কর্মব্যস্তময় জীবন থেকে দুই-এক দিনের ছুটি পেলে পাহাড়ে ঘুরতে যেতে বড্ড ইচ্ছা হয়।পাহাড়ের কোলে বসে চিৎকার করে নিজের নাম অন্যপাশ থেকে ফিরে আসার অনুভূতি কিন্তু আর অন্য কোথাও হয় না। তবে বার বার দার্জিলিং ঘুরতে যাওয়াটাও বড্ড একঘেয়ে লাগে। তাই একটু অন্যরকম স্বাদ খুঁজে পেতে পাহাড়ের সন্ধান করতে করতে হঠাৎ করে পৌঁছে গেলাম একটু অন্য রকম জায়গায়।
পূর্ব হিমালয়ের পাদদেশে তিন হাজার ফুট উচ্চতায় অস্থিত পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ির মালবাজার সাব ডিভিশনের অন্তর্গত মাটিয়ালী ব্লকের ছোট্ট একটি গ্রাম হল সামসিং, যা শিলিগুড়ি থেকে ৮৩ কিলোমিটার দূরে এবং দার্জিলিং এবং জলপাইগুড়ি জেলার বর্ডারের মাঝখানে এই পার্বত্য অঞ্চলটি অবস্থিত। চারিদিকে পাহাড় আর মাঝখানে বয়ে চলেছে ছোট নদী উপত্যকা, তার পাশেই গড়ে উঠেছে সামসিং।
সামসিং-এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য-
সবুজ কচি পাতার চা বাগানে সজ্জিত সামসিং প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে এক স্বর্গ সমতুল্য। এখানে অবস্থিত খাসমহল ফসল কাটার সময় সোনালি আভায় চারিদিক ভরিয়ে তোলে। গ্রামের মাঝখান দিয়ে বয়ে চলা মূর্তি নদীর জল দু’কূল ছাপিয়ে গিয়ে নতুন প্রাণের জন্ম দেয়। আর ঠিক এই নদীর পাড়ে বসে সূর্যাস্তের সময় আলোকচিত্রপ্রেমীরা তাদের জীবনের সেরা মুহূর্তগুলির ছবিও তুলতে পারে।
তাহলে এবার দেখে নেওয়া যাক ঠিক কী কী কারণে দার্জিলিংয়ের গতানুগতিকতাকে মুক্তি দিয়ে আপনি সামসিং যেতে পারন -
• সামসিং গেলে আপনারা খুব সহজেই নেওরা ভ্যালি ন্যাশনাল পার্কে রিভার ট্রেকিং করতে পারবেন, যা দার্জিলিংয়ের সম্ভব নয়।
• এখানে বিভিন্ন জায়গায় ফরেস্টে এক রাতের জন্য ক্যাম্প করা হয়, যা দার্জিলিংয়ের কোন জায়গায় কেমন দেখতে পাওয়া যায় না।
• সামসিং গ্রামের পৌঁছলে এখানে বাটারফ্লাই ওয়াচিং ট্রেক করা যায়।
• এছাড়াও বিভিন্ন অ্যাডভেঞ্চারের মধ্যে রডোডেনড্রন ফরেস্ট ট্রেকিংও হয়।
• দার্জিলিং-এর আশেপাশের পরিবেশ আপনাকে মুগ্ধ করে তুললেও, সামসিং গ্রামটি নিজেই এক মুগ্ধতার জগৎ। এই গ্রামের গ্রাম্য পরিবেশ প্রত্যেক শহরকেন্দ্রিক মানুষকে একদম খাঁটি বিশুদ্ধ অক্সিজেন প্রদান করে থাকে।
• এই সবকিছুর মধ্যেও এখানকার সবচেয়ে বড় আকর্ষণীয় বিষয়বস্তু হল বড় বড় পাথরের মধ্যে দিয়ে বয়ে চলা নদীর কলকল শব্দ, যা দার্জিলিঙে গিয়ে আপনি কোথাও খুঁজে পাবেন না।
• দার্জিলিং-এর মত জায়গায় গিয়ে কেনাকাটা থেকে যদি নিজেকে একটু মুক্তি দিতে চান, তাহলে সামসিং এসে লালি গুড়াসে পরিবার-পরিজন বা বন্ধুদের সঙ্গে পিকনিক করতে পারেন।
ঘুরতে আসার আদর্শ সময়-
অক্টোবর মাস থেকে ফেব্রুয়ারি মাস।
পথনির্দেশনা-
আকাশপথে- কলকাতা বিমানবন্দর থেকে বাগডোগরা বিমানবন্দরে পৌঁছতে হবে। সেখান থেকে ১৬ কিলোমিটার গেলেই শিলিগুড়ি।
সড়কপথে- বাস বা গাড়ি করে প্রথমে শিলিগুড়ি পৌঁছতে হবে, সেখান থেকে তিন ঘণ্টার পথ সামসিং।
রেলপথে- হাওড়া থেকে প্রথমে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন পৌঁছতে হবে। তারপর সেখান থেকে ৮৩ কিলোমিটার দূরে সামসিং অবস্থিত।