ইকো-ট্যুরিজম-
হেক্টর সেবালাস লাস্কুরাইন এর মতে, ‘প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, বন্য প্রাণী ও উদ্ভিদ এবং সর্বোপরি বিদ্যমান সংস্কৃতির উপভোগের সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে অপেক্ষাকৃত শান্ত বা অনিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে পর্যটনকে ইকো-ট্যুরিজম বলে । ১৯৮৩ সালে মেক্সিকোর প্রন্যাচার নামক এনজিও এই ইকো-ট্যুরিজম শব্দটি প্রথম ব্যবহার করে।
ইকো ট্যুরিজম-এর গুরুত্ব-
• প্রত্যন্ত অঞ্চলের অর্থনৈতিক বিকাশে সাহায্য করা।
• সেই স্থানের মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়া।
• স্বনির্ভর গোষ্ঠী গড়ে তোলা।
• বিভিন্ন বন্যপ্রাণী, পশু এবং উদ্ভিদ সম্বন্ধে জ্ঞান সঞ্চয় করা।
• জীববৈচিত্র্যের সংরক্ষণের প্রতি মনোনিবেশ দেখানো।
• মানুষ এবং সংস্কৃতির মেলবন্ধন ঘটানো।
• স্থানীয় এলাকার পরিকাঠামোগত বিকাশ ঘটানো।
• বর্তমানে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটিশ যুক্তরাজ্য, জার্মানি, জাপান এবং এশিয়ার কিছু কিছু জায়গায় এই ইকো-ট্যুরিজম-এর উপর যথেষ্ট নজর দেওয়া হচ্ছে।
সুন্দরবনের ইকো ট্যুরিজম-
গঙ্গা মেঘনা ব্রহ্মপুত্র নদীর অববাহিকার ব-দ্বীপ এলাকায় ১০ হাজার বর্গ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ অঞ্চল সুন্দরবন। ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে ৬ই ডিসেম্বর ইউনেস্কো থেকে সুন্দরবনকে বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। বিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের পাখি, চিত্রা হরিণ, কুমির, বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর সন্ধান মেলে এই সুন্দরবনে।
বনদপ্তর বিভাগ থেকে সুন্দরবনের ইকো-ট্যুরিজম প্রকল্পকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। ইকো-ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট এন্ড মানেজমেন্ট প্ল্যান অনুযায়ী পর্যটন কাঠামোগত পরিবর্তন প্রশিক্ষণ এবং যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে এইস্থানে আরও সুরক্ষা এবং স্বাস্থ্যকর পরিবেশ গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চলছে।
সুন্দরবনের ইকো-ট্যুরিজম গড়ে তোলার অন্যতম কারণ হিসেবে বলা হয়েছে-
• এইস্থানের প্রধান আকর্ষণ ম্যানগ্রোভ অঞ্চল।
• বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণী।
• অরণ্য সংরক্ষণ।
• রয়েল বেঙ্গল টাইগার সংরক্ষণ।
• কুমির সংরক্ষণ।
• নদীমাতৃক জায়গা হওয়ার কারণে প্রাকৃতিক কাজের সুবিধা ইত্যাদি।
সুন্দরবনে গড়ে ওঠা ইকো-ট্যুরিজম-এর সম্ভাব্য জায়গা-
১. দুবলা দ্বীপ-
শীতকালে এইস্থানে শুকনো মাছ পাওয়া যায়। প্রতি বছর নভেম্বর মাসে পুর্নিমা তিথিতে এখানে রাসমেলা উদযাপিত হয়।
২. মন্দারবাড়িয়া-
এটি সুন্দরবনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বিচ্ছিন্ন একটি জায়গা। এই অঞ্চলের প্রান্তিক শোভা দেখার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটকদের ভিড় করেন।
৩. করমজাল কেন্দ্র-
এটি সুন্দরবন সংরক্ষণ অঞ্চলের প্রবেশদ্বার। তবে এখানে বেশ কিছু বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ করে রাখা আছে এবং ম্যানগ্রোভ অঞ্চল দেখতে পাওয়া যায়।
৪. কাটকা-কচিখালী-
সুন্দরবনের জনপ্রিয় কিছু খাল, যার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অপূর্ব। এই খালগুলির মাধ্যমে বানর, সাপ, কুমির, বিভিন্ন ধরনের হরিণ, দেখতে পাওয়া যায়। শুধু তাই নয়, খালগুলি অতিক্রম করার সময় কখনও কখনও বাঘের দেখাও মেলে। এখানে একটি ওয়াচ টাওয়ার রয়েছে, যেখান থেকে উন্মুক্ত সবুজ ঘাসের প্রান্তরে ঘুরে বেড়ানো বাঘ ও হরিণ দেখতে পাওয়া যায়।
সুন্দরবনের যে স্থানে ইকোট্যুরিজম গড়ে উঠেছে-
বর্তমানে সুন্দরবনের সপ্তমুখী নদীর মোহনায় লোথিয়ান দ্বীপের ঠিক পাশে ভাগবতপুর নামে একটি জায়গা রয়েছে, যেটি কুমিরদের জন্য বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এটি কুমিরদের প্রাকৃতিক আবাসস্থল, যেখানে তারা ইচ্ছেমতো বিচরণ করতে পারে এবং সুরক্ষিত অবস্থায় অবস্থান করে। এই প্রকল্পটির মাধ্যমে মূলত বিলুপ্ত প্রজাতির কুমিরদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে কারণ এখানে কুমিররা প্রাকৃতিক ভাবে বেঁচে থাকতে এবং তাদের বংশ বিস্তার করতে সমর্থ হয়।
ভ্রমণের সঠিক সময়-
বছরের যেকোনো সময় সুন্দরবন যাওয়া যায়। তবে গ্রীষ্মের শেষে এবং শীতের শুরুতে সুন্দরবন গেলে অতি মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।
ভ্রমণ প্রক্রিয়া এবং খরচ-খরচা-
সুন্দরবন একা ঘোরা যায়। তবে সুন্দরবনের এই সমস্ত ইকো-ট্যুরিজম প্রকল্পগুলি দেখার জন্য কোন ভ্রমণ সংস্থার সঙ্গে ঘুরতে আশায় শ্রেয়। কারণ তারা আপনাকে বিভিন্ন রকমের তথ্য দিয়ে সাহায্য করতে পারেন। আর সুন্দরবন ঘোরার জন্য তেমন বেশি অর্থ ব্যয় হয় না।