মহামারীর করাল ছায়া থেকে এখনও আমরা তেমন মুক্তি পায়নি। কিন্তু কংক্রিটের দেওয়ালে বন্দী থাকতে থাকতে তিতি বিরক্ত মনে হলে সপ্তাহের শেষে পৌঁছে যেতে পারেন ঝাড়খন্ডের পাহাড়ি শহর ম্যাকলস্কিগঞ্জ থেকে।
অবস্থান
ম্যাকলস্কিগঞ্জ শহরটি ঝাড়খণ্ডের রাজধানী শহর রাঁচি থেকে ৬৪ কিমি অদূরে অবস্থিত। একসময় এই শহরটি অ্যাংলো ইন্ডিয়ান মানুষদের প্রধান বাসস্থান হিসেবে পরিচিত ছিল।
ম্যাকলস্কিগঞ্জের ইতিহাস
অ্যাংলো ইন্ডিয়ানদের প্রধান বাসস্থান ম্যাকলস্কিগঞ্জ শহরটি ১৯৩৩ সালে ঔপনিবেশিক সোসাইটি (colonisation society of India) অন্তর্ভূক্ত ছিল । পরবর্তী কালে এই শহরের জমি অ্যাংলোরা ঔপনিবেশিক সোসাইটি থেকে কিনে নেন। প্রায় ১০ বছরের মধ্যে এই শহরটি ৪০০ অ্যাংলো -ইন্ডিয়ানদের বাসস্থানে পরিণত হয়। এরপর কলকাতার এক ব্যবসায়ী আরনেস্ট টিমথি ম্যাকলস্কি ১৯৩২ সালে ম্যাকলস্কিগঞ্জ শহরের নির্মাণ করেন এবং প্রায় ২ লক্ষ অ্যাংলো ইন্ডিয়ানকে এই শহরে বসবাস করার আমন্ত্রণ জানান। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বেশিরভাগ অ্যাংলো ইন্ডিয়ান দেশ ছেড়ে চলে যান। কিন্তু বর্তমানে অ্যাংলো ইন্ডিয়ান শহরের স্মৃতি রোমন্থন করা ছাড়াও সবুজে ঘেরা মালভূমি অঞ্চলের সিন্গ্ধ প্রকৃতিকে উপভোগ করতে পারবেন।
ম্যাকলস্কিগঞ্জের দর্শনীয় স্থান
১. দুলি - ম্যাকলস্কিগঞ্জের খুব কাছেই অবস্থিত এই দুলি গ্রামটিতে সর্ব ধর্ম সমন্বয় বিষয়টি লক্ষণীয়। কেন? কারণ এই গ্রামের একটি স্থানে একই সাথে মন্দির, মসজিদ, চার্চ এবং গুরুদ্বারা অবস্থিত। ধর্মগত ভাবে বিবিধের মাঝেও এই মিলনটা দেখে পর্যটকরা অবশ্যই মুগ্ধ হবেন।
২. দুগাডুগি নদী - দুগাডুগি নদী দর্শন না করলে এই শহরের সৌন্দর্যকে যথাযথ ভাবে উপভোগ করতে পারবেন না। পাহাড়ে ঘেরা এই নদী তীরবর্তী অঞ্চল থেকে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের রূপটা সত্যি ভীষণ মায়াবী।
৩. ম্যাকলস্কিগঞ্জ ফরেস্ট - শহর থেকে হেঁটে একটু দূর এগিয়ে গেলেই এই জঙ্গলের দেখা পেয়ে যাবেন। এই জঙ্গলে আপনি অজানা গাছ এবং অনেক ধরণের পাখির সন্ধান পাবেন।
৪. সেন্ট জন ক্যাথিড্রাল - এই চার্চটি ১৯৪০ সালে নির্মাণ করা হয়। মূলত অ্যাংলো ইন্ডিয়ানরাই এটি নির্মাণ করেন। এই চার্চ - এ আজও ইংল্যান্ডের স্থাপত্য শিল্প চোখে পড়ে।
৫. জাগৃতি বিহার - প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দর্শন করার জন্য এই স্থানটি আদৰ্শ। গ্রামের দুঃস্থ শিশুদের বসবাস এবং উন্নতিসাধনের জন্য ১৯৭৫ সালে জাগৃতি বিহার নির্মাণ করা হয়। এখান থেকে আপনি চাট্টি নদীর ও দর্শন পেতে পারেন।
এছাড়াও এখানে অ্যাংলোদের ব্যবহৃত বহু পরিত্যক্ত বাড়ির দেখতে পাবেন।
ভ্রমণের শ্রেষ্ঠ সময় - ম্যাকলস্কিগঞ্জ ভ্রমণের জন্য নভেম্বর থেকে মার্চ মাসটি আদর্শ সময়।
কোথায় থাকবেন?
ম্যাকলস্কিগঞ্জে বেশ কয়েকটি হোটেল এবং কটেজ রয়েছে, যেগুলিতে রাত্রিবাসের খরচ - ৮০০ থেকে ৩০০০ টাকা।
কীভাবে যাবেন?
হাওড়া থেকে ট্রেনে চেপে প্রথমে পৌঁছে যান রাঁচি। এরপর রাঁচি স্টেশন থেকে গাড়ি ভাড়া করে ঘন্টা দুয়েকের পথ অতিক্রম করে পৌঁছে যান ম্যাকলস্কিগঞ্জ।
এই শীতে ম্যাকলস্কিগঞ্জ ভ্রমণের প্ল্যান করলে মন্দ হয় না কি বলুন?