নর্থ সিকিম বলতেই কিন্তু আমাদের মাথায় আসে সেই ছকে বাঁধা ২ দিন ৩ রাতের রুটিনমাফিক ট্রিপ, যেখানে হয়তো বেশ কয়েকটি জায়গা আপনি ঘুরে আসতে পারবেন, কিন্তু সময় নিয়ে উপভোগ করার মতো সুযোগ থেকে যাবে অধরা। তার বদলে কি ইচ্ছে করে উত্তর সিকিমের কোনও পুরোনো গ্রামে কিছুদিন নিভৃতে ছুটি কাটানোর? পর্যটকদের ধরাছোঁয়ার বাইরে গিয়ে, উত্তর সিকিমের আদি বাসিন্দা লেপচাদের গ্রাম জোঙ্গু কিন্তু তাহলে হয়ে উঠতে পারে আপনার আগামী গন্তব্য।
ঘন জঙ্গলে আচ্ছাদিত এই পাহাড়ি গ্রামের অন্যতম আকর্ষণ হল এখানকার সহজ সরল মানুষদের সাথে জীবন কাটানোর সুযোগ, এবং একধারে নর্থ সিকিমের বিরল বায়োডাইভার্সিটি নিজের চোখে চাক্ষুস দেখার সুযোগ! এখানে আসার পিছনে আপনার অন্যতম উদ্দেশ্য হতে পারে আধুনিক শহুরে সভ্যতার থেকে দূরে কীভাবে এখনও আদিম লেপচা জনগোষ্ঠীর দৈনন্দিন জীবনযাত্রা কিভাবে নিজস্ব গতিতে বয়ে চলেছে। কথা বলতে পারেন গ্রামবাসীদের সাথে যারা আপনার সাথে ভাগ করে নেবে লেপচা ধর্মবিশ্বাস বা সংস্কৃতির বিভিন্ন আঙ্গিক। আবহাওয়া সহায় হলে জোঙ্গুর বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সরাসরি দেখতে পাবেন কাঞ্চনজঙ্ঘা বা মাউন্ট পান্ডিমের অসাধারণ রূপ। আর এই সব কিছুকে ছাপিয়ে সর্বদা সঙ্গে থাকবে প্রকৃতির মাঝে দু-দণ্ড শান্তি খুঁজে পাওয়ার অনন্য সুযোগ।
জোঙ্গু থেকে ট্রেকিং
ইচ্ছুক পর্যটকরা জোঙ্গুকে বেস করে ঘুরে আসতে পারেন আসে পাশের কয়েকটি বিখ্যাত ট্রেক থেকে।
হাতে ২/৩ থাকলে ঘুরে আসতে পারেন থোলুং ট্রেক থেকে। জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে পথ বেছে এগিয়ে চলার সময় বেশ কিছু জলপ্রপাত আর উষ্ণ প্রসবনের পাশ দিয়ে। ঘুরে আসতে পারেন ট্রেকের শেষে থোলুং মনেস্ট্রি থেকে। প্রতি ৩ বছরে এখানে অনুষ্ঠিত হয় বৌদ্ধ কামসেল উৎসব। আগামী কামসেল উৎসব হওয়ার কথা ২০২২ সালে।
ঘুরে আসতে পারেন লিংথেম ট্রেকের মাধ্যমে প্রায় ৬২০০ ফুট উপরে অবস্থিত লিংথেম গ্রাম থেকে। সেখানে রয়েছে প্রাচীন নিংমা মোনাস্ট্রি। আছে উষ্ণ সালফারের গুণ সম্পন্ন প্রস্রবণ।
হাতে চার পাঁচ দিন সময় থাকলে থোলুং পর্বত থেকে এগিয়ে যান কিসংলা পাসের জন্য। পবিত্র কিসঙ লেকের দর্শন পাবেন এখানেই।
লিংডং, নামপ্রিক গ্রাম বা রংইউং চু নদীর পাড়ে এলে দেখতে পাবেন অজস্র হিমালয়ের পাহাড়ি প্রজাপতির দল।
জোঙ্গু কীভাবে পৌঁছবেন
ট্রেন পথে চলে আসুন নিউ জলপাইগুড়ি বা বিমানপথে বাগডোগরা বিমানবন্দর। সেখান থেকে নিজস্ব গাড়ি, বা ক্যাব ভাড়া করে চলে আসুন সিকিমের মঙ্গনের জন্য। মঙ্গন থেকে অল্প কিছু দূরত্বের মধ্যেই আপনি পৌঁছে যাবেন লোয়ার জোঙ্গু। তবে মঙ্গনে একরাত কাটিয়ে জোঙ্গুর জন্যে প্রয়োজনীয় পারমিট করে নিতে পারেন। পরের দিন সকালে গাড়ি করে মাত্র ঘন্টা দুয়েকের মধ্যেই পৌঁছে যাবেন লোয়ার জোঙ্গুতে। ইচ্ছে করলে যেতে পারেন আরেকটু উত্তরে, আরেকটু দুর্গম অপার জোঙ্গুতেও।
জোঙ্গুতে কোথায় থাকবেন
বেশ দুর্গম এবং পাহাড়ি এই অঞ্চলে নেই কোনও হোটেল, লজ বা গেস্ট হাউস। তবে সাহসী পর্যটকদের জন্যে রয়েছে বেশ কয়েকটি হোমস্টের খোঁজ।
থাকতে পারেন পাসিংদং অঞ্চলের মায়াললিয়াং হোমস্টের সাথে। এছাড়াও কুসং গ্রামের কুসং হোমস্টে বা লিংকো গ্রামের কোথি লি হোমস্টেতে আছে গেস্টদের জন্যে সু-ব্যবস্থা। খাওয়া দাওয়া মিলিয়ে জনপ্রতি খরচ প্রতিদিন ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকার মধ্যে।