কোভিড পরিস্থিতির কারণে বহুদিন ধরে আন্তর্জাতিক ভ্রমণের ওপর রয়েছে নানারকম নিষেধাজ্ঞা। বিধ্বংসী দ্বিতীয় ওয়েভের পর বর্তমানে আস্তে আস্তে উঠতে শুরু করেছে লকডাউন এবং সেই সংক্রান্ত বিভিন্ন নিয়মাবলী। আন্তর্জাতিক ট্র্যাভেলের ক্ষেত্রেও বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ভারতবর্ষের নাগরিকদের জন্যে রয়েছে বিশেষ কিছু নিয়ম। আসুন দেখে নেওয়া যাক কোন দেশে যাওয়ার জন্যে কী কী শর্তাবলী আরোপ করা হয়েছে আমাদের উপর।
ভ্যাক্সিন - কোভ্যাক্সিন না কোভিশিল্ড
আন্তর্জাতিক ভ্রমণের ক্ষেত্রে বর্তমানে শুধুমাত্র ওয়ার্ল্ড হেল্থ অর্গানাইজেশন বা হু দ্বারা মান্যতাপ্রাপ্ত ভ্যাক্সিনগুলিকে স্বীকৃত করা হয়েছে। বর্তমানে ভারতবর্ষে কোভ্যাক্সিন, কোভিশিল্ড এবং স্পুটনিক ভ্যাক্সিন দেওয়া হচ্ছে, যার মধ্যে শুধুমাত্র কোভিশিল্ড ভ্যাক্সিন হু দ্বারা স্বীকৃত। অর্থাৎ আন্তর্জাতিক ভ্রমণ করতে চাইলে শুধুমাত্র কোভিশিল্ড ভ্যাক্সিন নেওয়া থাকলে তবেই অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। কোভ্যাক্সিন বা স্পুটনিক হু দ্বারা স্বীকৃত না হওয়া পর্যন্ত, যে সকল ব্যক্তি সেইসব ভ্যাক্সিন নিয়েছেন, তাঁদের আন্তর্জাতিক স্তরে ভ্রমণ করতে নাও দেওয়া হতে পারে।
কো উইন সার্টিফিকেট
উল্লেখযোগ্য, আন্তর্জাতিক ভ্রমণের ক্ষেত্রে কো উইন ওয়েবসাইট থেকে যে শংসাপত্র পাওয়া যাচ্ছে, তাতে থাকতে হবে পাসপোর্ট নম্বর। অধিকাংশ নাগরিকদের কো উইন সার্টিফিকেটে রয়েছে আধার কার্ডের তথ্য। তবে ভয়ের কিছু নেই, কো উইন ওয়েবসাইট থেকে ইচ্ছে মতো আধার কার্ড ডিটেলের পরিবর্তে পাসপোর্ট ডিটেল দিয়ে নতুন সার্টিফিকেট তৈরি করে ডাউনলোড করা যাচ্ছে।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক ডেস্টিনেশন দ্বারা ভারতীয় পর্যটকদের উপর আরোপিত বিধিনিষেধ
বর্তমানে আন্তর্জাতিক ট্র্যাভেলের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে বিশেষ কিছু ব্যক্তিদের। ওয়ার্ক বা স্টুডেন্ট ভিসা থাকলে, অর্থাৎ উচ্চশিক্ষা বা কর্মসংক্রান্ত কাজে গেলে নিষেধাজ্ঞা একটু শিথিল। ডিপ্লোম্যাটিক বা হিউম্যানিটারিয়ান কাজেও পাবেন অগ্রাধিকার।
ইউনাইটেড কিংডম : ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড বা নর্দান আয়ারল্যান্ডে যাওয়ার ক্ষেত্রে ভারতবর্ষকে রেড লিস্টে রাখা হয়েছে। অর্থাৎ ভারতবর্ষ থেকে ভ্রমণ করলে সকল পর্যটকদের ১০ দিনের জন্যে বাধ্যতামূলক হোটেল কোয়ারেন্টাইন করতে হবে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র : বর্তমানে ভারতবর্ষ থেকে আমেরিকার ডাইরেক্ট ফ্লাইট চলছে, কিন্তু শুধুমাত্র স্টুডেন্ট, ডিপ্লোম্যাট বা জার্নালিস্ট ভিসা হোল্ডারদের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। উড়ানে ওঠার আগে এবং নামার পরে করতে হবে কোভিড টেস্ট।
মালদ্বীপ : ৯৬ ঘণ্টার মধ্যে যদি করানো আর.টি.পি.সি.আর রিপোর্ট যদি হয় নেগেটিভ, তাহলে এইমুহূর্তে আপনিও মালদ্বীপ যেতে পারেন। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যে কয়েকটি অল্পসংখ্যক দেশ ভারতবাসীদের স্বাগত জানাচ্ছে, তাদের মধ্যে মালদ্বীপ অন্যতম।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন : অস্ট্রিয়া, এস্তোনিয়া, জার্মানি, গ্রিস, আইসল্যান্ড, স্লেভেনিয়া, স্পেন এবং সুইজারল্যান্ড - এই দেশ গুলিতে ভ্রমণ করতে চাইলে বর্তমানে কোভিশিল্ড সার্টিফিকেট গণ্য করা হচ্ছে। ই.ইউ-এর বাকি দেশগুলিতে এখনো ভারতীয় ভ্যাকসিনগুলিকে ট্র্যাভেল পারমিশন দেওয়া হয়নি। তবে পরিস্থিতি পরিবর্তনশীল এবং আশা করা হচ্ছে এই দেশগুলিতেও অচিরেই অনুমতি পাওয়া যাবে।
সাউথ ইস্ট এশিয়ার বিভিন্ন দেশ যথা ইন্দোনেশিয়া, হং কং বা সিঙ্গাপুরে বর্তমানে ভারতীয়দের ট্র্যাভেল অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া বা জার্মানির মতো দেশের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। আশা করা হচ্ছে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে এবং আন্তর্জাতিক ট্র্যাভেলের নিয়মাবলী অনেকাংশেই শিথিল হবে।
বিশেষ দ্রষ্টব্য : উপরে উল্লেখিত তথ্যগুলি, আন্তর্জাতিক স্তরে যে কোনও সময়ে পরিবর্তিত হতে পারে। আন্তর্জাতিক ভ্রমণের পূর্বে ভাল করে সেই সময়ের নিয়মাবলীগুলি দেখে নিন এবং সুস্থ ভাবে ভ্রমণ করবেন। আশা করি আপনার যাত্রা শুভ হবে।