হাতে 'গো গ্রিন,ব্রিদ ক্লিন' লেখা প্ল্যাকার্ড আর পায়ের তলায় সরষে, এই দুইকে সম্বল করে বেরিয়ে পড়েছেন ভূপর্যটক কাশী সমাদ্দার। তিনি ইতিমধ্যেই বিশ্বের প্রায় ১৯৮টি দেশ ভ্রমণ করে ফেলেছেন। শুধুমাত্র দেশে-বিদেশে ভ্রমণই নয় পকেটে ভরে নিয়েছেন গিনিস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের মতো বিরাট সম্মানও। তবে ভূপর্যটক এক কথায় পায়ের তলায় সরষে নিয়েই জনমানসে জনসচেতনতা জাগিয়ে তুলতে চাইছেন কাশী সমাদ্দার। এই প্রসঙ্গে অবশ্যই বলতে হয় ২০০২ সালে বিশ্বভ্রমণের তাগিদে বেরিয়ে মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানেই তিনি প্রায় ১৯৮টি দেশ পরিভ্রমণ করে এসেছেন (২০০৯)। স্বল্প সময়ের মধ্যে বিশ্বভ্রমণের এই নেশা অনেকের মনেই আশার আলো দেখাচ্ছে।
কিন্তু ভ্রমণের নেশাতেই তিনি ক্ষান্ত নন। দেশে-বিদেশে ভ্রমণের পাশাপাশি তিনি পরিবেশ সচেতনতার মাত্রাও বাড়িয়ে তুলতে সচেষ্ট হয়েছেন। যা নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ এক উদ্যোগ। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করতে হয় বিভিন্ন দেশে ঘুরে বেড়ানোর সময়েই তিনি বিশ্ব উষ্ণায়নের খারাপ প্রভাবের কথা চিন্তা করেছেন, সেইসঙ্গে প্লাস্টিকজাত দ্রব্যের ব্যবহার যে একদিকে গোটা পৃথিবীকে ভয়ানক ক্ষতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে তাও তিনি অনুভব করেছেন অন্তরের অন্তস্থলে। তিনি বুঝতে পেরেছেন একটা দীর্ঘ সময় ধরে এমনটা চলতে থাকলে সমগ্র মানবসমাজ একটা ক্ষতির মুখোমুখি এসে দাঁড়াবে।
বস্তুত জনমানসে সচেতনতা একটু একটু করে বাড়িয়ে তোলার জন্য ২০০৬ সাল থেকে তিনি যে সকল দেশে ভ্রমণ করেছে, সেই প্রত্যেকটি দেশই একরকমভাবে বিপন্নতার স্বীকার। এমনই একটি দেশ হল প্রশান্ত মহাসাগরের দক্ষিণে অবস্থিত ছোট একটি দেশ টুভলু। সমুদ্রঘেরা এই দেশটি সামুদ্রিক ক্ষয়কাজের ফলে মারাত্মক ক্ষতির স্বীকার। ক্ষয়ের ফলে দেশটি ক্রমেই তলিয়ে যেতে শুরু করেছে সমুদ্র গর্ভে। ধীরে ধীরে জলের উচ্চতাও বাড়তে শুরু করেছে। বিশেষজ্ঞদের অনেকেরই অনুমান এমনটা খুব বেশিদিন ধরে চলতে থাকলে একটা সময় পরে দেশটির আর কোনওরকম অস্তিত্ব থাকবে না। বলাবাহুল্য জনমানসে সচেতনতা জাগিয়ে তোলার উদ্দেশ্যই তারপর তিনি বেরিয়ে পড়েন। বারমুডা, গ্রিনল্যান্ড, মায়ানমার, ফারাও আইল্যান্ড, গুয়াম, ফ্রেঞ্চ পলিনেশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, হাওয়াই, আইল অব ম্যান, টোঙ্গা, জাঞ্জিবার, তিব্বত-সহ গিয়েছেন পৃথিবীর বহু দেশে। বাংলাদেশের সুন্দরবন এবং ভারতের লাক্ষাদ্বীপের বাঙ্গারামেও গিয়েছেন। তাঁর ওই সফর শেষ হয়েছে গত বছরের ২৫ অক্টোবর। শেষ করেছেন পৃথিবীর সব থেকে বেশি বৃষ্টিপাতের রেকর্ড যে জায়গার, সেই মেঘালয়ের মৌসিনরামে।
বলা যেতে পারে পরিবেশ বান্ধব পৃথিবী সৃজনের কথাই ফুটে উঠেছে তাঁর বিভিন্ন কথায়। প্লাস্টিকজাত দ্রব্যের ব্যবহার যথাসম্ভব কমিয়ে এনে বৃক্ষরোপণের মতো গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচিকে তিনি অধিক গুরুত্ব দিতে চেয়েছেন। আদতে কলকতা নিবাসী কাশী সমাদ্দার পেশাদগত কারণে অনেকটা সময় কাটিয়েছেন দুবাই, চিন, ইউরোপের বিভিন্ন প্রান্তে। প্রতিটি দেশের নিজস্বতা তাঁকে মুগ্ধ করেছে বারবার। তিনি আজও এমন এক পৃথিবীর স্বপ্ন দেখেন যে পৃথিবী একদিন হয়ে উঠবে কাঁটাতারের সীমারেখা মুক্ত, পাসপোর্ট ভিসাহীন।