শিখদের প্রধান ধর্মস্থান অমৃতসরের স্বর্ণমন্দির সঙ্গে আমরা সকলেই পরিচিত । কিন্তু আপনি কি জানেন? স্বর্ণ মন্দিরের অমৃত সরোবর নামটি কেন্দ্র করেই এই শহরের নামকরণ করা হয় অমৃতসর ।
দর্শকদের আকর্ষণবিন্দু অমৃতসরের স্বর্ণমন্দির
১৫৭৭ সালে চতুর্থ শিখ গুরু, গুরু রাম দাস এখানে গুরুদ্বারা নির্মাণ করেন ।পরবর্তীকালে মহারাজা রঞ্জিত সিং ১৮৩০ সালে সোনার আভরণে এই মন্দিরটিকে পুনঃনির্মাণ করেন। এরপর থেকেই এই মন্দিরটি স্বর্ণ মন্দির আখ্যায় ভূষিত হয় ।
এই বিখ্যাত স্বর্ণ মন্দির তথা হরমন্দির সাহিব দর্শনের জন্য প্রতি সপ্তাহে প্রায় ১লাখ দর্শণার্থীর আগমন হয় ।এছাড়াও সারাবছরই বিশ্বের সমগ্র অঞ্চল থেকে শিখ ধর্মপ্রাণ মানুষ এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বী মানুষও এই মন্দির দর্শনে আসেন । তবে এই মন্দিরে প্রধান বৈশিষ্ট্য হল - জাতি,ধর্ম বিভাজনকে দূরে সরিয়ে রেখে সকল মানুষের জন্য লঙ্গরের ব্যবস্থা রয়েছে। শিখরা মনে করেন সেবাই হল পরম ধর্ম ; তাই এখানকার সমস্ত ধর্মপ্রাণ মানুষ স্বেচ্ছায় বাসন-পত্র ধোয়া, জল পরিবেশন, এমনকি ভক্তদের জুতো পরিষ্কারের কাজ অর্থাৎ কার্সেওয়ায় নিজেদের নিয়োজিত করেন । তবে স্বর্ণ মন্দির সম্পর্কে বিশদ ধারণা থাকলেও, মন্দির সংলগ্ন জলাশয়ের প্রাচীন কাহিনি অনেকের কাছেই অজানা ।
অমৃত সরোবরের পৌরাণিক এবং লৌকিক কাহিনি
স্থানীয় মানুষের বিশ্বাস, উত্তর ভারতের এই শহরটিতে রামায়ণের রচয়িতা মহর্ষি বাল্মীকি বসবাস করতেন । শোনা যায়, অমৃত সরোবরের নিকটেই তাঁর আদি বাসস্থান ছিল ।পুরাণ অনুযায়ী, বনবাসের সময় সীতাও এই অমৃত সরোবরের নিকটবর্তী অঞ্চলেই বসবাস করতেন ।
একদা অশ্বমেধ যজ্ঞের পর রামচন্দ্র পুত্র লব এবং কুশ শক্তিশালী হয়ে ওঠেন। তাঁরা যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে তাদের পিতার বিশাল সৈন্যবাহিনীকে পরাস্ত করেন এবং এই যুদ্ধে লক্ষ্মণ, ভরত, শত্রুঘ্ন মৃত্যু বরণ করেন । কথিত আছে,সেই সময় রামচন্দ্র এর তিন ভাইয়ের দেহ এই অমৃত সরোবরে নিমজ্জিত করা হলে, তাঁরা আবার তাঁদের জীবন ফিরে পান ।
এই ঘটনার পরই বিশ্বাস করা হয়, যে সমস্ত ভক্তগণ এই সরোবরে ডুব দিয়েছেন তাঁরা পুনঃজীবন ফিরে পেয়েছেন এবং অমরত্ব লাভ করেছেন ।
অমৃত সরোবর প্রসঙ্গে কিছু তথ্য
১. অমৃত সরোবরে প্রায় ১৬ -১৭ ফিট গভীর, নির্মাণকালে এখানে কোনোরকম সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়নি । চুন এবং নানকশাহী ইটের গাঁথুনি দ্বারা অমৃত সরোবরের প্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছে।
২. এই সরোবরটিতে প্রায় ৩১,০০০ গ্যালন জলধারণের ক্ষমতা রয়েছে ।একসময় এই সরোবরটি বৃষ্টির জলের উপর নির্ভরশীল ছিল, তাই গ্রীষ্মকালে প্রায় শুষ্ক থাকত । ব্রিটিশ শাসনকালে আধুনিক প্রযুক্তির দ্বারা রবি নদীর দোয়াব খালের সংযুক্তিকরণের ফলে সারাবছর এই সরোবরটি জলে পরিপূর্ণ থাকে ।
৩. ২০০৪ সালে ভক্তদের অনুদানের সাহায্যে এই সরোবরের জল শুদ্ধিকরণের পরিকল্পনা করা হয় এবং সেই কারণে এখানে ফিল্টারেশন প্লান্ট নির্মাণ করা হয় ।
কীভাবে যাবেন
বিমানে - কলকাতা থেকে বিমান ভাড়া করে পৌঁছে যান শ্রী গুরু রাম দাস ইন্টারন্যাশনাল বিমানবন্দর । বিমানবন্দর থেকে গাড়ি ভাড়া করে ১৭ মিনিট দূরত্ব অতিক্রম করে পৌঁছে যেতে পারেন স্বর্ণমন্দির ।
ট্রেনে - হাওড়া স্টেশন থেকে অমৃতসরগামী ট্রেনে চেপে ৩৪ ঘণ্টা দূরত্ব অতিক্রম করে পৌঁছে যেতে পারেন গন্তব্যে ।
আপনার ও যদি পুল অফ নেক্টর বা অমৃত সরোবরের এমন আরও অজানা তথ্য জানা থাকে তাহলে নিচে কমেন্ট করে আমাদের জানান ।