শৈলশহর ডালহৌসি, হিমাচল প্রদেশের এই ছবির মতো সুন্দর, স্ফটিকের মতো স্বচ্ছ জায়গাটির নামকরণ হয়েছিল ব্রিটিশ গভর্নর জেনারেল লর্ড ডালহৌসির নামানুযায়ী। হিমাচল প্রদেশের এই সুন্দর গোছানো শহরটিকে ব্রিটিশরা সাজিয়ে তুলেছিলেন তাদের ছুটি কাটানোর স্থান হিসেবে। তাই ডালহৌসির অলিতে গলিতে আজও এক হারানো কোলোনিয়াল ছোঁয়া রয়ে গেছে। দেখে নেওয়া যাক, আর কী কী আছে পর্যটকদের জন্যে আমাদের ডালহৌসির বুকে।
খাজজিয়ার
ভারতবর্ষের মিনি সুইজারল্যান্ড নামে পরিচিত এই ছোট্ট শহরটি ডালহৌসি থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ঘুরে আসতে পারেন খাজজিয়ার লেক বা দ্বাদশ শতাব্দীতে স্থাপিত খাজি নাগের মন্দির থেকে। প্রকৃতির মধ্যে পাইন, দেবদারু গাছেদের সংস্পর্শে সত্যি এক অপরূপ জায়গা।
ডালহৌসি থেকে অল্প দূরত্বের মধ্যেই আরেক শৈলশহর সুভাষ বাওলি। কিন্তু সুভাষ বাওলির গরিমা জড়িয়ে রয়েছে বাংলার আপন সুভাষ চন্দ্র বোসের সঙ্গে। ১৯৩৭ সালে ছুটি কাটাতে এখানেই এসে কিছুদিন ছিলেন তিনি। বর্তমানে এখানের ছুটি কাটানোর সঙ্গে সঙ্গে দেখে নিতে পারেন আসে পাশের বিভিন্ন জলপ্রপাতগুলিও।
যদি ট্রেকিং, নেচার ওয়াক বা ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফির প্রতি থাকে উৎসাহ, তাহলে ২৫০ টাকা খরচ করে চলে আসতে পারেন কালাটপ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্রে। প্রায় ২৫০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত ৩১ বর্গ কিলোমিটার অঞ্চল জুড়ে অবস্থিত বিশাল এই অরণ্যে পাবেন হিমালয়ের বিভিন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতির দেখা। কালাটপ ফরেস্ট রেস্ট হাউসে ইচ্ছে হলে কাটাতে পারেন একরাত, জঙ্গলের সান্নিধ্যে।
ডাইনকুণ্ড চূড়া
যদি ডালহৌসির ব্রিটিশ ক্যাফে, রাস্তাঘাট, আর মার্কেট ছাড়িয়ে খোঁজ পেতে চান প্রকৃতির আরও কাছাকাছি, তাহলে চলে আসতে পারেন ডাইনকুণ্ড পাহাড়ের উদ্দ্যেশে। করতে পারবেন, ট্রেকিং, হাইকিং এমনকি ক্যাম্পিং অবধি। ২৭৪৫ ফিট উঁচু এই পর্বতকে স্থানীয়রা বলেন সঙ্গীতের পাহাড়। করবেন নাকি নামকরণের রহস্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা?
ডালহৌসি থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার খাড়াই ট্রেক বেয়ে উপরে উঠলে আপনি এসে পৌঁছাবেন গঞ্জি পাহাড়ি বা ন্যাড়া পাহাড়ের চূড়ায়। হিমালয়ের বারকোটা পর্বতমালার উপরের এই অংশে কোনও গাছপালা না থাকার কারণে এই রকম নাম। আবার গাছ পালা না থাকার কারণেই পাবেন এখন থেকে চারিপাশের সমগ্র উপত্যকার দারুন ভিউ। সবাইকে নিয়ে পিকনিক করার জন্যে এ এক আদর্শ জায়গা।
গঞ্জি পাহাড়ি থেকে অল্প দূরত্বের মধ্যেই রয়েছে পাঁচপুলা বা পঞ্চ পুলা। চারিপাশে অদম্য পাহাড়ি ঝরণা, ঘন পাইনের জঙ্গল, আর মাঝে মাঝে চোখ ধাঁধিয়ে দেওয়া ভিউ পয়েন্টস। এখন থেকে দেখে আসতে পারেন সাতধারা প্রস্রবণ বা পাঁচপুলা জলপ্রপাত। ডালহৌসি এবং তার আশেপাশের গ্রামগুলির জলসরবরাহ হয় এখান থেকেই।
যদি থাকে অ্যাডভেঞ্চারের শখ, তাহলে চলে আসতে পারেন চামেরা বাঁধের পাশে তৈরি চামেরা জলাধারে। ডালহৌসির উপকণ্ঠে অবস্থিত এই শান্ত নিরিবিলি স্থানে চলে যান পরিবার, বন্ধু, বা প্রিয়জনের সঙ্গে। লেকের জলে বোটিং বা শিকারায়ে বিশ্রামেরও সুব্যবস্থা আছে।
শেষ পাতে থাক একটু উষ্ণতার ছোঁয়া। ডালহৌসি টাউনের মধ্যে গান্ধী চক থেকে সুভাষ চকে যাওয়ার রাস্তায় সবসময় দেখা পাওয়া যায় সূর্যালোকের। ডাইরেক্ট সানলাইটের কারণে আবহাওয়া এখানে থাকে কনকনে শীতেও একটু উষ্ণ। রাস্তা জুড়ে রয়েছে নানান রেস্টুরেন্ট এবং শপিং করার জায়গা। চারপাশে দেখতে পাবেন টিবেতান রক পেন্টিং-এর ও নিদর্শন।