মন
নাগাল্যান্ডের একদম উত্তরে ৮৯৮ উচ্চতায় অবস্থিত মন জেলা। সুন্দর উপত্যকা আর সুবিস্তৃত শৃঙ্গ দেখতে পাবেন এখানে এলে। রয়েছে উচ্ছ্বল নদী আর ঘন জঙ্গলও। ভারতের জঙ্গল পরিপূর্ণ পূর্বদিকের এক আদর্শ উদাহরণ হল এই মন। ভারত মায়ানমারের সীমানায় অবস্থিত এই অঞ্চলেই থাকে ভারতের হেড হান্টার কন্যাক নাগারা। তাই ট্রাইবাল কোনও জায়গা যদি আপনার পছন্দের তালিকায় থাকে তাহলে এখানে চলে আসুন। মেঘ, কুয়াশা আর অপার রহ্যসের ভ্রমণ হতে পারে নাগাল্যান্ড।
কেন যাবেন মন?
সাঙ্গনিউ
মনে আপনি যা যা উপভোগ করতে পারবেন
সাঙ্গনিউ চলে যান। এটি মন ভরে যাবে গ্রামটিতে গেলে। গ্রামের নেতার বাড়ির বাইরে অদ্ভুত দর্শন কাঠের মূর্তি দেখুন। বলা হয়, দুই ভাই আর এক আত্মা মিলে এটি বানিয়েছে, আর তাও সেই আদিম যুগে। মনের উচ্চতম শৃঙ্গ ভেদা দেখে আসুন। সেখানে দেখতে পাবেন ভারতের ব্রহ্মপুত্র আর মায়ানমারের ছিন্দউইন নদীর অপার সৌন্দর্য। ইতিহাস বলে এই গ্রামেই ব্রিটিশরা প্রথম আফিমের গাছ বসায়। মন থেকে ১১ কিলোমিটার দূরে আছে নাগানিমোরা। দিখু নদীর তীরে এই গ্রামটি নাগা রানিদের সমাধি ক্ষেত্র, আর তাই নাগা রানি মোরা হয়ে গেছে নাগানিমোরা।
খাবার দাবার
অঞ্চলের ভৌগোলিক বিবরণ
১৯৭৩ সালের ডিসেম্বর মাসে নাগাল্যান্ডের তুয়েনসাং জেলা থেকে আলাদা হয়ে যায় মন। ১৮০০ বর্গ কিলোমিটার অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত মন কোহিমা থেকে ৩৫৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এর উত্তরে আছে অসম আর পূর্বে আছে মায়ানমার (বর্মা)। অপূর্ব উপত্যকা, হাঁসুলি বাঁক আর সুন্দর গ্রামের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে মন।
উপজাতি জীবনের আস্বাদ পাবেন এখানে
১৬টি প্রশাসনিক স্বীকৃতি পাওয়া উপজাতির মধ্যে কন্যাক নাগারা অন্যতম। মন এঁদের খাসমহল এমনটা বলতে পারি। কন্যাকদের জীবন অনেকটাই রহস্য আর জাদুতে ঘেরা।
কন্যাকদের পূর্বপুরুষরা বিশ্বাস করতেন যে এরা সরাসরি নোহার থেকে এসেছেন। তাই স্থানীয় ভাষায় এঁদের বাইবেলের নামে ডাকা হয় মোসা আর কাইসা আরন নামে। পর্যটকদের ভিড়েও এঁদের মুখের ট্যাটু, কালো দাঁত, তিব্বতি আর মায়ানমারের ডায়লেক্ট, নাগা আর আসামি মেশানো নাগামিজ ভাষা শুনলেই আপনি চিনে নিতে পারবেন। এই উপজাতির যিনি নেতা তাঁকে ওয়াং বা আঙ্ঘ বলা হয়। এই শব্দের অর্থ হল "সব কিছুর শুরু"। তিনি একাধারে স্বেচ্ছাচারী এবং গণতান্ত্রিক। মজার ব্যাপার হল উপজাতির নেতাদের কয়েকজনের বাড়ি মায়ানমারে পড়েছে আর কিছু নেতার বাড়ি ভারতে। এঁদের বাড়ি মানুষ আর পশুদের মাথা বা স্কাল দিয়ে সাজানো! সত্যি কি অদ্ভুত তাই না? হঠাৎ দেখলে মনে হয় যেন কোনও সিনেমার সেটে চলে এসেছি।
এই উপজাতিদের দেখতে পর্যটকরা আসেন কারণ একসময় মানুষের মাথা কেটে নেওয়ার জন্য এরা পরিচিত ছিল। এরা ঐতিহ্যবাহী গয়না এবং পিতল দেওয়া খুলির হার পরেন। খুলির সংখ্যা গুণে বোঝা যায় যে এরা কটা মাথা কেটেছিল। কন্যাকদের বাড়ি হাতির দাঁত আর হর্নবিলের ঠোঁট দিয়ে সাজানো। একসময় এরা বিশ্বাস করতেন যে যতগুলো মাথা কেটে নেওয়া হবে, তার উপরে ফসলের উর্বরতা নির্ভর করবে। এই অঞ্চলে খ্রিস্টান মিশনারিরা এলে এই প্রথার অবসান ঘটে। অনেকেই খ্রিস্ট ধর্ম গ্রহণ করে।
দুটি দেশের নাগরিকত্ব, এক রাজার ষাট জন স্ত্রী এবং আরও অনেক অদ্ভুত ঘটনা
লংওয়া হল মনের সবচেয়ে বড় গ্রাম, যা অদ্ভুত এবং ঘটনাবহুল। খড়ের ছাউনি দেওয়া বাড়ি দেখা যায় এখানে। কিন্তু এই গ্রামটি অর্ধেক পড়েছে মায়ানমারে আর বাকিটা ভারতে। এমনও হয়েছে যে কোনও কন্যাক নাগা তাঁর বাড়ির একাংশে রান্না করেছেন যেটা মায়ানমারে পড়েছে আবার যে ঘরে শুতে গেছেন সেটা ভারতে পড়েছে!
আরও একটা অদ্ভুত বিষয় বলি। এই গ্রামের প্রধানের মোট ৬০ জন স্ত্রী আছে। তিনি ৭০ টি গ্রাম শাসন করেন যা মায়ানমার (বর্মা) হয়ে অরুণাচল পর্যন্ত বিস্তৃত।
নাগাদের উৎসব
এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে নাগাদের উৎসব আওলিং মনইউ পালিত হয়। তাই এইসময় এখানে আসলে খুব ভাল লাগবে। রাস্তা জুড়ে নাগারা উৎসব পালন করেন। তাঁদের নানা রঙের পোশাক, নাচ আর স্থানীয় ভাষার গান সত্যিই দেখার মতো। এই উৎসব প্রধানত পালিত হয় নতুন বছর শুরু করে বসন্ত ঋতুকে স্বাগত জানানোর জন্য। ধোয়া আর গান পাউডারে আকাশ ভরে ওঠে সেদিন। এই উৎসব বার্তা দেয় শান্তি আর সংহতির। সরকারের সঙ্গে নাগাদের সম্পর্কের সেতু গড়ে তোলে এই উৎসব।
আপনি ইতিমধ্যে যত জায়গার খাবার পেয়েছেন তার চেয়ে নাগা খাবার একদম আলাদা। নাগারা এমনিতে ভাত খায় তার সঙ্গে থাকে সেদ্ধ সবজি, দুর্দান্ত স্বাদের চাটনি, বাঁশের মূল সেদ্ধ আর মাংস। নাগারা শুয়োর আর গরুর মাংস খেতে খুব ভালবাসে। এখানে নানা স্বাদের স্মোকড আর শুকনো মাংস রসুন, আদা আর স্থানীয় রাজা লঙ্কা দিয়ে দেওয়া হয়।
কখন যাবেন
এখানে গ্রীষ্মকাল শুরু হয় মার্চ থেকে এপ্রিল পর্যন্ত, এই সময় তাপমাত্রা খুব আরামদায়ক থাকে। এপ্রিলে নাগাদের উৎসব হয় তাই এই সময়টাই সেরা সময়।
কীভাবে যাবেন
মন থেকে ১৬১ কিলোমিটার দূরে রয়েছে আসামের জোরহাট বিমানবন্দর। আসামেই ভোজু রেলওয়ে স্টেশন আছে। মন কোহিমা, দিমাপুর আর জোরহাটের সঙ্গেও যুক্ত। কোহিমা আর দিমাপুর থেকে মনের সরাসরি বাস পাওয়া যায়। জোরহাট আর ভোজু থেকে প্রথমে আপনাকে সোনারি যেতে হবে, সেখান থেকে স্থানীয় বাসে মন।
অন্যান্য কোথাও ঘুরে দেখার বন্দোবস্ত
মন ঘোরার সবচেয়ে সহজ উপায় হল সেখানে পৌঁছে একটা গাড়ি ভাড়া করে নেওয়া। তাছাড়া সরকারি বাস ও অটো রিক্সাও আছে।
মনে রাখবেনঃ ভারতীয়দের নাগাল্যান্ডে আসতে গেলে ইনার লাইন পারমিট লাগবে। সেটা পাওয়া যাবে নতুন দিল্লি, কলকাতা ও দিমাপুরের ডেপুটি রেসিডেন্ট কমিশনারের কাছ থেকে। তবে যেসব বিদেশীদের কাছে ভারতীয় ভিসা আছে (চিন, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের লোক ছাড়া) তাঁদের গৃহ মন্ত্রকের কাছ থেকে নাগাল্যান্ড আসার জন্য কোনও অনুমতি লাগবে না।
থাকার ব্যাবস্থা
নিজের বেড়ানোর অভিজ্ঞতা ট্রিপোটোর সঙ্গে ভাগ করে নিন আর সারা বিশ্ব জুড়ে অসংখ্য পর্যটকদের অনুপ্রাণিত করুন।
বিনামূল্যে বেড়াতে যেতে চান? ক্রেডিট জমা করুন আর ট্রিপোটোর হোটেল স্টে আর ভেকেশন প্যাকেজে সেগুলো ব্যাবহার করুন
(এটি একটি অনুবাদকৃত আর্টিকেল। আসল আর্টিকেল পড়তে এখানে ক্লিক করুন!)