রহস্যে ভরা কোন্নগরের ইতিহাস... 

Tripoto
6th Jul 2021
Photo of রহস্যে ভরা কোন্নগরের ইতিহাস... by Arpan Ghosh
Day 1

দীর্ঘমেয়াদী লকডাউনে গ্যালারি হাতড়ে ধুলো জমে থাকা স্মৃতিদের চাঙ্গা করতে ইচ্ছা হচ্ছে! তাহলে চলুন সৌমিলি বোসের সঙ্গে কোন্নগর থেকে ঘুরে আসা যাক।

সৌমিলি বোস

Photo of Konnagar by Arpan Ghosh

এবছরের শুরুতেই কোন্নগর(হুগলি) বিজ্ঞান মেলার আলোচনা সেমিনারে সৌমিলি বোস যোগ দিয়েছিলেন বক্তা হিসাবে। মূলত পরিবেশ রক্ষা এবং বাস্তুতান্ত্রিক ভারসাম্য নিয়ে টানা ২-৩ ঘন্টা চলেছিল জোরদার আলোচনা। সেই সুযোগে, শীতের মৃদুমন্দ এক বিকেলে শহরটার সাথে পরিচয় করতে বেরিয়ে পড়েছিলেন। আজ ওনার মাধ্যমেই কোন্নগরের ইতিহাসটা জেনে নেওয়া যাক।

কয়েন সংগ্রহশালা

Photo of রহস্যে ভরা কোন্নগরের ইতিহাস... by Arpan Ghosh

কোন্নগর ঐতিহ্যবাহী শহর, পুরোনো উত্তর কলকাতার একটা মৃদু আমেজ উপভোগ করা যায় এই শহরের গলি থেকে রাস্তার বাঁকে বাঁকে। কোন্নগর ডিরোজিওর 'নব্যবঙ্গ'র অন্যতম সদস্য মহাত্মা শিবচন্দ্র দেবের জন্মস্থান। এই শহরের গঠনে তার অবদান সর্বাধিক। শতাব্দী প্রাচীন কোন্নগর উচ্চবিদ্যালয়,বালিকা বিদ্যালয়,পাবলিক লাইব্রেরি অথবা রেলস্টেশন সবার পেছনেই তার অবদান। এই পাঁচশো বাছরেরও প্রাচীন শহর শ্রী অরবিন্দের পৈতৃক ভিটেও বটে। গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ তার পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথের সঙ্গে এখানে এসেছিলেন উনিশ বছর বয়সে। তাছাড়া ছোট্টবেলায় কলকাতায় কলেরার প্রকোপ দেখা দিলেও ছোট্ট রবিকে এই শহরে আনা হয়েছিল।তখন অবশ্য এ শহর সামান্য গ্রামই ছিল এবং কল্পনাপ্রবণ কবিকে মুগ্ধ করেছিল। তাছাড়া বিখ্যাত লেখক শিবরাম চক্রবর্তীও এখানে কিছু বছর ছিলেন।

এবার আসা যাক কোন্নগরের বুকে দাঁড়িয়ে থাকা কিছু প্রাচীন মন্দিরের অলৌকিক দেবীমাহাত্ম্য, তার সঙ্গে জুড়ে থাকা রোমাঞ্চকর ইতিহাস- এর কথায়।

রক্ষাকালী শকুন্তলা মন্দির

Photo of রহস্যে ভরা কোন্নগরের ইতিহাস... by Arpan Ghosh

কোন্নগরের শকুন্তলা রক্ষাকালী পুজো আজও বেশ জনপ্রিয় শহরের মানুষদের কাছে। ১৮৩৬ এর পর যখন ইংরেজ সরকার রেললাইন বসানো শুরু করে, তার পরেও অনেকদিন পর্যন্ত গোটা কোন্নগর নবগ্রাম অঞ্চল ছিল ঘন জঙ্গলে ঢাকা, মাঝখান দিয়ে সরু পায়ে চলা পথ, জঙ্গলে এলাকা ভাগ ভাগ করে বিভিন্ন ডাকাত আর ঠগীদের ডেরা। বৈশাখ মাসের কৃষ্ণা তৃতীয়া বা তার ঠিক পরের শনিবারের রাতে ডাকাতে কালীকে পুজো দিয়ে সারা বছরের ব্যবসা শুরু করত ডাকাত ও ঠগীর দল। মস্ত অশ্বত্থ গাছের নীচে মায়ের থান। পড়ে থাকে রক্তমাখা হাঁড়িকাঠ। গাছের ওপরে বাস করে দলে দলে শকুন, তাই এই থানের আরেক নাম শকুন্তলা মায়ের থান, সেই থেকে মায়ের নামও শকুন্তলা রক্ষাকালী মা। চন্দ্রভূক অমাবস্যার রাতে কেউ বা কারা এসে পুজো দিয়ে যেত, ছাগবলি, মহিষবলি, কখনও কখনও বা নরবলিও দিত মনস্কামনা পূরণের জন্য, তারপর গায়ে রেড়ীর তেল মেখে হাতে লাঠি কিম্বা কাঠারি নিয়ে বেরিয়ে পড়তো ডাকাতিতে।

সেই কাল থেকেই কথিত দেবী সূর্যের মুখ দেখেন না। তাই নিয়ম মতো মূর্তি বানানো হয় সূর্যাস্তের পর, দ্বিতীয় প্রহর শেষ হলে পুজো শুরু আর সূর্যোদয়ের আগেই দেবীর বিসর্জন দেওয়া হয়।দেবীর মূর্তি গঠনেও এক তারতম্য আছে, মাটিতে দুধ ও দেশী মদ মিশিয়ে মূর্তি তৈরি হয়।

আজও মন্দির চত্বরে হেঁটে গেলে রীতিমতো শিহরিত হতে হয়।

রাজরাজেশ্বরী মন্দির

Photo of রহস্যে ভরা কোন্নগরের ইতিহাস... by Arpan Ghosh

কোন্নগরের ঐতিহ্যবাহী রাজরাজেশ্বরী পুজো আজও পালিত হয়ে আসছে মহাসমারোহে। ৩২০ বছরের পুরানো এই পুজোকে কেন্দ্র করে স্থানীয় মানুষ তথা আশপাশের এলাকার মানুষদের মধ্যে উৎসাহ চোখে পড়ার মতো। প্রত্যেক বছর মাঘী পূর্ণিমা তিথিতে মহাসমারোহে পালিত হয় এই রাজরাজেশ্বরী পুজো। পুজো উপলক্ষ্যে চারদিন উৎসবের আবহে মেতে ওঠে কোন্নগর অঞ্চল। পুজোকে কেন্দ্র করে এই চারদিন নানা অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। চলে ভোগ বিতরণ, মালসা ভোগের ব্যবস্থাও থাকে। আর রাজরাজেশ্বরী পুজো উপলক্ষ্যে চলে মেলা। পুজো চারদিনের হলেও মেলা চলে একসপ্তাহ ধরে পুজোর ইতিহাস কিন্তু বহু প্রাচীন। সেই ইতিহাস জানতে আমাদের ফিরে যেতে হবে তিন শতাব্দী আগের কোন্নগরে। সপ্তদশ শতকের মাঝামাঝি একসময় কোন্নগর-এর বিখ্যাত ঘোষাল পরিবারের এক কর্তার কাছে এক সাধু এসে উপস্থিত হন। সাধু ঘোষাল কর্তাকে গঙ্গাতীরে এক স্থানে নিয়ে যান এবং জানান যে মা রাজরাজেশ্বরী তাকে স্বপ্ন দেখিয়েছেন, গঙ্গাতীর থেকে উঠে এসে তিনি এই স্থানে পূজিত হতে চান।

সাধু ঘোষাল কর্তাকে দেবীর রূপ ও বর্ণনা করে দেন। ঘোষাল কর্তা এই ঘটনা শোনার সঙ্গে সঙ্গে পার্শ্ববর্তী নওপাড়া গ্রামে পন্ডিতদের কাছে লোক পাঠান। নওপাড়া ছিল সেই সময় পন্ডিত অধ্যুষিত। সেখান থেকে শ্রেষ্ঠ পন্ডিত মণ্ডলী সেই মাঠে উপস্থিত হয়ে ঘোষাল কর্তার কাছে সমস্ত ঘটনা শুনে , দেবী পূজার বিধান দেন। যেদিন পণ্ডিত গণবিধান দেন সেদিন ছিল শ্রীপঞ্চমীর দিন, শাস্ত্র মেনে সেদিন দেবী কাঠামো নির্মাণ শুরু হয় এবং মাঘী পূর্ণিমার দিন হয় দেবী পুজো। ১১০৭ বঙ্গাব্দে কোন্নগর এ রাজরাজেশ্বরী পুজোর প্রবর্তন হয়। রীতি মেনে সেই পুজো আজও চলছে।

রাজরাজেশ্বরী বিগ্রহ দেখতে খুবই সুন্দর। দেবীর পদতলে শায়িত মহাদেব, দুই পাশে জয়া বিজয়া, চতুর্ভুজা দেবীর হাতে রয়েছে তীর , ধনুক , বজ্র ও সর্প। কাঠামোর নীচের দিকে ত্রিদেব অর্থাৎ ব্রহ্মা বিষ্ণু মহেশ্বরকে বসা অবস্থায় দেখা যায়।

রাজরাজেশ্বরী পুজো প্রথমে পারিবারিক ভিত্তিক হলেও পরবর্তী কালে ইংরেজি ১৯২২ খ্রীঃ থেকে এই পুজো সার্বজনীন হয়ে যায়। শক্তি পুজোর বহু নির্দশন এই জেলা জুড়ে রয়েছে কিন্তু মাঘী পূর্ণিমার এই বিশেষ দিনে ৩২০ বছর ধরে সাড়ম্বরে শক্তির আরাধনার নিদর্শন এই জেলায় আর নেই। সেই দিক থেকে কোন্নগর এর রাজরাজেশ্বরী অনন্য।

এমনই বহু লোককথা,জনশ্রুতি প্রচলিত হয়ে আছে কোন্নগরের মাটিতে, যা শুনে বিস্ময়াবিষ্ট হতে হয় এক অদ্ভুত রোমাঞ্চে!

পানিহাটি ফেরিঘাট

Photo of রহস্যে ভরা কোন্নগরের ইতিহাস... by Arpan Ghosh

দিনশেষে যখন পানিহাটি ফেরিঘাটে লঞ্চে করে গঙ্গা পেরোবেন, তখন মনে হবে ওপারের শান্ত শহরটার খাঁজে খাঁজে লুকিয়ে রয়েছে আরো কত না বলা কথা, তাই হয়তো পতিতপাবনী গঙ্গাও কোন্নগরের চরণস্পর্শ করছে নীরব শ্রদ্ধায়!

পানিহাটি গঙ্গা

Photo of রহস্যে ভরা কোন্নগরের ইতিহাস... by Arpan Ghosh

নিজের বেড়ানোর অভিজ্ঞতা ট্রিপোটোর সঙ্গে ভাগ করে নিন আর সারা বিশ্ব জুড়ে অসংখ্য পর্যটকদের অনুপ্রাণিত করুন।

বিনামূল্যে বেড়াতে যেতে চান? ক্রেডিট জমা করুন আর ট্রিপোটোর হোটেল স্টে আর ভেকেশন প্যাকেজে সেগুলো ব্যবহার করুন।

Further Reads