ওডিশা ভ্রমণের সূত্রে অনেকেরই ভারতের পূর্ব উপকূলবর্তী এই হ্রদটি সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা হয়ে থাকবে... কথা হচ্ছে 'চিল্কা' হ্রদকে নিয়ে। চিল্কা মূলত ইষৎ লবণাক্ত জলের একটি উপহ্রদ, যা ভারতের পূর্ব উপকূলের ওডিশা রাজ্যের পুরী, খুরদা এবং গানজাম জেলা পর্যন্ত বিস্তৃত। চিল্কার অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্যই হল এর অন্যন্য সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশ। নিরিবিলি শান্ত-স্নিগ্ধ এই হ্রদের সৌন্দর্য যথেষ্ট আকর্ষণীয়, একইসঙ্গে পর্যটকদেরও অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু বলা যায়। সম্প্রতি ইউনেস্কো কর্তৃক প্রকাশিত ভারতের মধ্যে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানসমূহের তালিকাতে চিল্কা হ্রদকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই প্রসঙ্গে অবশ্য উল্লেখ্য যে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং ভারতের বৃহত্তম সামুদ্রিক হ্রদের তালিকাতে রয়েছে চিল্কার নাম।
ভৌগোলিক এবং বাহ্যিক পরিসংখ্যানগত দিক থেকে বিচার করলে বলতে হবে হ্রদটি লম্বায় প্রায় ৪০ মাইল দীর্ঘ, আয়তন প্রায় ১১০০ বর্গকিমি। হ্রদটি 'দয়া' নামের একটি সরু নদীর মধ্যে দিয়ে শেষপর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে গিয়ে মিশেছে।
চিল্কা হ্রদ একটি অন্য কারণেও বিশেষভাবে প্রসিদ্ধ মূলত এই হ্রদের প্রাকৃতিক পরিবেশ। ফোটোগ্রাফির প্রতি যাদের শখ বা ইচ্ছা রয়েছে তারা বিনা সংশয়ে চলে যেতে পারেন এই হ্রদের কাছাকাছি। পরিযায়ী বিভিন্ন পাখির পাশাপাশি আপনার সাক্ষাৎ ঘটতে পারে বিভিন্ন জলজ প্রাণী, শিকারি পাখির সঙ্গেও... করোনা মহামারীর এই সংকটজনক পরিস্থিতিতে অত্যন্ত আশার কথা যে, পরিবেশ দূষণের পরিমাণ কম হওয়ার দরুণ চিল্কা হ্রদে ডলফিনের সংখ্যা বেড়েছে। সুতরাং, যারা সামুদ্রিক প্রাণী নিয়ে চর্চা করতে এবং একইসঙ্গে সামুদ্রিক প্রাণীদের সঙ্গে সখ্যতা বাড়াতে চান, তারা অবশ্যই একবার ঢুঁ মারতে পারেন এই অঞ্চলে...
পৌঁছবেন কীভাবে
বিমানপথে- চিল্কার নিকটতম বিমানবন্দরটি ভুবনেশ্বরে অবস্থিত। সুতরাং, চিল্কা পৌঁছতে গেলে আপনাকে এই বিমানবন্দরেই নামতে হবে। স্থানীয় ক্যাব বা গাড়ি ভাড়া করে নিতে পারেন এরপরে।
রেলপথে- কলকাতা-চেন্নাই রেলপথের মাধ্যমে আপনি সহজেই চিল্কা পৌঁছতে পারবেন।
সড়কপথে- চেন্নাই-ন্যাশনাল হাইওয়ে নম্বর-৫ সড়কপথটি কলকাতা, কটক এবং বিশাখাপত্তনমকে সংযুক্ত করেছে। সড়কপথে যেতে চাইলে আপনি অনায়াসেই এই পথটির সাহায্য নিতে পারেন।
চিল্কার অন্যতম আকর্ষণ
নৌকা করে চিল্কা ভ্রমণ- এই প্রসঙ্গে বলে রাখা প্রয়োজন পাখিদের অভয়ারণ্যে বাইরের বোর্টের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও কিন্তু স্থানীয় নৌকার সাহায্যে আপনি অনায়াসেই চিল্কা হ্রদের ভিতরে প্রবেশ করতে পারবেন। এছাড়া আপনি ওডিশা পর্যটক উন্নয়ন কর্পোরেশনের বোর্টগুলিরও সাহায্য নিতে পারেন। নৌ এবং মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের মানুষজন হ্রদে মাছ ধরার পাশাপাশি পর্যটকদের জন্য বিশেষ বোর্ট চালিয়েও রুজি রোজগারের পথটুকু বেছে নিয়ে থাকেন। প্রতিটি বোর্ট পিছু তারা নিয়ে থাকেন প্রায় ২০০০ টাকা।
লাল কাঁকড়ার সন্ধান- বোর্টে বা স্থানীয় নৌকা করে চিল্কার মধ্যে দিয়ে যাওয়ার সময়ে আপনি দেখতে পাবেন স্থানীয় এলাকার মানুষদের মাছ-কাঁকড়া এবং অন্যান্য জলজ প্রাণী সংগ্রহের কৌশল। মৎস্যজীবীদের জালে সদ্য পড়া লাল কাঁকড়ার সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করতে পারে। আবার আপনি কিঞ্চিত অবাকও হতে পারেন।
ঝিনুকে পেতে পারেন মুক্তো- জালের মধ্যে ধরা পড়া বহুবিধ ঝিনুকে আপনি সন্ধান পেতে পারেন নানা রং-এর মুক্তোরও। প্রসেসিং ছাড়া মুক্তোর আসল চেহারা দেখতে এবং জানতে আপনাকে অবশ্যই স্থানীয়দের সাহায্য নিতে হবে। ক্যামেরার শাটারে ক্লিক করতে ভুলবেন না যেন এই ক্ষেত্রে।
জলজ প্রাণী এবং পাখিদের সৌন্দর্য- চিল্কা হ্রদ জুড়ে এলোমেলোভাবে ছড়ানো রয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ছোঁয়া... আপনি বেশ অনায়াসেই মধ্যে মধ্যে দেখতে পাবেন জলজ প্রাণী ডলফিনের বিচিত্র নৃত্য, দেখতে পাবেন সারস, বক পাখির চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্য। ভাগ্য ভাল থাকলে সোর বার্ডস বা জলকাটা পাখি বা অন্যান্য বিভিন্ন পাখির সন্ধান মিলতে পারে।
চিল্কা ভ্রমণের পাশাপাশি অন্যান্য দ্বীপে ভ্রমণ- আপনি চিল্কা ভ্রমণের সঙ্গে সঙ্গে আশপাশের বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে দেখতে পারেন... কালিজাই দ্বীপ, স্মল আইল্যান্ড এবং মঙ্গলাজোড়ি এই প্রসঙ্গে অবশ্যই উল্লেখযোগ্য।