মহানগরী তিলোত্তমা কলকাতা, যার অলিতে গলিতে ছড়িয়ে নানাবিধ গল্পের প্রেক্ষাপট। কোথাও ধোঁয়া ওঠা গরম চায়ের ভাড়ে চুমুক দিয়ে ভালোবাসা তার পাখা মেলেছে, কোথাও আবার ফুচকার টক জলে ভালবাসা পূর্ণতা পেয়েছে। বহু ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী রয়েছে এই কলকাতা। আর এই কলকাতাকে আবারও একবার নতুন করে চিনে নিতে আমরা আপনাদেরকে ৪ দিনের কলকাতা ঘোরার একটি সুন্দর পরিকল্পনার প্রস্তাবনা দিচ্ছি। তাহলে দেখে নেওয়া যাক সেই তালিকায় ঠিক কোন কোন জায়গাগুলি অন্তর্ভুক্ত করা হল।
দক্ষিণ কলকাতায় প্রথম দিন
জাতীয় গ্রন্থাগার-
আলিপুরে অবস্থিত ৩০ একর জমির উপর সবুজ ঘাসে ঘেরা এই জাতীয় গ্রন্থাগারটি আয়তনের দিক থেকে ভারতবর্ষের বৃহত্তম গ্রন্থাগার হিসাবে নির্বাচিত। এখানে প্রায় ২.২ মিলিয়নের বেশি বই রয়েছে। সাথে রয়েছে ৩২০০ বেশি পাণ্ডুলিপি এবং ৮৬০০০ মানচিত্র।
সাইন্স সিটি-
১৯৯৭ সালের জুলাই মাসে উদ্বোধন হওয়া ভারতীয় উপমহাদেশের বৃহত্তম বিজ্ঞান কেন্দ্র যার আকৃতি অনেকটা গম্বুজের মত। বিজ্ঞান কেন্দ্রটির ভেতরে রয়েছে বিভিন্ন রকম বিজ্ঞানসম্মত মজার তথ্য।
বিড়লা মন্দির-
কলকাতার অন্যতম একটি স্থাপত্য শৈলী হল এই বিড়লা মন্দির যা পর্যটকদের ক্রমাগত আকর্ষণ করে। ১৯৭০ সালে নির্মাণকার্য শুরু হয়ে প্রায় ২৬ বছর ধরে সাদা মার্বেল পাথর দিয়ে এই বিড়লা মন্দির তৈরি করা হয়।
ইকো পার্ক-
প্রায় ৪৮০ একর জমি নিয়ে গড়ে ওঠা ইকোপার্কে রয়েছে বিভিন্ন রকমের মনোরঞ্জনদায়ক বিষয়বস্তু, যেমন- আইস স্কেটিং, কায়াকিং, ক্রুসিং ইত্যাদি। এছাড়াও পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্য বিষয়গুলিও এখানে মডেলের মাধ্যমে উপস্থিত করা হয়েছে। সঙ্গে রয়েছে খুব সুন্দর খেলার জায়গায় এবং ভাসমান রেস্তরাঁ।
রবীন্দ্র সরোবর-
দিনের শেষে ক্লান্ত হয়ে একটু নীরবতা খুঁজে নিতে এই জায়গায় আসতে পারেন। প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য এই জায়গাটি স্বর্গ। পাখির ডাক, নদীর জলের কলকল শব্দ, নুড়ি পাথরের পথ সব মিলিয়ে এ যেন এক হাতে একা ছবি।
এইগুলো ছাড়াও আপনি ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, বেলুড় মঠ, কালীঘাট, দক্ষিনেশ্বর কালী মন্দির, ভারতীয় সংগ্রহশালা, প্রিন্সেপ ঘাট ঘুরে দেখতে পারেন।
উত্তর কলকাতায় দ্বিতীয় দিন
মার্বেল প্যালেস-
উনিশ শতকে নির্মিত মার্বেল দিয়ে গঠিত অন্যতম একটি সংরক্ষিত প্রাসাদ। পশ্চিমা ভাস্কর্য এবং ভিক্টোরিয়ান ফার্নিচার সাথে ইউরোপীয় ভারতীয় শিল্পীদের আঁকা ছবির সংমিশ্রণে এই প্রাসাদটি সুসজ্জিত।
হাওড়া ব্রিজ-
পশ্চিমবঙ্গের হুগলি নদীর উপর অবস্থিত বিশ্বে ষষ্ঠতম দীর্ঘ সেতু।
কুমারটুলি-
আর ক’দিন পরেই মর্তে মা দুর্গার আগমন ঘটবে। আর এই আগমনের পেছনে যাদের অবদান সবথেকে বেশি সেই সমস্ত মৃৎশিল্পীদের খুঁজে পাওয়া যায় এই কুমারটুলিতে। এই সমস্ত শিল্পীদের হাতে সৃষ্টি হওয়া শিল্প জীবন্ত হয়ে ওঠে তুলির টানে।
শোভাবাজার রাজবাড়ি-
কলকাতার অন্যতম বনেদি পুজোগুলির মধ্যে একটি শোভাবাজার রাজবাড়ির দুর্গাপুজো।
জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি-
ঠাকুরবাড়ির ইতিহাস সবার কমবেশি জানা। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম ও বেড়ে ওঠার বিভিন্ন রকমের স্মৃতিচিহ্ন এই বাড়িতে লুকিয়ে রয়েছে।এই ঠাকুরবাড়িতে বসন্ত উৎসব খুব জাঁকজমকভাবে প্রতি বছর পালন করা হয়।
এছাড়াও উত্তর কলকাতার নাখোদা মসজিদ, মহাবোধি সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া ঘুরে দেখাই যায়।
খাওয়া-দাওয়ায় তৃতীয় দিন
কলকাতা ঘুরতে এসেছেন আর খাঁটি বাঙালি খাবারের স্বাদ গ্রহণ করবেন না তা কখনও হয়? শুধু বাঙালি খাবারই বা কেন কন্টিনেন্টাল, চাইনিজ, মেক্সিকান, থাই, সি-ফুড সমস্ত খাবারের স্বাদ পাবেন এই কলকাতা শহরে।
কফি হাউজ-
যুবক-যুবতী থেকে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা কলকাতার কফি হাউস কিন্তু সকলের পছন্দের। গরম গরম চায়ের সাথে ফিস কবিরাজিতে কামড় বসালেই মনটা যেন কেমন রোমান্টিক হয়ে ওঠে।
চায়না টাউন-
সুস্বাদু চাইনিজ খাবারের হরেক রকম স্বাদ গ্রহণ করতে তাড়াতাড়ি চলে যেতে হবে চায়না টাউনে।
৬ বালিগঞ্জ প্লেস-
মন ভরে বাঙালি খাবার খাওয়ার জন্য এই জায়গাতে একদম আদর্শ। এখানকার বাঙালি থালিতে লুচি, খাসির মাংস, ছোলার ডাল, ছানার ডালনা, ইলিশ মাছ, চিংড়ি মাছ, মিষ্টি দই দেখার পর যে কোনো কেউ লোভ সামলাতে পারবে না।
মোকাম্ব-
কন্টিনেন্টাল খাবারের জন্য পাক স্টিট এর এই রেস্তোরাঁটি কিন্তু বেশ জনপ্রিয়।
ফিউশন ফ্যান্টাসিয়া-
সামুদ্রিক মাছের সম্ভার এবং সামুদ্রিক খাবারের জন্য এটি কলকাতার সবচেয়ে জনপ্রিয় রেস্তরাঁ।
এবার কলকাতা থেকে একটু দূরে যাবার পালা চতুর্থ দিন
টাকি
শীতকালীন পিকনিকের জন্য অন্যতম একটি জায়গা। কলকাতা থেকে মাত্র ৬৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
মৌসুনি আইল্যান্ড
কাছাকাছি সমুদ্রে আনন্দ উপভোগ করতে চান তাহলে মৌসুনি আইল্যান্ড আপনার জন্য একদম আদর্শ জায়গা। এখানে বিভিন্ন ধরনের পরিযায়ী পাখির খোঁজ মেলে। এছাড়াও সাঁতার কাটা, নৌকা চালানো, মাছ ধরা, ক্যাম্পেইনিং, প্যারাগ্লাইডিং প্রভৃতি সবকিছু করা যায়। কলকাতা থেকে মৌসুনি আইল্যান্ড-এর দূরত্ব ১২০ কিলোমিটার।
বাগুড়ান
কলকাতা থেকে ১৪০ কিলোমিটার দূরে উপকূলীয় জনমানবহীন এই শহরটি অবস্থিত। সমুদ্রসৈকতে উচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে অসংখ্য লাল কাঁকড়ার দেখা পাওয়া যায় জায়গায়।
জুনপুট
ইউক্যালিপটাস গাছ দ্বারা পরিপূর্ণ সমুদ্রসৈকতে বসে উত্তাল ঢেউয়ের আনন্দ উপভোগ করার জায়গা। কলকাতা থেকে ১৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
শংকরপুর
কলকাতা থেকে ১৫৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত শংকরপুর মৎস্য চাষের জন্য বিখ্যাত।