ছোটবেলায় যখন মা-বাবার সঙ্গে ট্রেনে চড়ে মামার বাড়ি যেতাম তখন জানলা দিয়ে বাইরের প্রকৃতি দেখতে বড্ড ভাল লাগত। দেখে মনে হত কেমন যেন গাছপালাগুলো পেছনের দিকে সরে যাচ্ছে আর আমি ক্রমশ এগিয়ে চলেছি। তাই ট্রেনে উঠলে জানলার ধারে সিটটা কিন্তু আমার জন্যই থাকত। সময় এগিয়ে চলে; যুগ বদলায়। তার সঙ্গে হয়তো মানুষের রুচি বোধের পরিবর্তন হতে থাকে। তাই এখন সময় বাঁচানোর তাগিদে ট্রেন ছেড়ে কিন্তু আমরা প্লেনের পথে পা বাড়ায়। কিন্তু তাও মনের মধ্যে ট্রেনের জন্য সেই ভাললাগার জায়গাটা আজও রয়ে গেছে। কিছু কিছু জায়গায় ট্রেনে করে যাওয়ার মজাই আলাদা।
কাজের জন্য কখনও কখনও গুগল সার্চ করলে অদ্ভুত অদ্ভুত সব ট্রেন দেখতে পাওয়া যায়। কোনটা কাঠের, কোনটা কাঁচের। মাঝে মাঝে মনে হয় এই ট্রেনগুলোতে চড়ার সৌভাগ্য যদি আমাদের হত তাহলে মন্দ হত না। ভাবতে ভাবতে হঠাৎ করে খুঁজে পেলাম আমাদের ভারতবর্ষের বুকেও এবার এই ধরনের রেলে পরিষেবা শুরু হয়েছে, যাদের ভিস্তাডোম ট্রেন নামে ডাকা হচ্ছে।
কোথায় কোথায় চালু হচ্ছে এই রকম রেল পরিষেবা-
কালকা-সিমলা- ২৫শে ডিসেম্বর ২০১৯ সাল থেকে ৯০ জন যাত্রীকে নিয়ে হিমদর্শন এক্সপ্রেস নামে এই বিলাসবহুল লাল রঙের বেলুন দিয়ে সাজানো কাঁচের ট্রেনটি সকাল ৭টায় কালকা স্টেশন থেকে যাত্রা শুরু করেছিল সিমলার পথে। দুপুর ১২টা বেজে ৫৫ মিনিটে ট্রেনটি পৌঁছয় সিমলা স্টেশনে। পুরো ৫ ঘন্টা ৫৫ মিনিটের এই যাত্রাপথে প্রত্যেক যাত্রী ট্রেনে বসে কাঁচের জালনা দিয়ে হিমালয়ের অপরূপ সৌন্দর্য দর্শন করতে পারবেন।
শুধু যাওয়ার সময় নয়, প্রতিদিন বিকেল ৩.৫০ মিনিটের সিমলা স্টেশন থেকে এই ট্রেনটি পুনঃরায় রাত্রি ৯.১৫ মিনিটে কালকা পৌঁছয়। ফেরার পথে অস্তগামী সূর্যের শোভা আরও সুন্দর করে তুলবে আপনার যাত্রাপথ।
মুম্বাই-গোয়া এবং বিশাখাপত্তানাম-আরাকুভ্যালি লাইনে এই ধরনের ট্রেন দেখতে পাওয়া যায়।
তবে জম্মু-কাশ্মীরের এই ধরনের ট্রেন চালু করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
ট্রেনের মধ্যে কী কী নতুন ব্যবস্থা রয়েছে-
• আধুনিক কোচ দেখতে পাওয়া যাবে এই ট্রেনে, যেগুলি পর্যটকদের সুবিধার কথা মাথায় রেখেই তৈরি করা হয়েছে।
• সমস্ত বগিতে থাকবে এয়ার স্প্রিং সাসপেনশন।
• ট্রেনটির উপরের অংশে থাকবে বৈদ্যুতিকভাবে নিয়ন্ত্রিত কাঁচের ছাদ।
• যাত্রাপথে যাত্রীরা প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন সেই জন্য বড় বড় কাঁচের জানলার ব্যবস্থার থাকবে।
• ট্রেনের এক প্রান্তে বৃহত্তর কাঁচের জালনা সঙ্গে থাকবে অবজারভেটরি লাউঞ্জ।
• যাত্রীদের সিট ১৮০° পর্যন্ত ঘোরান যাবে।
• প্রতিটি সিটের সঙ্গে ইলেকট্রনিক্স গ্যাজেটের চার্জিং ব্যবস্থা থাকবে।
• সারা ট্রেন জুড়ে থাকবে ওয়াইফাই।
• প্রতিবন্ধকতাকে কাটানোর জন্য এখানে হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
• স্লাইডিং দরজা থাকবে প্রত্যেকটি বগিতে।
• ডিজিটাল ডিসপ্লে স্ক্রিনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
• যাত্রীদের জিনিসপত্র রাখা হবে স্টেনলেস স্টিল মাল্টিয়ারে।
• রেফ্রিজারেটর, কফি মেকার, মাইক্রোওভেন, ওয়াশবেসিন এবং উন্নতমানের টয়লেট থাকবে প্রতিটি বগিতে।
ট্রেনের টিকিট বুকিং পদ্ধতি-
ইন্ডিভিজুয়াল সিট কারেক্টর সার্ভিসের মাধ্যমে এই ট্রেনের টিকিট অনলাইনে বুক করা যাবে। টিকিটের দাম ৬৩০ টাকা মত। আর এটি বুকিং হবে প্যাসেঞ্জার রিজার্ভেশন সিস্টেমের মাধ্যমে।
তাহলে যারা শাহরুখ খান কাজলের ট্রেনের ভেতরে রোমান্টিক সিনটা দেখে বরাবর ভেবেছেন একবার যদি এইরকম একটি ট্রেনে চড়ার সুযোগ পেতেন তাহলে জীবন স্বার্থক হয়ে যেত। তাদের জন্য রইল এই লেখাটি। আশা করব আপনারাও আপনাদের স্বপ্নের ট্রেনে একবার চড়ার সুযোগ অবশ্যই পাবেন।