ভারতবর্ষের পর্যটন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে অন্যতম ভ্রমণ কেন্দ্র হল তামিলনাড়ু,যা ক্রমাগত ভ্রমণপ্রিয় মানুষদের কাছে তার শীর্ষস্থান অধিকার করে... কেরালা, গোয়া, জম্মু এবং কাশ্মীর-এর থেকেও বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এই রাজ্যটি।
২০১৬ সালের পর থেকে তামিলনাড়ু প্রায় ৩৪৪ মিলিয়নের বেশি পর্যটকের মনোরঞ্জনের দায়িত্ব পালন করে আসছে এবং ভারতবর্ষের প্রধান প্রধান পর্যটন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে নিজের স্থানকে পর্যায়ক্রমিক ভাবে টিকিয়ে রেখেছে; যেটি পর্যটন মন্ত্রক দ্বারা স্বীকৃতি পেয়েছে। অন্ধ্রপ্রদেশ এবং ওডিশার সঙ্গে তামিলনাড়ুও ভারতবর্ষের পূর্ব উপকূলে অবস্থিত অন্যতম ভ্রমণ কেন্দ্র এবং এটি “ল্যান্ড অফ তামিলস্” বা তামিলদের ভূমি হিসেবে নিজস্ব স্বীকৃতি বজায় রেখে চলেছে।
সংস্কৃতি এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের যৌথ প্রয়াসে গড়ে উঠেছে তামিলনাড়ু। যার কেন্দ্রে অবস্থিত চেন্নাই শহর “মাদ্রাজ” নামেও পরিচিত, এখানে ২০টিরও বেশি হেরিটেজ হাউস এবং বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী স্থান দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়াও এখানে রয়েছে কিছু প্রসিদ্ধ মন্দির এবং যার পিছনে লুকিয়ে রয়েছে কিছু অজানা গল্প। তবে তামিলনাড়ুর আশ্চর্যজনক ঘটনাগুলোর মধ্যে একটি হল এখানকার ঐতিহ্যবাহী জায়গা এবং মন্দিরগুলো; যার সবকিছুই গড়ে উঠেছে নিজস্ব সমুদ্রসৈকতে। ভারতবর্ষের এই সকলস্থানগুলোতে ভ্রমণের জন্য এইসব কারণগুলোর পাশাপাশি আরও কিছু জায়গার নাম উল্লেখ করা হল।
কন্যাকুমারী
ভারতবর্ষের দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত কন্যাকুমারীর পূর্ব প্রচলিত নাম ছিল “কেপ কোমোরিন ”। আরব সাগর, ভারত মহাসাগর এবং বঙ্গোপসাগরের সংমিশ্রণ স্থলে গড়ে উঠেছে এই শহরটি। স্বতন্ত্র সংস্কৃতি সম্পন্ন বিভিন্ন তীর্থক্ষেত্র এবং এই স্থানের মানুষের বিনয়ী অতিথি আপ্যায়নে কন্যাকুমারী হয়ে উঠেছে অনবদ্য।
কোদাইকোনাল
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২২৩১ মিটার উপরে অবস্থিত একটি ছোট পার্বত্য স্টেশন হল কোদাইকোনাল। “প্রিন্সেস অফ দ্য হিল স্টেশন” নামে সুখ্যাত এই ছোট্ট শহরে হয়ে উঠেছে পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় ভ্রমণ কেন্দ্র। এই স্থানে একই সঙ্গে ঝরণা, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, পর্বত শৃঙ্গ, ছোট নদী, বিভিন্ন উদ্ভিদ এবং প্রাণী জগৎ দ্বারা তৈরি প্রাকৃতিক পাথর সমূহ সবকিছুই দেখতে পাওয়া যায়।
মহাবলিপুরম:
মামল্লাপুরম নামে পরিচিত, মহাবলিপুরম তার পুরনো সংস্কৃতি ঐতিহ্যের জন্য বিখ্যাত। বিশ্ব সংস্থা ইউনেস্কো-র নির্বাচিত প্রাচীন ঐতিহ্য সমন্বিত নির্মাণ ভূমিগুলোর মধ্যে মহাবলিপুরম তার ঐতিহ্যবাহী অবয়বগুলোর জন্য বিখ্যাত। শহরটি অতিশয় ক্ষুদ্র হওয়ায় এই জায়গাটিতে পর্যটকরা ভাড়া করা বাইক সাইকেল বা হেঁটেই পরিদর্শন করতে পারেন।
মাদুরাই
মাদুরাই তামিলনাড়ুর তৃতীয় বৃহত্তম শহর এবং সবচেয়ে প্রাচীন জনবহুল শহর হিসেবে পরিচিত। এখানে বেশ কিছু দর্শনীয় জাঁকজমকপূর্ণ মন্দির দেখতে পাওয়া যায় যা এখানকার আধ্যাত্মিকতাকে স্পষ্ট ভাবে তুলে ধরে।
কোয়েম্বাটুর
সংস্কৃতি, ইতিহাস এবং মন্দিরের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা কোয়েম্বাটুর “ভারতের ম্যাঞ্চেস্টার” নামে পরিচিত। অনেকেরই জানা নেই, কোয়েম্বাটুর হল তামিলনাড়ুর দ্বিতীয় শিল্পসমৃদ্ধ শহর।
খাবার-দাবার
যারা তামিলনাড়ুর খাবার সম্বন্ধে তেমন কিছু জানেন না,তারা পাইপিং হট ইডলি, মেধু ভাদাস এবং সাম্বার ছাড়াও অনেক সুস্বাদু খাবার চেখে দেখতে পারবেন। তাদের মধ্যে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য হল নাঞ্জিল ফিশ কারি,মিট মাদ্রাজ,পাল পায়েসম, পুরি মশলা ইত্যাদি।
ভ্রমণের আদর্শ সময়
আপনি যদি উত্তর ভারতের পরিবর্তনমুখী তাপমাত্রার আনন্দ চাক্ষুস উপভোগ করতে চান তবে তামিলনাড়ু আপনার জন্য একেবারে আদর্শ জায়গা;কারণ এখানে ক্রান্তীয় আবহাওয়া সর্বত্র বিরাজমান। নভেম্বর মাস থেকে মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময়ে এখানকার জলবায়ু অতি মনোরম এবং শীতল আবহাওয়াতে পরিণত হয়। তাই এই সময়টায় এখানে ঘুরে বেড়ানোর জন্য আদর্শ সময়।
কীভাবে ঘুরবেন
তামিলনাড়ুতে ঘুরে বেড়ানোর সবচেয়ে সহজলভ্য পন্থা হল পূর্বনির্ধারিত ভাড়ায় অটোরিক্সাতে বা কোন বেসরকারি বাস অথবা ক্যাবে।