অতীতে ভারতবর্ষ একটি ঐতিহ্যবাহী দেশ হিসেবে পরিচিত ছিল। সমস্ত ভারতবর্ষ জুড়ে স্মৃতিসৌধ, মিনার কিংবা ফোর্ট ইত্যাদি দর্শন করার সময় আমাদের প্রত্যেকের মনের মধ্যে অদ্ভুত বিস্ময় জাগে। নিখুঁত শিল্পকার্য থেকে আর্কিটেকচার অথবা স্থাপত্যশিল্প এক অনন্য আধুনিকতার পরিপুষ্ট রূপরেখা পরিদর্শন করা যায়। কিছু কিছু স্মৃতিসৌধ যেমন তাজমহল, কুতুব মিনার, গোলকন্ডা ফোর্ট এবং স্বর্ণ মন্দিরে পর্যটকদের নজরবন্দি হলেও ভারতের বুকে আরও অনেকগুলি ঐতিহাসিক স্থান রয়েছে যা এখনও পর্যটকদের কাছে অজানা। ভারতবর্ষের প্রাচীন ইতিহাসের দিক থেকে এই স্থানগুলোর গুরুত্ব কিন্তু অপরিহার্য।
রাজস্থানের রাজসামান্ড জেলায় অবস্থিত কুম্বলগড়। এই দুর্গটি মূলত মেওয়ার সাম্রাজ্যের একটি অসাধারণ নিদর্শন । এখানে রাজকীয়তা, ইতিহাস, সংস্কৃতির এক অসামান্য মেলবন্ধন খুঁজে পাওয়া যায়। দুর্গে মোট ৩৬০টি মন্দির রয়েছে এর মধ্যে ৩০০টি জৈন মন্দির এবং বাকীগুলো হিন্দু মন্দির হিসেবে পরিচিত। তবে কুম্বলগড় এর প্রধান আকর্ষণ হল কুম্বলগড় অভয়ারণ্য । এখানে আপনি হেরিটেজ ওয়াক ছাড়াও অ্যাডভেঞ্চার অ্যাক্টিভিটিগুলোতে অংশগ্রহণ করতে পারেন কিংবা শুধুমাত্র প্রকৃতি মধুময় সান্নিধ্যকেও উপভোগ করতে পারেন । এই দুর্গেটি সাতটি তোরণদ্বারা পর্যটকদের জন্য সবসময় উন্মুক্ত রয়েছে
সিকিমের পূর্বতন রাজধানী রাব্দেন্স পশ্চিম সিকিমে অবস্থিত। পর্যটনের উদ্দেশ্যে এখানে অনেক কম খরচে হোমস্টে উপলব্ধ আছে। শহরের প্রাচীন মনেস্ট্রি পেমায়ণগৎসেও এই অঞ্চলেই অবস্থিত। একসময় রাব্দেন্স বৌদ্ধদের প্রধান তীর্থক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত ছিল। বর্তমানে যা একটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে, তবে এই ধ্বংসস্তূপ থেকে কিন্তু কাঞ্চনজঙ্ঘার একটা অসাধারণ রূপ প্রত্যক্ষ করা যায়। কম খরচে রাব্দেন্সের ঐতিহাসিক গুরুত্ব, প্রাকৃতিক সান্নিধ্য , সিকিমের সংস্কৃতি এবং সিকিমের খাদ্য চেখে দেখার জন্য এই ভ্রমণের পরিকল্পনাটা ট্রাই করে দেখতে পারেন।
রাজধানী শহর দিল্লিতে অবস্থিত তুঘলকাবাদের সাথে হরপ্পা এবং মহেঞ্জোদরোর ধ্বংসস্তূপের একটা সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়। সমস্ত পর্যটকদের কাছে তুঘলকাবাদ এই শহরের অন্যতম প্রধান আকর্ষণের স্থান অধিকার করে নিয়েছে ।দুর্গের বিশালকার উচ্চতা যে কোনও মানুষের মনে রোমাঞ্চময়তার সৃষ্টি করে। দুর্গের উপর থেকে সম্পূর্ণ দিল্লির একটা সুন্দর দৃশ্যর পর্যবেক্ষণ করা যায় । দুর্গের কৃত্রিম লেক দেখার পরে কারিগরদের বুদ্ধিমত্তা এবং প্রকৌশল দক্ষতা কতটা সমৃদ্ধ ছিল তা সহজেই অনুমিত হয় ।
এই প্রাচীন মন্দিরটির উৎপত্তি প্রাগঐতিহাসিক যুগে, যা ঝাড়খণ্ডের শিকারিপাড়া অঞ্চলের কাছে মালুতি গ্রামে অবস্থিত । সম্পূর্ণ মন্দিরটি ছোট ছোট ৭২টি প্রাচীন টেরাকোটার মন্দিরের সমন্বয়ে গঠিত ।
প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি, এই মন্দিরটি বিশ্বের ১০টি ধ্বংসাবশেষের মধ্যে অন্যতম । প্রাচীনকালে এই মন্দিরটি সংস্কৃতির পীঠস্থান ছিল বললে কোনও ভুল হবে না। একটু ভাল করে লক্ষ্য করলে দেখা যায় মন্দিরের দেওয়ালের রামায়ণ এবং মহাভারতের কাহিনী নতুন বিন্যাসে সজ্জিত রয়েছে ।কথিত আছে এই মন্দিরে কালী পূজার সময় প্রায় ১০০টি ছাগ বলি হত ।
অনেকের কাছেই অজানা যে একসময় বিক্রমশীলা বিশ্ববিদ্যালয় ভারতের একমাত্র গৌরবময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিগণিত হত । বর্তমানে এটি ভাগলপুর থেকে ৫০কিমি পূর্বে অবস্থিত । প্রায় ১০০ একর বিস্তীর্ণ জমির উপর বৌদ্ধদের বৃহত্তম শিক্ষাকেন্দ্রটি নির্মাণ করা হয়েছিল । এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মোট ৫২ টি কক্ষ রয়েছে এবং দুই প্রাঙ্গণের মধ্যবর্তী স্থানে একটি বিশাল স্তূপ রয়েছে । এই বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরির সংগৃহীত বই থেকে ভারতের প্রাচীন ইতিহাস সম্পর্কে অনেক জ্ঞান লাভ করা যেত । হাজার বছর আগের ভারতের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কেমন ছিল, কীভাবে শিক্ষকরা ছাত্রদের শিক্ষা প্রদান করতেন সেই সম্পর্কে জানতে হলে এখানে আপনাকে আসতেই হবে ।
উল্লেখিত - ছবিটি গেম অফ থ্রোন থেকে সংগৃহীত নয় ।
বাসগো দুর্গটি পাহাড়ের কোলে এবং একই সাথে সিন্ধু নদীর তীরে অবস্থিত। নামগয়াল সাম্রাজ্যের পৃষ্ঠপোষকতায় নির্মিত এই দুর্গটি একসময় সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক পীঠস্থান ছিল। বাসগো শহরে অবস্থিত এই দুর্গটি লাদাখের উচ্চতম অঞ্চল এবং নিম্নতম অঞ্চলের বিভাজন ঘটিয়েছে। দুর্গের অন্তরবর্তী তিনটি মন্দিরে বুদ্ধের তিন রূপের দর্শন পাওয়া যায় যায়, এছাড়াও এখানে আপনি দেবী মৈত্রেয়ীর দর্শন পাবেন। দুর্গ থেকে লাদাখের প্রকৃতির একটা অভূতপূর্ব দৃশ্যের সাক্ষী থাকতে পারেন। আত্মোপলব্ধি এবং আত্মিক শান্তি খুঁজে পাওয়ার জন্য এই স্থানটি আদৰ্শ।
ভারতবর্ষের ভুতুড়ে স্থানগুলোর মধ্যে প্রধান হল ভাণগড় দুর্গ। তবে আপনি যদি এই দুর্গের ঐতিহাসিক গুরুত্বের সন্ধানে আসেন তাহলে ভুতের চেয়ে ১০০টিরও বেশি দুর্লভ ঐতিহাসিক কাহিনি খুঁজে পাবেন। এই স্মৃতি সৌধটি বিকেল ৫টা পর্যন্ত পিকনিক এর জন্য আদৰ্শ স্থান হিসেবে পরিগণিত হয়, কিন্তু সন্ধে নামার সঙ্গে সঙ্গেই শোনা যায় একজন বৃদ্ধ পুরোহিত লণ্ঠন হাতে সমস্ত দুর্গ ঘুরে বেড়ান।
প্রাচীনকালে এই দুর্গটি নির্মাণ করেন শাওয়াই মাধো সিং। কথিত আছে শহর টি কোনো পবিত্র মানুষের অভিশাপে বিপর্যস্ত। আর সেই অভিশাপের কারণেই এখনও দুর্গের কোনও কক্ষে স্থায়ী ছাদ নেই। কক্ষগুলোর ছাদ বর্তমানে টিন জাতীয় কোনও বস্তু দ্বারা নির্মাণ করা আছে ।তবে আজবগড় শহরের এই দুর্গে অনেক বিখ্যাত বলিউড সিনেমার শুটিং হয়েছে যেমন করণ -অর্জুন , হম সাথ সাথ হ্যায় ইত্যাদি।
ভারতের অতীত সমন্ধে বর্তমানে জ্ঞান লাভ করা অভিজ্ঞতাটা কতটা রোমহর্ষক হল লিখে জানাতে কিন্তু ভুলবেন না।