
শহর কলকাতার সঙ্গে সাহিত্যের সম্পর্ক নিবিড়। রবীন্দ্রনাথ থেকে সত্যজিৎ, সুনীল থেকে সমরেশ, আশাপূর্ণা দেবী থেকে লীলা মজুমদার, কলকাতা তথা কলকাতার বাঙালিদের মননে, হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছে সাহিত্যের প্রতি ভালোবাসা। সাহিত্যের প্রতি এই ভালোবাসাই কিন্তু কয়েক শতাব্দী আগে জন্ম দিয়েছিল আরেক কিংবদন্তি লেখকের, যাঁকে আধুনিক সাহিত্যের জনক বললেও হয়তো কম বলা হয়। তিনি ছিলেন ইংল্যান্ডের প্রবাদপ্রতীম কবি এবং লেখক, নাট্যকার উইলিয়াম শেক্সপিয়র। পাঠকরা প্রশ্ন করতেই পারেন যে সুদূর ইংল্যান্ডের শেক্সপিয়র, আর কলকাতার রাস্তাঘাটের মধ্যে আবার কি সম্পর্ক? কিন্তু সম্পর্ক আছে, সেই সম্পর্কের শেষ নিদর্শন লুকিয়ে আছে পার্কস্ট্রিট সেমেটারির অভ্যন্তরে।
ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির হাত ধরে শুরু যোগাযোগ
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনকালে তিলোত্তমা কলকাতা হয়ে উঠেছিল এক আন্তর্জাতিক মহানগরী। দূর-দূরান্ত হতে ভাগ্য অন্বেষণের খোঁজে কলকাতায় ছুটে আসতেন সারা বিশ্বের মানুষ। আর তাঁদের অনেকেরই জীবনাবসানের পর অন্তিম ঠাঁই হতো কলকাতার পার্কস্ট্রিট কবরস্থানের নিঝুম নিরালায়। কলকাতার সঙ্গে শেক্সপিয়রের সম্পর্ক ও গড়ে উঠেছিল এই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাত ধরে, আর শেষ হয়েছিল পার্কস্ট্রিট কবরস্থানে।
বংশপরম্পরায় শেক্সপিয়রের কলকাতা কানেকশন
উইলিয়াম শেক্সপিয়রের কাকার ছেলে ছিলেন থমাস শেক্সপিয়র। বংশানুক্রমে থমাসের প্রপৌত্রের সন্তান জন শেক্সপিয়র ঘনিষ্ট হয়ে ওঠেন ওয়ারেনের সঙ্গে। ওয়ারেন বলতে অখণ্ড বাংলার গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংস। অনেকটা হেস্টিংসের সাথে সখ্যতার কারণেই জন পা রাখেন ভারতবর্ষের মাটিতে।
১৭৭৮ খ্রিস্টাব্দে ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিসের কৃতি অফিসার হিসেবে তিনি ভারতে পদার্পন করেন এবং শীঘ্রই কর্মক্ষেত্রে উন্নতির মাধ্যমে পৌঁছে যান সাফল্যের চূড়ায়। জন শেক্সপিয়রের পুত্র ট্যালবটের সঙ্গে বিবাহ হয় জনের ফেলো অফিসার ও বন্ধু উইলিয়াম ম্যাকপিস থ্যকারের কন্যা এমিলি থ্যকারের। বসবাস শুরু হয় আমাদের কলকাতায়, বর্তমানের আলিপুর রোডের কাছে দুই ভিলায়। শেক্সপিয়রের পরিবারের একটি শাখা এভাবেই আপন করে নেয় তিলোত্তমা কলকাতা শহরকে।
সাউথ পার্কস্ট্রিট : সমাধি ও সমাপ্তি
অবশেষে ১৮২৪ খ্রিস্টাব্দে এমিলি থ্যকার মারা যান দুরারোগ্য কলেরার প্রকোপে এবং তিনি সমাধিস্থ হন সাউথ পার্ক স্ট্রিট কবরস্থানে। তাঁর স্বামী ট্যালবট মারা যান অল্প কিছুদিন পরেই, জাহাজসফরে থাকাকালীন। ট্যালবটের স্মৃতির উদ্দ্যেশে মেমোরেটিভ একটি স্মারক আজও রক্ষিত আছে এমিলির কবরের পাশেই। উইলিয়াম শেক্সপিয়রের বংশের একটি শাখা এভাবেই চিরতরে ঘুমিয়ে রয়েছে আমাদের শহরের বুকে।