ব্লগের শিরোনাম নামটা পড়ে কি একটু অবাক হচ্ছেন? তাহলে নিশ্চয়ই ভাবছেন; মাউন্টেন ট্রেক তো জানা, কিন্তু বিচ ট্রেক কীভাবে সম্ভব?
আসলে ইচ্ছা থাকলেই উপায় হয় । বিচ ট্রেক করে ভ্রমণের মধ্যে অন্যধরণের আনন্দ রয়েছে । প্রকৃতপক্ষে বিচ ট্রেক হলো পায়ে হেঁটেই সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চল পরিদর্শন করা। সারাদিন পরিব্রাজকদের মতো নতুন সমুদ্রতট আবিষ্কার করা, প্রকৃতির সৌন্দর্য দ্বারা মুগ্ধ হওয়া, ধরিত্রী মা-এর কোলে সময় কাটানো এবং দিনের শেষে ক্যাম্প তৈরি করে স্বপাক ভোজন শেষে ঘুমিয়ে পড়ার মধ্যে একটা আলাদা অ্যাডভেঞ্চার লুকিয়ে আছে ।
ব্যাঙ্গালুরু থেকে RTC বাস ধরে একটা গোটা রাত্রি জার্নি করে পরের দিন সকাল ৭.৩০ নাগাদ পৌছলাম কুমতা । এই ভ্রমণের ক্ষেত্রে আমাদের আগে থেকে কোনও রকম পরিকল্পনা ছিল না । আমাদের উদ্দেশ্যে ছিল গোকর্ণ ভ্রমণ । যেহেতু আমাদের ইচ্ছা ছিল বিচ ট্রেক করার, তাই স্থানীয় গ্রামবাসীরা বাস যাত্রার পথ বিশদে জানালেও আমরা GPS পরিষেবার সাহায্য নিয়ে ট্রেক করার সিদ্ধান্ত নিই ।
প্রথম দিন -
প্রথমদিন সার্বজনীন শৌচালয় থেকে ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট সেরে নিলাম । কুমতা বাস স্ট্যান্ড থেকে ভান্নাললি বিচের দূরত্ব প্রায় ৬ কিমি । যেহেতু আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি ট্রেক করেই সমস্ত অঞ্চল ভ্রমণ করব তাই বাস স্ট্যান্ড থেকে হেঁটেই পৌঁছে গেলাম ভান্নাললি বিচ । এখানে পরিবহণ ব্যবস্থা বেশ ভালই আপনারা চাইলে অটো ধরে ও বিচ পৌঁছে যেতে পারেন।
কর্ণাটক রাজ্যটি প্রায় ৩০০ কিমি উপকূলীয় অঞ্চল দ্বারা বেষ্ঠিত আছে । আর কুমতা থেকে গোকর্ণর দূরত্ব প্রায় ৩০ কিমি । যাত্রা সূচনায় অনেকগুলি ছোট ছোট গ্রাম এবং সমুদ্রতট চোখে পড়ল। এখানকার মানুষজন বেশ বন্ধুসুলভ, কাছাকাছি তেমন কোনও বিপণী উপলব্ধ না থাকায় গ্রামবাসীদের থেকে জল নিয়ে তৃষ্ণা মেটালাম। এই প্রত্যন্ত গ্রামে খাবার জন্য কোনও হোটেলও নেই, তাই দুপুরের লাঞ্চটা কয়েকটা কলা এবং বাটারমিল্ক খেয়েই সারতে হল।
এই বিচ থেকে দিগন্ত বিস্তৃত সুনীল জলরাশি প্রত্যক্ষ করতে অসাধারণ লাগে । সমুদ্র তটের চারিদিক জুড়ে রয়েছে অগণিত নারকেল গাছ আর সমুদ্রতীরের একদিকে বাঁধা টলোমোলো নৌকা দেখলে আপনার মনে হতেই পারে সম্পূর্ণ দৃশ্যপট টি যেন কেউ সুসজ্জিতভাবে ছবি এঁকে রেখেছেন ।
এই সমুদ্র বিচ থেকে আকাশ ও সমুদ্র এর মিলনের প্রত্যক্ষদর্শী থাকতে পারেন । বিকেলে সূর্য্যিমামার অস্তাগমণের রূপ দেখার সুযোগটা কিন্তু এক্কেবারেই মিস করবেন না । গোকর্ণ পৌঁছনোর আগেই প্রায় সন্ধ্যা নেমে যাওয়ায় আমরা রাতটা নির্বানা সমুদ্র তটেই কাটানোর সিদ্ধান্ত নিই । আর তাই তাঁবু খাটানোর ব্যবস্থা শুরু করে দিলাম এবং সঙ্গে সঙ্গে রাতের সমুদ্রতটে বন ফায়ার-
এর আমেজ নিতে কিছু কাঠ সংগ্রহ করে আনলাম । পরিশেষে পড়ন্ত বিকেলে প্রকৃতির সৌন্দর্যকে উপভোগ করতে করতে ঝুপ করে সন্ধে হয়ে গেল। রাতে ডিনারে ম্যাগি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।
দ্বিতীয় দিন -
নির্বানা বিচ -
সকালে ঘুম থেকে উঠে উদয়মান সূর্যের রূপটা ক্যামেরাবন্দি করে নিলাম । সকাল সকাল উঠে ৮টা নাগাদ বেড়িয়ে পড়লাম গোকর্ণর উদ্দেশ্যে। এখানে থেকে পায়ে হেঁটে ওঁম সমুদ্রসৈকতের দূরত্ব প্রায় ঘণ্টাখানেক।
আঘানাশিনী জেটি -
এখানকার প্রধান দর্শনীয় স্থানটি হল আঘানাশিনী ফোর্ট । প্রথমে বোটের সাহায্যে নদী পেড়িয়ে পৌঁছে যান আঘানাশিনী জেটি । তারপর একটা খাড়াই পাহাড় অতিক্রম করার পরই আপনি এই ফোর্ট এর দর্শন পাবেন । ফেরার পথে জেটির কাছের একটি হোটেল থেকে পরোটা আর গিরমিট সহযোগে দ্বিপ্রহারিক আহারটা সেরে নিলাম ।
নদী পেড়িয়ে আবার হাঁটতে শুরু করলাম । বর্তমানে মানুষ গোয়ার পরিবর্তে গোকর্ণ ভ্রমণকে বেছে নিচ্ছেন । এই বিচটা বেশ মনোমুগ্ধকর হলেও এখানে ক্যাম্পিং এর তেমন সুযোগ নেই । তাই আরও কিছুটা এগিয়ে পৌঁছে গেলাম হাফ মুন বিচ । আর এখানেই আমরা রাত্রিবাসের সিদ্ধান্তটা নিলাম ।ম্যাগি সহযোগে ডিনার সেরে হাজার তারা আলোর নিচে সমুদ্রের উদ্দীপনাকে সাক্ষী রেখে ঘুমিয়ে পড়লাম ।
গোকর্ণ - সকালের ব্রেকফাস্ট সেরে পৌঁছে গেলাম রাম মন্দিরের উদ্দেশ্যে । কাছাকাছি শৌচালয় থেকে পরিশুদ্ধ হয়ে রাম মন্দির দর্শন করে পুজো দিলাম । প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি ওম বিচ থেকে পায়ে হেঁটে এই মন্দির পৌঁছতে সময় লাগবে প্রায় ২ঘণ্টা ।পরিশেষে ভগবান মহাবালেশ্বরের আশীর্বাদ নিয়ে বাস ধরে বেড়িয়ে পড়লাম ব্যাঙ্গালুরু এর উদ্দেশ্যে ।
এই অভিনব ভ্রমণের প্ল্যানটা আপনদের কেমন লাগল আমাদের জানতে কিন্তু ভুলবেন না।
নিজের বেড়ানোর অভিজ্ঞতা ট্রিপোটোর সঙ্গে ভাগ করে নিন আর সারা বিশ্ব জুড়ে অসংখ্য পর্যটকদের অনুপ্রাণিত করুন।
বিনামূল্যে বেড়াতে যেতে চান? ক্রেডিট জমা করুন আর ট্রিপোটোর হোটেল স্টে আর ভেকেশন প্যাকেজে সেগুলো ব্যবহার করুন।
(এটি একটি অনুবাদকৃত আর্টিকেল। আসল আর্টিকেল পড়তে এখানে ক্লিক করুন!)