. শীতকালীন সময়টা ভগবান কেদারনাথকে উখিমঠে স্থাপন করা হয়।
৪. তবে তুষারাবৃত হিমালয়ের কোলে এবং মন্দাকিনী নদী তীরবর্তী স্থানে অবস্থিত এই মন্দির এবং পরিবেশের সান্নিধ্য যে কোনও মানুষকে মুগ্ধ করবেই।
৫. গৌরীকুণ্ড থেকে কেদারনাথের দূরত্ব প্রায় ১৬ কিমি। এখানে থেকে আপনি ট্রেকিং করে / ঘোড়ায় / এমনকি হেলিকাপ্টারের সাহায্যে ও মন্দিরে পৌঁছে পারেন।
কোথায় থাকবেন?
বর্তমানে যেহেতু কেদারনাথ একটি বিখ্যাত তীর্থক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত তাই এখানে বিভিন্ন বাজেটের হোটেল এবং ধর্মশালা উপলব্ধ আছে।
কখন যাবেন?
কেদারনাথ ভ্রমণের জন্য মে থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত সময়টাই ভ্রমণের জন্য আদর্শ ।
কীভাবে যাবেন?
বিমানে - কলকাতা থেকে বিমানে চেপে প্রথমে পৌঁছে যান দেরাদুনের জলি গ্রান্ট বিমানবন্দর । সেখান থেকে ৫ ঘণ্টার দূরত্ব অতিক্রম করে পৌঁছে যান গৌরীকুণ্ড । গৌরীকুণ্ড থেকে পৌঁছে যান কেদারনাথের উদ্দেশ্যে।
ট্রেনে - হাওড়া থেকে ট্রেনে ধরে পৌঁছে যান হরিদ্বার। সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে পৌঁছে যান গুপ্তকাশী । এরপর গুপ্তকাশী থেকে গাড়ি নিয়ে পৌঁছে যান সোনপ্রয়াগ অথবা গৌরীকুণ্ড। একদিন গৌরীকুণ্ডে রাত্রিবাস করে পরের দিন সকালে বেরিয়ে পড়ুন কেদারনাথ দর্শনে।