বর্ণময় ভারতের প্রকৃতির মধ্যে রয়েছে নানান রূপসজ্জা । তুষারশুভ্র হিমালয় কিংবা দক্ষিণে সাগরের শোভা আমাদের সকলকেই মুগ্ধ করে । তবে ভারতে পর্যটনের ক্ষেত্রে ম্যানগ্রোভ অরণ্য নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে । তাই কিছুদিনের ছুটি নিয়ে ভারতের ম্যানগ্রোভ অরণ্যগুলির সঙ্গে আলাপচারিতা সেরে নিতে পারেন ।
ম্যানগ্রোভ অরণ্য কী?
উপকূলবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত ছোট ছোট গাছের সমাহার হলো ম্যানগ্রোভ অরণ্য । এই অরণ্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল - এই গাছগুলি কার্বন সংরক্ষণ করে উপকূলীয় অঞ্চলের বাস্তুতন্ত্রের সামঞ্জস্যতাকে রক্ষা করে ।
ভারতের বিখ্যাত ম্যানগ্রোভ অঞ্চল:
ম্যানগ্রোভ অরণ্য প্রসঙ্গে আলোচনা শুরু করলে সুন্দরবনের কথা না বললেই নয় । গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, মেঘনা এবং বঙ্গোপসাগরের সংযোগস্থলে গড়ে ওঠা এই ম্যানগ্রোভ অরণ্যটি বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ অরণ্য হিসেবে পরিচিত । এই ম্যানগ্রোভ অঞ্চলটি বহু লুপ্তপ্রায় উদ্ভিদ এবং প্রাণের মূল বাসস্থান । তবে সুন্দরবন ভ্রমণের মূল উদ্দেশ্যে হল - রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার।
দর্শনীয় স্থান - সুন্দরবনের দর্শনীয় স্থানগুলি হল - সুধন্যখালি, সজনেখালি, সুন্দরবন ন্যাশনাল পার্ক, ইত্যাদি ।
কীভাবে যাবেন?
বিমানে - কলকাতা বিমানবন্দর থেকে গাড়ি ধরে ৯৫ কিমি দূরত্ব অতিক্রম করে পৌঁছে যান গদখালী। সেখান থেকে নৌকা ভাড়া করে ঘুরে নিতে পারেন সমগ্র সুন্দরবন অঞ্চল ।
ট্রেনে - ভারতের যেকোনো শহর থেকে পৌঁছে যান কলকাতার শিয়ালদহ স্টেশন । সেখান থেকে ক্যানিং লোকাল ট্রেন ধরে পৌঁছে যান ক্যানিং । এরপর গাড়ি ভাড়া করে পৌঁছে যান গদখালি ।
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ অরণ্যটি হল - পিছাভরম ম্যানগ্রোভ অরণ্য। এই ম্যানগ্রোভ অরণ্যটি মূলত ভেল্লার এবং কলেরুন নদীর সংযোগস্থলে গড়ে উঠেছে ।এই ম্যানগ্রোভ অরণ্য থেকে প্রকৃতির অসাধারণ দৃশ্যপটের সাক্ষী থাকতে পারেন । নৌকাযাত্রা করে প্রায় ১১০০ হেক্টর এরিয়া ম্যানগ্রোভ অঞ্চল পরিদর্শন করে নিতে পারেন।
দর্শনীয় স্থান - ম্যানগ্রোভ অরণ্য দর্শন করা ছাড়াও মন্দির শহর চিদাম্বরম, ম্যানগ্রোভ অরণ্যের অদূরে বঙ্গপোসাগর দর্শন করে নিতে পারেন ।
কীভাবে যাবেন?
ভারতের যে কোনও শহর থেকে পৌঁছে যান পন্ডিচেরি।সেখান থেকে বাস বা গাড়ি চেপে পৌঁছে যান চিদাম্বরম । চিদাম্বরম থেকে বাসে ৩০ - ৪৫ কিমি দূরত্ব অতিক্রম করে পৌঁছে যান পিছাভরম । এখান থেকে সম্পূর্ণ ম্যানগ্রোভ অরণ্য ভ্রমণ করার জন্য নৌকাভাড়া করে নিতে পারেন ।
গোদাবরী এবং কৃষ্ণা নদীর ব-দ্বীপ অঞ্চলে গড়ে উঠেছে গোদাবরী- কৃষ্ণা বা করিঙ্গা ম্যানগ্রোভ অরণ্য । এটি ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ অঞ্চল হিসেবে পরিচিত । অন্ধ্রপ্রদেশে অবস্থিত এই ম্যানগ্রোভ অঞ্চলটি ও বহু লুপ্তপ্রায় প্রাণের প্রধান বাসস্থান ।
দর্শনীয় স্থান - প্রকৃতি এবং ম্যানগ্রোভ অরণ্যের সাথে পরিচয় করার জন্য এই স্থানটি আদর্শ ।এখানে আপনি লুপ্ত প্রায় কচ্ছপের দেখা পাবেন । এছাড়াও করিঙ্গা সাংকচুয়ারি ভ্রমণ করে নিতে পারেন ।
কীভাবে যাবেন?
ভারতের যে কোনও শহর থেকে পৌঁছে যান অন্ধ্রপ্রদেশের কাকিনাদা শহরে । সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে ১৫কিমি দূরত্ব অতিক্রম করে পৌঁছে যান গন্তব্যে ।
প্রায় ৬৫০ বর্গ কিমি অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত এই ম্যানগ্রোভ অরণ্যটি জলজ প্রাণীদের প্রধান আস্তানা । এই ম্যানগ্রোভ অরণ্যটি ব্রাহ্মনী এবং বৈতরণী নদীর সংযোগ স্থলে গড়ে উঠেছে । এখানে মোট ৬২টি প্রজাতির উদ্ভিদের দেখা পাওয়া যায় ।
দর্শনীয় স্থান - ম্যানগ্রোভ দর্শন ছাড়াও এখানে আপনি অলিভ রিডলে নামক লুপ্তপ্রায় সামদ্রিক কচ্ছপের দেখা পাবেন । এছাড়া ভিতরকণিকা ন্যাশনাল পার্ক দর্শন করে নিতে পারেন ।
কীভাবে যাবেন?
ভারতের যে কোনও শহর থেকে পৌঁছে যান ওড়িশার ভদ্রকে । সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে পৌঁছে যান চাঁদবালি নদী বন্দর । এই পোর্ট থেকে নৌকা চেপে সম্পূর্ণ ভিতরকণিকা দর্শন করে নিতে পারেন ।
ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট দর্শনের অভিজ্ঞতাটা ঠিক কতটা রোমাঞ্চকর হল কমেন্ট করে লিখে জানাতে কিন্তু ভুলবেন না ।