নতুন যুগের যে সকল নববিবাহিত দম্পতিরা নিজেদের বিয়ের খরচাপাতি নিজেরাই মেটাচ্ছেন, তাদের বিয়ের পরে একটু আর্থিক অসুবিধে হওয়া অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু মনের মতো মধুচন্দ্রিমা কাটানোর ইচ্ছেটাও প্রবল অথচ চিরাচরিত জনপ্রিয় ডেস্টিনেশনগুলো প্রচন্ড দামি এবং ব্যয়বহুল। তাই খোঁজ রইল এমন ৭টি মধুচন্দ্রিমা কাটানোর ডেস্টিনেশনের, যেগুলো অফবিট, আপনার পকেটের ওপর চাপ ফেলবে না কিন্তু তাও আপনাদের জন্যে হয়ে থাকবে স্বরণীয়।
১. জীবন শুরু করুন অ্যাডভেঞ্চারকে সঙ্গী করে
আপনাদের দুজনেরই যদি থেকে থাকে অ্যাডভেঞ্চারের নেশা, তাহলে অসাধারণ সুন্দর একটা ডেস্টিনেশনে সারাদিন ট্রেক করার পর রাতে আকাশের তারাদের নিচে ক্যাম্প করার মত আকর্ষণীয় আর কিছু নেই। একসঙ্গে এভাবে হারিয়ে যাওয়ার জন্যে জিরো একেবারে আদর্শ। ট্রেকিং নিয়ে দুজনেই যদি অভিজ্ঞ হন, তাহলে শুধুমাত্র আপনারা দুজনেই এই ট্রেকটি করতে পারেন। তবে খেয়াল রাখবেন, এতে কিন্তু রান্না করা, তাঁবু খাটানো এবং ক্যাম্পিং এর জিনিসপত্র কেনা বা ভাড়া করা, সব নিজেদেরই করতে হবে। এত ঝঞ্ঝাট না পোষালে, সঙ্গ নিয়ে নিতে পারেন গাইড, যিনি আপনাদের সবরকম সাহায্য করতে পারবেন এবং আপনাদেরকে দিতে পারবে সবরকম প্রয়োজনীয় তথ্য।
মোটামুটি খরচ : ৭ দিনের ট্রেকের জন্যে ৭০০০ থেকে ১২০০০ টাকা
আরও পড়ুন : ১২ মাসে ভারতের শ্রেষ্ঠ ১২টি ট্রেক
২. বাড়ির কাছেই লাক্সারি রিসোর্টে বিশ্রাম করুন, বাঁচুক টিকিটের টাকা
সুলভে মধুচন্দ্রিমা করার মানেই কিন্তু দুরদুরান্তের অচেনা জায়গায় যাওয়া আর আনুষঙ্গিক ঝামেলা সহ্য করা নয়। চাইলেই কিন্তু ভ্রমণের সবরকম আনন্দ আপনি পাবেন স্টেকেশন করেই। যত দিন যাচ্ছে, দম্পতিদের মধ্যে এইভাবে ভ্রমণ করা আর জনপ্রিয় হচ্ছে। আরামে সময় কাটানো, যাতায়াতের খরচ ও ধকল বাঁচানো এবং মনের সুখে বাড়ির কাছেই কোনো লাক্সারি রিসোর্টে বিশ্রাম করা, সবই পাবেন। ডিল বা প্যাকেজের মাধ্যমে আপনি আরো কিছু টাকা বাঁচাতে পারবেন। খুঁজে নিন দুজনের ভালো লাগার মতন অ্যাক্টিভিটি এবং দিনের শেষে সব গ্লানি দূর করুন কাপলস-স্পা এর মাধ্যমে।
মোটামুটি খরচ : দু'রাত্রির জন্যে ১০০০০ থেকে ১২০০০ টাকা
আরো পড়ুন : স্টেকেশন করুন ভারতবর্ষের এই ঝাঁ চকচকে হলিডে হোমসগুলোতে
৩. বিয়েটা হয়ে যাক, তারপর শেষ মুহূর্তে টিকিট কাটুন
আজকাল যখন সবকিছু আগে থেকে প্ল্যান করে আগে থেকে বুক করে রাখার চল, তখন শেষ মুহূর্তে কিছু করার কথা শুনতে একটু অদ্ভুতই লাগার কথা। কিন্তু এর ফলে বাঁচানো যায় বেশ অনেকটা টাকা। একদম শেষ কালে বুক করলে আপনি পেয়ে যেতে পারেন প্লেন, হোটেল বা এমনকি ক্রুজ বুকিংয়ের উপরেও আকর্ষণীয় লাস্ট-মিনিট ডিলস। তবে একটা কথা মনে রাখবেন, এতে কিন্তু আপনাদের একটু ফ্লেক্সিবল হওয়া বাঞ্ছনীয়। কারণ, ডিল অনুযায়ী আপনার গন্তব্যস্থল বা হোটেলের রুমের ভিউ পাল্টে যেতে পারে। তবে সেই অনিশ্চয়তার মধ্যে একসঙ্গে রোমাঞ্চ খুঁজে পাওয়ার মজাই আলাদা।
টিপ : হোটেলের রিসেপশনে জানিয়ে রাখুন যে আপনার মধুচন্দ্রিমা কাটাতে আসছেন, অনেক সময় হোটেলগুলো বিনামূল্যে রুম আপগ্রেড করে দেয়।
৪. তারাভরা আকাশকে সঙ্গী করে বেরিয়ে পড়ুন রোড ট্রিপে একসঙ্গে
লং ড্রাইভ মানেই সম্পর্কে লাগে অনুরাগের নতুন ছোঁয়া। তাই আরেকটু লং ড্রাইভ করে হানিমুনেও ঘুরে আসতে পারেন নিজেদের মনের মতো রোড ট্রিপে। আপনার পছন্দের ডেস্টিনেশন, পাশে আপনার প্রিয়জন, চারপাশে অসাধারণ সিনারি, এবং নিভৃতে একে অপরের সাথে ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠা। প্লেনের ছোট্ট কোনো সিটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা চুপচাপ বসে থাকার থেকে রোড ট্রিপ তাই অনেক ভাল। আরও খরচ বাঁচাতে, নিজেরাই সঙ্গে খাবার নিয়ে যান এবং শেষ গন্তব্যস্থলে পৌঁছে তবেই হোটেল বুক করুন।
গড় খরচ : তেল, খাবার আর থাকার জায়গা মিলিয়ে ৫০০০ থেকে ১০০০০ টাকা।
আরো পড়ুন : ভারতবর্ষের আরেকটি আকর্ষণীয় উপকূলরেখা বা উত্তরাখণ্ডের কুমায়ুন ভ্যালি অভিযান
৫. একে অপরকে খুঁজে পান মনের মতো ওয়েলনেস রিট্রিটে
ওয়েলনেস রিট্রিটে মধুচন্দ্রিমা কাটানো শুনে খুব খরচসাপেক্ষ মনে হলেও আসলে তা নয়। নিরিবিলিতে সময় কাটানো, অসাধারণ ঘরোয়া খাবার, আনুষঙ্গিক থেরাপি, ম্যাসাজ, এবং ঢিমেতালে জীবন কাটানো, সবই সম্ভব আপনার সাধ্যের মধ্যেই। বিয়ের সবরকম তাড়াহুড়োর পর নিশ্চিন্তে কয়েকদিন কাটান যোগব্যায়াম, ডিটক্স, সুইডিশ ম্যাসাজ করে আর ঘুমিয়ে, আর হোক আপনার শরীর, মন এবং আত্মার পুনর্জন্ম।
বাজেট ওয়েলনেস রিট্রিট : গোয়ার পালোলেমের ভক্তি কুটির, দুজনের খরচ শুরু ১৮০০ থেকে। তামিলনাড়ুর কোডাইকানালের কাছের করুণা ফার্ম, এখানে দুজনের খরচ শুরু ১৩০০ টাকা থেকে। কেরালার ভারকালার সোল এন্ড সার্ফ, দুজনের জন্যে খরচ শুরু ৩১৫০ টাকা থেকে।
৬. মধুচন্দ্রিমা কাটান সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়ে
কথায় বলে পরোপকারের মতো সুখ আর কিছুতে নেই। আর আপনিও যদি একই কথা বিশ্বাস করেন, তাহলে মধুচন্দ্রিমায় ভলেন্টিয়ারিং এর মাধ্যমে খুঁজে পেতে পারেন আনন্দ। দেশের বিভিন্ন প্রান্তেই আজকাল এরম বহু সুযোগ আছে, বাচ্চাদের পড়ানো থেকে শুরু করে, সাস্টেনেবল উপায়ে চাষ আবাদ করা, গ্রাম্য এলাকায় বিকাশের কাজে সাহায্য করা, রিফিউজি পুনর্বাসনের কাজ বা আরো অন্যান্য প্রভৃতি কাজ। সাধারণত যে সংস্থার হয়ে আপনি স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করবেন, তারাই আপনাকে খাবার এবং থাকার জায়গা দেবে, কিছু ক্ষেত্রে পাবেন অতিরিক্ত বৃত্তি বা হাতখরচ। নতুন জীবন শুরু করার পথে মানুষের উন্নতির কাজে কিছু সময় একসঙ্গে কাটালে জীবনে খুঁজে পাবেন নতুন উদ্দেশ্য।
৭. সময় কাটান বাড়িতেই, জেনে নিন একে অপরকে অন্তরে অন্তরে, ভিতরে বাহিরে
প্রতিদিন সকালবেলায় এলার্ম ঘড়ির শব্দে ঘুম ভেঙে সারাদিনের কাজ শুরু করার ঠিক আগে, কী মনে হয় বলুন তো? মনে হয়, সারাদিন বিছানাতেই বিশ্রাম করি, মাস খানেক ছুটি নিয়ে। ভেবে দেখেছেন কী, মধুচন্দ্রিমার সুযোগে আপনি এই স্বপ্নটিও পূরণ করতে পারেন। সবাই যা করছে তা নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে অন্য কিছু করার শখ থাকলে, থাকুন বাড়িতেই এবং আরো কাছ থেকে পুনরাবিষ্কার করুন আপনার প্রিয়জনকে। ফোন সুইচ অফ করে দিন, ফ্রিজে থাকুক ভর্তি, সামনে থাকুক কয়েকটা সিনেমা, আর তারপর একে অপরের কাছে আত্মসমর্পণের অপেক্ষা। রোজকার কাজ থেকে এরকম মজার ছুটি আর কোথায় পাবেন?