সম্প্রতি আসামের মাজুলি দ্বীপ নিয়ে বেশ চর্চা হচ্ছে। পর্যটকরা আশায় বুক বাঁধছেন, সব ঠিক হয়ে গেলেই দৌড়বেন সেখানে। মাজুলি ভারতের বৃহত্তম নদী বদ্বীপ। কিন্তু জানেন কি নদী সৃষ্ট দ্বীপ কাকে বলে? আর আমাদের দেশে শুধু নদী দ্বীপের কথাই কেন শোনা যায়?
নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে নদীর পলি জমে জমে যে দ্বীপ তৈরি হয় সেটাই নদী দ্বীপ। বড় নদী হলে দ্বীপও অনেক বড় হয়। এছাড়াও এমন কোনও জায়গা যেখানে জলস্তরের চেয়ে উঁচু জায়গায় পলি জমে গেছে সেখানেও দ্বীপ তৈরি হয়।
জেনে রাখুন নদী দ্বীপ কিন্তু চিরকাল থাকে না। যে নদী তাদের সৃষ্টি করে,সেই নদীই তাদের ধীরে ধীরে ক্ষয় করে আবার কখনও পুরোপুরি গ্রাস করে নেয়। নদীর জলে ভেসে যায় দ্বীপ। কিন্তু যতক্ষণ তারা থাকে ততক্ষণ রুদ্ধশ্বাস সৌন্দর্যে আকর্ষিত করে সবাইকে। তাছাড়া দ্বীপের জমি এত উর্বর যে এখানে ফলে সোনার ফসল।
রইল এমনই কয়েকটি দ্বীপের হদিশ যা মিলিয়ে যাওয়ার আগে একবার দেখে নেওয়া উচিৎ
আসামের মাজুলির নাম লেখা আছে গিনিস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে। কারণ এটি বিশ্বের বৃহত্তম নদী বদ্বীপ।৪৫০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে ছড়ানো মাজুলি দ্বীপে আছে জলাশয় যেখানে ফুটেছে সবুজ কচুরিপানা আরাছে ধানক্ষেত। উর্বর জমির জন্য এখানে নানা প্রজাতির ধান হয়। মাজুলির জনসংখ্যা ১.৬৮ লাখ। এরা প্রধানত দেওরি, মিশিং, সোনোওয়াল কাছরি উপজাতির মানুষ। অনেকেই এই জায়গা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন কারণ ব্রহ্মপুত্র নদী বদ্বীপ ভেঙে দিচ্ছে। অনেকেই অনুমান করছেন যে আগামী ২০ বছরে হয়তো মাজুলি জলে তলিয়ে যাবে।
এখানে কী কী করার আছে: মিশিং উপজাতির সঙ্গে আপং বা রাইস বিয়ার পান করুন। নৌকো করে বেরিয়ে পড়ুন ধানক্ষেত দেখতে। যদি আপনি নভেম্বরে এখানে আসেন তাহলে স্থানীয়দের সঙ্গে রাসলীলায় অংশ গ্রহণ করতে পারেন। এখানে প্রচুর পাখি আছে, তাই বার্ডওয়াচিংও করতে পারেন। এখানকার নানা রঙে রাঙানো ঐতিহ্যবাহী ম্যাকাবরে মুখোশ কিনতে ভুলবেন না।
কীভাবে যাবেন: গুয়াহাটির লোকপ্রিয় গোপিনাথ বরদোলোই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছে যান। সেখান থেকে বাসে করে জোরহাট। জোরহাট থেকে শেয়ার ট্যাক্সি বা রিক্সা করে অনতিদূরেই নিমাতিঘাট। এখান থেকেই মাজুলির ফেরি পেয়ে যাবেন।
কোন সময়ে যাবেন: নভেম্বরের মাঝামাঝি এখানে রাস উৎসব হয়। তাই স্থানীয়দের সঙ্গে এখানে রাসলীলায় মেতে ওঠার সুযোগ পাবেন। তাছাড়া এখানে বর্ষাকাল খুব সুন্দর। তবে বর্ষাকালে (জুলাই- অক্টোবর) দ্বীপ অনেকটাই ডুবে যায়। তখন নৌকা করে ঘোরাঘুরি করা যায়।
কোথায় থাকবেন : মাজুলিতে কোনও হোটেল নেই। তবে এখানে আছে ২১ টি সত্র বা মঠ। এর মধ্যে কয়েকটিতে অতিথিদের থাকার ব্যবস্থা আছে। এছাড়াও থাকতে পারেন রিভার ভিউ ব্যাম্বু কটেজ। এখানে আরও কয়েকটি অপশন দেওয়া হল।
কোথায় থাকবেন: এই দ্বীপে থাকার কোনও জায়গা নেই। দ্বীপ থেকে ফেরার জন্য শেষ নৌকো ছাড়ে বিকেল ৫ টার সময়।
ভবানী দ্বীপ
অন্ধ্রপ্রদেশের বিজয়ওয়াড়া থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কৃষ্ণা নদী সৃষ্ট দ্বীপ এটি। একটা সুন্দর সপ্তাহান্ত কাটাবার জন্য এটা সেরা জায়গা। নৌকো আপনাকে কাঠের ডকে নামিয়ে দিয়ে যাবে। কিছুক্ষণ বসলেই সিগাল পাখিদের মাতামাতি দেখতে পাবেন। একটা হ্যামক টাঙিয়ে উপভোগ করুন এই দ্বীপ। এখানে নানা রকমের ওয়াটার স্পোর্টসের ব্যবস্থা আছে,চাইলে সেগুলোও উপভোগ করতে পারেন।
এখানে কী কী করার আছে: ওয়াটার স্পোর্টসে অংশ নিতে পারেন। দ্বীপের জঙ্গলে হেঁটে উপভোগ করতে পারেন। স্থানীয় আর্ট অ্যান্ড ক্রাফট গ্রাম শিল্পরমম গ্রামের শিল্পীদের তৈরি কাপড় ও খেলনা কিনতে পারেন। এখানকার সূর্যাস্ত খুব সুন্দর।সেটা মিস করবেন না।
কীভাবে যাবেন : বিজয়ওয়াড়ার দুর্গা ঘাটে পৌঁছে যান। সেখান থেকে অন্ধ্রপ্রদেশ সরকারের পর্যটন বিভাগের নিজস্ব ফেরিতে এখানে যাওয়া যায়।
আসার সেরা সময়: অক্টোবর থেকে মার্চ এখানে আবহাওয়া খুব অনুকূল থাকে। তাই এই সময় আসতে পারেন।
কোথায় থাকবেন: কয়েকটা থাকার জায়গা এখানে আছে। তার মধ্যে ভবানী আইল্যান্ড হারিতা রেসর্ট আর হারিতা বার্ম পার্ক বেশ ভাল।
পিকক দ্বীপের আরেকটি নাম উমানন্দ আইল্যান্ড। এটি বিশ্বের সবচেয়ে ছোট বসতি পূর্ণ দ্বীপ। পিকক আইল্যান্ড অবস্থিত আসাম, গুয়াহাটির ব্রহ্মপুত্র নদীর কাছে। লোককথা বলে এই দ্বীপে বাস করতেন স্বয়ং শিব। সেইজন্যই উমা বা পার্বতী খুব আনন্দ পেতেন। তাই উমানন্দ নাম রাখা হয়েছিল। এখানে একটা শিব মন্দির আছে। প্রতিবছর বহু ভক্ত সমাগম হয়।এই দ্বীপের আরও একটি আকর্ষণ হোক এখানকার লুপ্তপ্রায় সোনালি বাঁদর। এখন এদের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। দ্বীপে মাত্র পাঁচটি বাঁদর দেখা যেত একসময়। তবে ধীরে ধীরে এদের সংখ্যা বাড়ছে।
এখানে কী কী করার আছে: এখানে এলে শিবের মন্দিরে অবশ্যই যাবেন। এটি কামরূপের পাঁচটি তীর্থ ক্ষেত্রের একটি। এছাড়াও দেখুন বাকি চারটে মন্দির যেমন গনেশ, হর গৌরি, চলন্তিকা ও চন্দ্রশেখর। দুর্লভ সোনালি বাঁদরও দেখুন আর উপভোগ করুন দ্বীপের অপার সৌন্দর্য।
কীভাবে যাবেন : এটি উত্তর ও দক্ষিণ গুয়াহাটির মধ্যে অবস্থিত। কাছারি ঘাট থেকে নৌকা পাওয়া যায় এখানে আসার।
আসার সেরা সময়: নভেম্বর থেকে মার্চ হল সেরা সময়। এই সময় আবহাওয়া খুব ভাল থাকে।
পুরনো গোয়ার পাঞ্জিমের কলোনিয়াল গির্জা থেকে অনতিদূরেই এই দ্বীপ। যে গোয়ার কথা আপনি শুনেছেন বা দেখেছেন মানডভি নদীর এই দ্বীপ তার থেকে একদম আলাদা। বেশি পর্যটক এখানে আসেন না। তবে দ্বীপের বড় দুটি উৎসব বোনডেরাম আর পোটেকার চলার সময় অনেকে আসেন। আগস্ট মাসের চতুর্থ রবিবারে বোনডেরাম উৎসব হয়। এই সময় দ্বীপের বাসিন্দারা তাঁদের নৌকা নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। পোটেকার অনেকটা হ্যালোইন উৎসবের মতো। যা লেন্টের তিন দিন আগে পালিত হয়। তখন বাসিন্দারা নানা রকমের মুখোশ ও ঘণ্টা লাগিয়ে ঘোরে।
এখানে কী কী করার আছে: এখানকার পিয়েডেড গ্রামে আছে প্রাচীন কদম্ব রাজবংশের ধ্বংসাবশেষ। রয়েছে সাও মাথিয়া গ্রামে ৪০০ বছরের পুরনো পর্তুগিজ গির্জা সাও মাথিয়া। দেখুন কীভাবে একটি তীর্থ পরিণত হয়েছে ভূতের শহর নারোয়াতে।
কীভাবে যাবেন:পুরনো গোয়ার ভাইসরয় আর্চ থেকে দক্ষিণ দিকের নৌকো ভাড়া করে নিন।
এখানে আসার সেরা সময় : নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি হল এখানে আসার সেরা সময়। এই সময় দিন আর রাতের তাপমাত্রা বেশ আরামদায়ক থাকে।
কোথায় থাকবেন: কাসা দোস সিলভেইরাস আর ওয়াও- রোম্যান্টিক ভিলা এয়ার বিএনবির এই দুটো বেশ ভাল হোটেল আছে।
কাবেরী নদী ও তার শাখা দ্বারা সৃষ্ট এই দ্বীপ তামিলনাড়ুর তিরুচিরাপল্লীতে অবস্থিত। অন্যান্য দ্বীপের মতো এখানে যাওয়া খুব একটা কষ্টকর নয়। কারণ এখানে অবস্থিত শ্রীরঙ্গনাথন স্বামীর মন্দির। এই মন্দির প্রাথমিক ভাবে একটি হিন্দু- বৈষ্ণব মন্দির যা ২০১৭ সালে ঐতিহ্য রক্ষার জন্য ইউনেস্কো এশিয়া প্যাসিফিক অ্যাওয়ার্ড অব মেরিট পেয়েছে। যদি ইতিহাস, স্থাপত্য আর ধর্ম তিনটেই আপনাকে আকর্ষিত করে তাহলে এটাই আপনার জন্য সেরা জায়গা।
এখানে কী কী করার আছে: নতুনভাবে সাজানো শ্রীরঙ্গনাথন স্বামীর মন্দিরে অবশ্যই যাবেন। এখানে ঘুরলে এখানকার সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারবেন। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ মন্দির যেমন অন্ত রঙ্গ মন্দির ঘুরে দেখতে পারেন।
কীভাবে যাবেন : ট্রেনে চেন্নাই সেন্ট্রাল স্টেশনে এসে সেখান থেকে শ্রীরঙ্গমে আসতে পারেন। যদি ত্রিচিতে থাকেন তাহলে এক নম্বর রুট ধরে সিটি বাসে এখানে আসুন।
এখানে আসার সেরা সময়: শীতকাল এখানে আসার সেরা সময়।
কোথায় থাকবেন: হোটেল শ্রী হায়াগ্রিভা ও বিএসএসকে কমফর্টস ইন দুটি জনপ্রিয় থাকার জায়গা এখানে।
নিজের বেড়ানোর অভিজ্ঞতা ট্রিপোটোর সঙ্গে ভাগ করে নিন আর সারা বিশ্ব জুড়ে অসংখ্য পর্যটকদের অনুপ্রাণিত করুন।
বিনামূল্যে বেড়াতে যেতে চান? ক্রেডিট জমা করুন আর ট্রিপোটোর হোটেল স্টে আর ভেকেশন প্যাকেজে সেগুলো ব্যাবহার করুন
(এটি একটি অনুবাদকৃত আর্টিকেল। আসল আর্টিকেল পড়তে এখানে ক্লিক করুন!)