ইতিহাস এবং ঐতিহ্য মিশে রয়েছে মিত্র-মুস্তাফি পরিবারের দুর্গাপুজোতেও...

Tripoto
Photo of ইতিহাস এবং ঐতিহ্য মিশে রয়েছে মিত্র-মুস্তাফি পরিবারের দুর্গাপুজোতেও... 1/12 by Deya Das
পুজোর সমারোহ আয়োজন (ছবি সংগৃহীত)

দুর্গাপুজো মানে বাঙালির কাছে সর্ববৃহৎ একটি অনুষ্ঠান। বিভিন্ন রকম আলোকসজ্জায় নতুন করে আবার নিজের শহরকে সাজিয়ে তোলার উৎসব। সমস্ত অশুভ শক্তির দমনে শুভশক্তির উন্মোচন। আর দূর্গাপুজো মানেই কলকাতার আনন্দ। কলকাতার বেশ কিছু বনেদি বাড়ির পুজো রয়েছে, যেগুলি আজও সকল দর্শনার্থীদের নজর কাড়ে। তবে হুগলি জেলার সাবেকি বাড়ির পুজোগুলির মধ্যে অন্যতম প্রাচীন পুজো হল সুখেরিয়া গ্রামের মিত্র মুস্তাফি পরিবারের পুজো। তাই আজ আমরা একনজরে দেখে নেব এই পুজোর ইতিহাস।

মিত্র-মুস্তাফি পরিবারের সূচনা প্রেক্ষাপট-

Photo of ইতিহাস এবং ঐতিহ্য মিশে রয়েছে মিত্র-মুস্তাফি পরিবারের দুর্গাপুজোতেও... 2/12 by Deya Das

জানা যায় ১৮৪৭ সালে রানি রাসমণি জলপথে তীর্থ করার জন্য কাশী যাত্রাকালে হুগলি নদীবক্ষে মা কালী স্বয়ং তাঁকে স্বপ্নাদেশ দেন গঙ্গা নদীতীরে মন্দির প্রতিষ্ঠার জন্য। আপনাদের সবার সাথে সাথে রানি মা কাশী তীর্থ যাত্রা স্থগিত রেখে মন্দির নির্মাণের জন্য ফিরে আসতে শুরু। ফিরে আসার পথে তাঁর চোখে পরে মুস্তাফিদের এস্টেটের প্রাচীনতম মন্দিরের সিদ্ধেশ্বরী কালীমাতা মূর্তি। এই মন্দির দর্শন করতে গিয়ে রানিমা তেতালার পঞ্চবিংশতি রত্নমন্দিরে মা আনন্দময়ী ঠাকুরানিকে দেখতে পান।

Photo of ইতিহাস এবং ঐতিহ্য মিশে রয়েছে মিত্র-মুস্তাফি পরিবারের দুর্গাপুজোতেও... 3/12 by Deya Das
প্রাচীন ঐতিহ্যের নিদর্শন (ছবি সংগৃহীত)

ঠিক এরপরে ১৮৫৫ সালের গঙ্গার তীরে সুখারিয়ার আনন্দময়ী মন্দিরের অনুকরণে দক্ষিণেশ্বর মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৮১ সালে শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব সুখারিয়ার এই সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দির দর্শন এসে মুস্তাফিদের নাম শুনতে পান। এরপর থেকে মুস্তাফি পরিবারের ইতিহাস সম্বন্ধে জানার আগ্রহ বেড়ে যায়।

Photo of ইতিহাস এবং ঐতিহ্য মিশে রয়েছে মিত্র-মুস্তাফি পরিবারের দুর্গাপুজোতেও... 4/12 by Deya Das
সিদ্ধেশ্বরী মন্দির (ছবি সংগৃহীত)

মিত্র-মুস্তাফির বাড়ির ইতিহাস-

Photo of ইতিহাস এবং ঐতিহ্য মিশে রয়েছে মিত্র-মুস্তাফি পরিবারের দুর্গাপুজোতেও... 5/12 by Deya Das

১৬৫৭ সালের শান্তিপুরের উচ্চশিক্ষিত কোষাধ্যক্ষ এবং হিসাব রক্ষক মোহন মিত্র নদিয়ার টেকা গ্রাম থেকে হুগলি নদীর পূর্ব তীরে রানাঘাটের কাছে উলা গ্রামে এসে বসবাস শুরু করেন। ১৭০৪ সালে মোহন মিত্র দিল্লি গেলে তাঁর কাজের দক্ষতা এবং পারদর্শিতা দেখে সম্রাট ঔরঙ্গজেব তাঁকে মোস্তাফি উপাধিতে ভূষিত করেন। এছাড়াও স্মারকচিহ্ন পুরস্কার হিসাবে ঔরঙ্গজেবের ডান হাতের তালুর ছাপ দেওয়া একটি সোনার পাঞ্জা তাঁকে দান করেন, যা আজও এই মিত্র মুস্তাফি বংশের অহংকার এবং প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। মোহন মিত্রের একমাত্র পুত্র রামেশ্বর মিত্র নদিয়ার রাজার থেকে জমি কিনে সেখানে জমিদারি পরিচালনা করতে শুরু করেন।

Photo of ইতিহাস এবং ঐতিহ্য মিশে রয়েছে মিত্র-মুস্তাফি পরিবারের দুর্গাপুজোতেও... 6/12 by Deya Das

১৭০৮ সালে রামেশ্বর মিত্র মুস্তাফির জ্যেষ্ঠপুত্র রঘুনন্দন মিত্র মুস্তাফি শ্রীপুর গ্রামে (বর্তমানে বলাগড়-শ্রীপুর) পৌঁছে সেখানে তিনি তাঁর সাধক জীবন যাপন শুরু করেন। এই স্থানে একটি বাড়ি বানিয়ে শ্রীগোবিন্দ প্রতিষ্ঠা করেন, যার কাঠের ভাস্কর্য সমন্বিত চণ্ডিমণ্ডপটি আজও অক্ষত রয়েছে। এরপর রামেশ্বর মিত্র মুস্তাফির চতুর্থ পুত্র অনন্তরাম মিত্র মুস্তাফি হুগলি নদীর পশ্চিম তীরে সোমড়া বাজার ও বলাগড়ের মাঝে অবস্থিত সুখড়িয়া গ্রামে চলে আসেন এবং সেখানে রাধাকুঞ্জ নামে একটি আবাসন তৈরি করে যা পরবর্তীতে বিশ্বাস বাড়ি নামে পরিচিত হয়। তবে বর্তমানে এই বাড়িটি ভগ্নপ্রায় অবস্থায় পরে রয়েছে।

Photo of ইতিহাস এবং ঐতিহ্য মিশে রয়েছে মিত্র-মুস্তাফি পরিবারের দুর্গাপুজোতেও... 7/12 by Deya Das

মিত্র-মুস্তাফি বাড়ির দুর্গাপুজো-

Photo of ইতিহাস এবং ঐতিহ্য মিশে রয়েছে মিত্র-মুস্তাফি পরিবারের দুর্গাপুজোতেও... 8/12 by Deya Das
দুর্গাপুজো (ছবি সংগৃহীত)

মিত্র-মুস্তাফি বাড়িতে গোবিন্দ প্রতিষ্ঠা থাকলেও এখানে মা দশভূজা পূজিত হয় শাক্ত মতে। পূর্ব মায়ের উদ্দেশ্যে বলি দেওয়াল প্রচলন থাকলেও পরবর্তীতে বন্ধ করে দেওয়া হয়। দশভূজার বাহন হল ঘোড়ার মুখ বিশিষ্ট সিংহ। বেশ কিছু বছর ধরে এই পরিবারের কোন বংশধর না থাকায় এই পুজো মেয়ে- জামাইরা সামলে আসছেন।

Photo of ইতিহাস এবং ঐতিহ্য মিশে রয়েছে মিত্র-মুস্তাফি পরিবারের দুর্গাপুজোতেও... 9/12 by Deya Das

দূর্গাপুজো ছাড়াও মিত্র-মুস্তাফি দিয়ে তৈরি বিভিন্ন মন্দির

হরসুন্দরী মন্দির

Photo of ইতিহাস এবং ঐতিহ্য মিশে রয়েছে মিত্র-মুস্তাফি পরিবারের দুর্গাপুজোতেও... 10/12 by Deya Das
হরসুন্দরী মন্দির (ছবি সংগৃহীত)

• নিস্তারিণী মন্দির

Photo of ইতিহাস এবং ঐতিহ্য মিশে রয়েছে মিত্র-মুস্তাফি পরিবারের দুর্গাপুজোতেও... 11/12 by Deya Das
নিস্তারিণী মন্দির (ছবি সংগৃহীত)

• আনন্দময়ী মন্দির

Photo of ইতিহাস এবং ঐতিহ্য মিশে রয়েছে মিত্র-মুস্তাফি পরিবারের দুর্গাপুজোতেও... 12/12 by Deya Das
আনন্দময়ী মন্দির (ছবি সংগৃহীত)

কীভাবে যাবেন-

কলকাতা থেকে সুখারিয়া লোকাল ট্রেনে যাওয়া যায়। কাটোয়া থেকে ট্রেনে করে সোমরাবাজার স্টেশনে নামতে হবে। সেখান থেকে রিকশা বা টোটো করে চলে যাওয়া যায় এই আনন্দময়ী মন্দিরে।

নিজের বেড়ানোর অভিজ্ঞতা ট্রিপোটোর সঙ্গে ভাগ করে নিন আর সারা বিশ্ব জুড়ে অসংখ্য পর্যটকদের অনুপ্রাণিত করুন।

বিনামূল্যে বেড়াতে যেতে চান? ক্রেডিট জমা করুন আর ট্রিপোটোর হোটেল স্টে আর ভেকেশন প্যাকেজে সেগুলো ব্যবহার করুন।

Further Reads