নিশ্ছিদ্র অন্ধকার, কোমর পর্যন্ত জল, এক পা এক পা করে আপনি এগিয়ে চলেছেন, মাথার উপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে বাদুড়, গা বেয়ে উঠছে পোকা! অনেকে এসব শুনে শিউরে উঠে ভাবছেন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'চাঁদের পাহাড়'- এর শংকরের সেই রোমাঞ্চকর অ্যাডভেঞ্চারের কথা বলছি বোধহয়! গল্পের প্রসঙ্গ আনলেও খুব একটা ভুলও হবে না এক্ষেত্রে আর প্রতিদিনের ব্যস্ততার দৌড়ে আমরা তো এইভাবেই গল্পের চরিত্র আর জীবনের চরিত্রগুলোকে মিলিয়ে দেখার চেষ্টা করে থাকি... যারা গুহার এইসকল অ্যাডভেঞ্চারকে উপভোগ করেন, তাঁদের মনেই মধ্যে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন জেগে উঠেছে, ভাবছেন ঠিক কোন জায়গার কথা বলছি ? বলছি মেঘালয়ের গুহার কথা। অনেকেই মেঘালয়ের অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কথা জানেন। মেঘালয় বলতেই তাঁদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে সুন্দর পাহাড়, রুট ব্রিজ আর উচ্ছ্বল ঝর্ণার ছবি। তবে তার বাইরেও মেঘালয়ের এই আশ্চর্য গুহাগুলোর আকর্ষণও উল্লেখযোগ্য বলা যেতে পারে।
এক-একটা প্রাকৃতিক গুহা তৈরি হতে যে কত হাজার বছর সময় লাগে তার ইয়ত্তা নেই। এক-একটা গুহা যেন ইতিহাসের জীবন্ত দলিল। মেঘের রাজ্য মেঘালয়ে প্রায় ১৭০০ চুনাপাথর ও বেলেপাথরের গুহা আছে। ৩০০ কিলোমিটার বিস্তৃত এই গুহাগুলো মূলত পূর্ব খাসি পাহাড়, দক্ষিণ গারো পাহাড় ও জয়ন্তিয়া পাহাড়ে অবস্থিত। তবে বেশিরভাগ গুহাই এখনও লোক চক্ষুর অন্তরালে আছে।
মেঘালয়ের গুহা
পাহাড়, জঙ্গল আর সমুদ্রের চেয়ে গুহা অনেকটাই আলাদা। এটা এক অন্যধরনের অ্যাডভেঞ্চার। আর এর জন্য সঠিক সংস্থার দরকার, যারা আপনার সঙ্গে একজন দক্ষ গাইড দেবেন। যদি আপনি প্রথমবার এই ধরনের অ্যাডভেঞ্চার করে থাকেন তাহলে অবশ্যই প্রোফেশনাল গাইডের সাহায্য নেবেন। এখানে ৫ থেকে ১০ দিন দিনের গুহা ট্রিপ হয়। ছোট, বড় নানা রকমের গুহা এখানে ঘুরিয়ে দেখানো হয়।
একটা ছোট্ট গর্ত দিয়ে ভিতরে ঢুকতে হয়, তারপর উঁচু নিচু পথে গুহা শুরু হয়। প্রত্যেক পা ফেলার আগে দু'বার ভাবতে হয়। আপনার গাইড এই বিষয়ে আপনাকে সাহায্য করবে। কীরকমের গুহায় আপনি এসেছেন তার উপর নির্ভর করে আপনি দেখতে পাবেন জলপ্রপাত, স্ট্যালাগটাইট, স্ট্যালাগমাইট, সুড়ঙ্গ, জলে ভর্তি গর্ত, পোকা, বাদুড়, কাঁকড়া ও ছোট মাছের মতো প্রাণী। বিপদসঙ্কুল পথে আপনাকে শুধু নিজেকে সাবধান থাকতে হবে তাই নয়, খেয়াল রাখতে হবে কোনও ফরমেশন যেন ভেঙে না যায়, কারণ এগুলো তৈরি হতে কয়েক লক্ষ বছর লেগেছে। প্রত্নতাত্ত্বিক বিষয়ের প্রতি গুরুত্ব বোঝাটাও এক্ষেত্রে বিশেষ জরুরি।
কতটা প্রস্তুতি দরকার
যদিও গুহার ভিতরে ঢোকার জন্য আগে থেকে কোনও প্রশিক্ষণ লাগে না। তবে যেহেতু এটা অ্যাডভেঞ্চার, তাই আপনাকে শারীরিক ভাবে সক্ষম, সক্রিয় ও নমনীয় থাকতে হবে। কারণ এই পথে যথেষ্ট শারীরিক পরিশ্রম আছে। আপনাকে গুহা বেয়ে উঠতে হতে পারে আবার পেটে ভর দিয়ে হামাগুড়িও দিতে হতে পারে। যদি প্রয়োজন হয় তাহলে সাহায্য চাইতে লজ্জা পাবেন না কিন্তু!
যে দলের সঙ্গে আপনি যাচ্ছেন তাঁরা আপনাকে সমস্ত জিনিস যেমন বডি সুট, দস্তানা, হেলমেট, এলইডি হেডল্যাম্প এবং গাম বুটস্ ইত্যাদি দেবে। এছাড়া আপনাকে একটা ব্যাগপ্যাক, জলের বোতল, ফার্স্ট এড কিট, সামান্য কিছু শুকনো খাবার, এক সেট বাড়তি জামা কাপড় আর ফ্ল্যাশ সহ ক্যামেরা (অন্ধকারে ছবি তুলতে কাজে লাগবে)।
যাওয়ার সেরা সময়
নভেম্বর থেকে মার্চ হল মেঘালয়ের গুহা দেখতে যাওয়ার সেরা সময় কারণ এই সময় গুহার ভিতরে জলস্তর সবচেয়ে কম থাকে।
খরচ
আপনি কোন ট্যুর কোম্পানির সঙ্গে যাচ্ছেন আর দলে কতজন লোক আছে তার উপর নির্ভর করবে খরচের পরিমাণ। সত্যি কথা বলতে, দলে যত বেশি লোক হবে তত খরচ কম হবে। একটা দলে যেখানে ছয় থেকে সাত জন আছে সেখানে ৩৫০০ থেকে ৪৫০০ টাকা খরচ হবে। মনে রাখবেন কোনও ট্যুর কোম্পানি একজন পর্যটক নিয়ে গুহায় যায়না যদি না তাঁদের অনেক বেশি পরিমাণ অর্থ দেওয়া হয়।
কেভিং অরগানাইজার
মেঘালয়া অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরস
মেঘালয়া অ্যাডভেঞ্চার অ্যাসোসিয়েশনের বাণিজ্যিক শাখার নাম মেঘালয়া অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরস। এরা সব বয়সী মানুষদের নিয়ে গুহার পরিক্রমা করায়। যোগাযোগ করুন matours@rediffmail.com বা যোগাযোগ করুন +৯১ ৯৮৬৩০৬০৩৬৮ এই নম্বরে।
কিপেপেও
অনুমতি নিয়ে কোনও একটি সমস্যা হওয়ার পর থেকে কিপেপেও এখন দল নিয়ে গুহার ভিতরে ট্রিপ করে না। তবে এক বা দুজনকে নিয়ে ওরা ট্রিপ করে। যোগাযোগ করুন info@kipepeo.in বা যোগাযোগ করুন + ৯১৯৯৩০০০২৪১২, +৯১ ৯৯৩০৯ ৮০৩১৩
মেঘালয়ের কয়েকটি সেরা গুহা
মেঘালয় অ্যাডভেঞ্চার্স অ্যাসোশিয়েশনের প্রোজেক্ট "কেভিং ইন দ্য অ্যাবোড অব ক্লাউডস" নাম দিয়ে প্রত্যেক বছর গুহা এক্সপ্লোর করে। ২০১৬ সালে তাঁরা তিনটে আংশিক এক্সপ্লোর করা গুহা আর ৩৩ টি নতুন গুহা আবিষ্কার করে। এখানকার কয়েকটা জনপ্রিয় গুহা হল:
জয়ন্তিয়া পাহাড়
ক্রেম কাইম্পঃ ভারতের পঞ্চম বৃহত্তম গুহা (এখনকার হিসেবে), এই নদী গুহার জমি বেশ দুর্গম। এটিতে প্রায় ৫০ টি প্রাকৃতিক বাঁধ রয়েছে এবং গুহার জলের স্তর ২০ থেকে ২৬ ফুটের উচ্চতম পর্যন্ত যেতে পারে, যার অর্থ জলটি পেরিয়ে যাওয়ার জন্য আপনাকে সাড়ে তিন কিলোমিটার সাঁতার কাটাতে হবে। এখানে প্রচুর বাদুড় এবং বেশ কয়েকটি মাছের প্রজাতি আছে।
ক্রেম উমথালুঃ প্রথমবার গুহা অ্যাডভেঞ্চার করলে এই গুহাটি বেছে নিতে পারেন। এর ভিতরটা খুব সুন্দর। এখানে ৫০ থেকে ৬০ মিটার গভীর পটহোলস আছে যা দিয়ে ভিতরে ঢোকা যায়। এগুলো শাখার মতো ছড়িয়ে থাকে।
ক্রেম লিয়াথ প্রাহ্: এই দুর্দান্ত গুহাটি ভারতের দীর্ঘতম গুহা। এটি ২৫ কিলোমিটার লম্বা। এই গুহার বৈশিষ্ট্য হল এর লম্বা সুড়ঙ্গ যাকে এয়ারক্রাফট হ্যাঙ্গার বলা হয়।
খাসি পাহাড়
মাওয়াস্মাই গুহাঃ এই চুনাপাথরের গুহাটির ঢোকার পথ খুব প্রশস্ত। এই গুহাটি গাইড ছাড়াও ঘোরা যায়। ভিতরে ঢুকলে গুহাটি সরু হয়ে যায় তাই যাঁদের ক্লসট্রোফোবিয়া আছে তাঁদের এই গুহায় না যাওয়াই ভাল। এটা একমাত্র গুহা যেখানে পুরোটা আলো আছে। এই গুহায় প্রচুর বাদুড় আর পোকা আছে।
ক্রেম মাউম্লুহঃ ভারতের চতুর্থ বৃহত্তম গুহা যার দৈর্ঘ্য ৭ কিলোমিটার। এটা গ্রেড ২ লেভেলের গুহা। জল ভেঙে এই গুহায় ঢুকতে হয় আবার গরমে এই জলই শুকিয়ে ভয়ঙ্কর চোরা বালি হয়ে যায়। এই গুহার বেশিরভাগ প্যাসেজই সমান্তরাল। এখানে পেটের উপর ভর দিয়ে হামাগুড়ি এবং উল্লম্ব ক্লাইম্বিং করে এই গুহায় ঢুকতে হবে।
ক্রেম রি ব্লাইঃ এটি একটি উল্লম্ব গুহা। জীবনে একবার অন্তত এই গুহায় যাওয়া উচিৎ। এই গুহা খুব দুর্গম কিন্তু যাঁদের অন্ধকার অ্যাডভেঞ্চার ভালবাসে তাঁদের এই গুহা খুব ভাল লাগবে। এই গুহার প্যাসেজ একটা টিউবলাইটের মতো সরু। এগিয়ে যাওয়ার পথে অনেকগুলো জলপ্রপাত আছে।
গারো পাহাড়
টেটেংকোল বালওয়াকোলঃ এটি ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম গুহা। ১৭,৫০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এই গুহাকে বলা হয় উল্টো পায়ের বামনদের গুহা। কারণ এই গুহার ভিতরে এমন কিছু জায়গা আছে যেখানে মাথা নিচু করে রীতিমতো হাঁটু মুড়ে যেতে হয়।
সিজু কেভঃ এই গুহায় রয়েছে দারুণ স্ট্যালাগটাইট আর স্ট্যালাগমাইট। প্রচুর বাদুড় আছে এখানে। আর আছে নদী প্রবাহের রাস্তা আর চুনাপাথরের কিছু ফরমেশন। তবে আগে থেকে গুহা এক্সপ্লোর করার অভিজ্ঞতা না থাকলে এই গুহায় না যাওয়াই ভাল।
নিজের বেড়ানোর অভিজ্ঞতা ট্রিপোটোর সঙ্গে ভাগ করে নিন আর সারা বিশ্ব জুড়ে অসংখ্য পর্যটকদের অনুপ্রাণিত করুন।
বিনামূল্যে বেড়াতে যেতে চান? ক্রেডিট জমা করুন আর ট্রিপোটোর হোটেল স্টে আর ভেকেশন প্যাকেজে সেগুলো ব্যাবহার করুন
(এটি একটি অনুবাদকৃত/অনুলিখিত আর্টিকেল। আসল আর্টিকেল পড়তে এখানে ক্লিক করুন!)