গরম চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে জানলা দিয়ে বরফে মোড়া পাহাড়চূড়ার সৌন্দর্য দেখার মজাই আলাদা। কিন্তু এই দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্যের পিছনে ছুটতে গিয়ে সামনে এসেছে কিছু ঋণাত্মক প্রভাব। অতি-ট্যুরিজম, পাহাড়ি গ্রামগুলোতে পর্যটকদের লাগামছাড়া ভিড় আর বে-আইনি ব্যবসার বাড়বাড়ন্ত হিমাচল প্রদেশ এবং উত্তরাখণ্ডের গ্রামগুলোকে নষ্ট করে দিচ্ছে। তাই এই রাজ্যগুলোকে একটু বিশ্রাম দিতে, চলুন না ঘুরে আসি নর্থ ইস্টের বিভিন্ন রাজ্য থেকে।
উত্তরপূর্ব ভারতবর্ষের অবিস্মরণীয় সৌন্দর্য, অসাধারণ নদীমাতৃক উপত্যকাগুলোর বিস্তার আর স্নিগ্ধ মনোরম পাহাড়ি জীবনযাত্রা সত্যিই দেখার মতো। আর যদি স্থানীয় জীবনশৈলীর ভিতর ডুবে গিয়ে পাহাড়ি জীবনের আস্বাদ নেওয়াই হয় আপনার চরম উদ্দেশ্য, তাহলে আপনার জন্যে রইল বেশ কিছু মনকাড়া এয়ার বিএনবির সন্ধান।
দেখে নিন, নর্থ ইস্ট ট্রিপে, আপনার জন্যে কী কী অপেক্ষা করছে
উমিয়াম লেকের বোটহাউস, মেঘালয়
কাদের জন্যে : যারা খুঁজছেন একটু অফবিট অ্যাডভেঞ্চার
বিশেষত্ব : বোটহাউসে একরাত কাটানোর অভিজ্ঞতা আপনার মেঘালয় ভ্রমণকে নিয়ে যাবে অন্য মাত্রায়। চারিদিকে উমিয়াম লেকের স্বচ্ছ নীল জল, তার একপ্রান্তে এক জনবিরল দ্বীপ, আর সেই দ্বীপে নোঙর ফেলা এক সুন্দর বোটহাউসে রাত কাটানোর সুযোগ, শুধুই আপনার। নাগা-খাসি পরিবারের অতিথি আপ্যায়ন কিন্তু বাকি দ্বীপের নির্জনতার কথা ভুলিয়ে দেবে। শহুরে হইচই থেকে দূরে গিয়ে নিভৃতে সময় কাটাতে চাইলে, এখানেই আসতে পারেন বন্ধুবান্ধব, পরিবার বা একলা দুজনে।
খরচ : ২৫০০ টাকা প্রতিদিন, দুই জনের জন্যে
বোটহাউস-এ থাকতে বুকিং করতে পারেন এখান থেকে
এস.ইউ.ভি গাড়ি আর তার ছাদে তাঁবু, শিলং
কাদের জন্যে : অপ্রেমী আর সোলো ট্র্যাভেলার
বিশেষত্ব : ব্যাপারটা আসলে একটি এস.ইউ.ভি গাড়ি, আর তার মাথার ওপর কিন্তু তাঁবু খাটানো। চলমান বাড়ি-ও বলতে পারেন। উত্তরপূর্ব ভারতে ঘুরতে যাওয়ার ক্ষেত্রে এটাই বোধহয় সবচেয়ে ভাল পদ্ধতি। গাড়িটির পথ চলা শুরু হয় শিলং থেকে, প্রতি রাতে নদী পাড়ে বা লেকের ধারে ক্যাম্পিং করার পাশাপাশি ঘুরিয়ে আনা হয় মেঘালয়ের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান। গাড়ির উপরে ব্যবস্থা আছে লাক্সারি রুফটপ টেন্টের, যার ভিতরে পাবেন বার্বেকিউ গ্রিল, যথেষ্ট কাঠকয়লা, ক্যাম্পিং চেয়ার, কাঁটা চামচ, এবং মাছ ধরার সমস্ত সরঞ্জাম। স্বল্পমূল্যে আপনি বাইসাইকেল বা কায়াক এবং অন্যান্য জিনিসপত্রও পাবেন।
খরচ : ২৯৯৯ টাকা প্রতিদিন, দুই জনের জন্যে
এস.ইউ.ভি তাঁবুতে থাকতে বুকিং করতে পারেন এখান থেকে
সাপোই চা বাগান, অসম
কাদের জন্যে : সপরিবারে বা বন্ধুবান্দবদের নিয়ে যাওয়ার জায়গা
বিশেষত্ব : মাইলের পর মাইল বিস্তৃত চা বাগানের মাঝে ব্রিটিশ স্টাইল বাংলোর মধ্যে থাকার মজা পেতে চান, তাহলে চলে আসুন সাপোই চা বাগানের এস্টেটে। চা বাগানের ঠিক মাঝখানে কয়েক একর জমির উপরে তৈরি এই বাংলোগুলো রাজকীয়, কিন্তু আছে ঘরোয়া আমেজ। বংশপরম্পরায় পারিবারিক ভাবে সংরক্ষিত এই এস্টেটের মধ্যে থাকার মানে নিজেকে একটি অসম্ভব ভাল স্টেকেশন উপহার দেওয়া। চা বাগানে থাকাকালীন আপনি চা পাতা তুলতে পারেন, চা উৎপাদন এবং প্যাকেজিংয়ের বিভিন্ন ব্যাপারে জানতে পারেন এবং সবমিলিয়ে চা চাষের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে নিতে পারেন।
খরচ : ২৭৪৯ টাকা প্রতিদিন, দুই জনের জন্যে
টি এস্টেটে থাকতে বুকিং করতে পারেন এখান থেকে
আয়াং উকুম (নদীর ধারে বাঁশের কটেজ), অসম
কোথায় : নতুন কুলামরা, অসম
কাদের জন্যে : প্রকৃতিপ্রেমী পর্যটক, যারা পরিবেশ সচেতন
বিশেষত্ব : লুইট নদীর পাড়ে অবস্থিত এই বাঁশের কটেজের চারিদিকে গাছপালা এবং ফুল ফলের সমাহার। মাজুলি নদী দ্বীপের কাছের এই কটেজগুলো প্রকৃতিপ্রেমিকদের প্রকৃতির বুকে হারিয়ে যাওয়ার জন্যে আদর্শ। প্রতি কটেজে আছে দুটি করে বিছানা এবং দুটি করে বারান্দা, যেখান থেকে প্রতিদিন সকাল এবং সন্ধ্যায় মনোমুগ্ধকর সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দেখতে পাবেন। ব্রেকফাস্টটুকুও আপনি সারতে পারেন বারান্দায় বা ইচ্ছে করলে একেবারে নদীর পাড়েই।
খরচ : ১৪৯৯ টাকা প্রতিদিন, দুই জনের জন্যে
আয়াং উকুমে থাকতে বুকিং করতে পারেন এখান থেকে
ইংলিশ কটেজের অ্যাটিক, পশ্চিমবঙ্গ
কোথায় : দার্জিলিং, পশ্চিমবঙ্গ
কাদের জন্যে : পরিবার, দম্পতি বা সোলো অ্যাডভেঞ্চারদের জন্যে
বিশেষত্ব : শীতকালে উষ্ণ, গরমকালে হওয়া বাতাস খেলে, যেন যথার্থ এক প্রাচীন ব্রিটিশ কটেজ। নর্থ ইস্ট ইন্ডিয়া বেড়ানোর ফাঁকে টুক করে দার্জিলিং ঘুরে যাওয়ার ইচ্ছে হলে, এখানে অবশ্যই থেকে দেখতে পারেন। নেপাল, সিকিম, ভুটানের পর্বতমালার সরাসরি ভিউ বলুন বা রাজকীয় কাঞ্চনজঙ্ঘার মায়াময় রূপ সবই পাবেন এখানে। সঙ্গে থাকবে রোদ পোয়ানোর জন্যে রৌদ্রস্নাত বাগান, সূর্যোদয় সূর্যাস্ত দেখার জন্যে অপূর্ব স্কাই ডেক। শহরের সকল সুবিধেই এখানে পাবেন, তবে শহর থেকে অনেক দূরে পাহাড়ের কোলে।
খরচ : ৪৫০০ টাকা প্রতিদিন, দুই জনের জন্যে
ইংলিশ কটেজে থাকতে বুকিং করতে পারেন এখান থেকে
বার্ডসং হোমের মায়াবী স্টুডিও, পশ্চিমবঙ্গ
কোথায় : মিরিক, দার্জিলিং, পশ্চিমবঙ্গ
কাদের জন্যে : শারীরিকভাবে সবল পর্যটক, যারা খুঁজছেন বিলাস এবং শান্তি, একসঙ্গে
বিশেষত্ব : রাস্তা থেকে দূরে পাহাড়ি ঢাল বরাবর প্রকৃতির মাঝে এই নির্জন নিরিবিলি থাকার জায়গা, বার্ডসং হোম একটি অত্যন্ত সুন্দর এবং মনোরম হোম-স্টে। বার্ডসং এর কাঠের ডেক এবং ডাইনিং এরিয়া থেকে আপনি দেখতে পাবেন সামনের পর্বতমালার সম্পূর্ণ শোভা। যেতে পারেন নেচার হাইকে, আছে কমলালেবুর বাগান। হোমস্টের সুবিশাল রান্নাঘরটিকেও আপনি নিজের প্রয়োজনমতো ব্যবহার করতে পারবেন। পরেরবার মিরিক বেড়াতে গেলে, এই জায়গাটির কথা কিন্তু ভুলবেন না।
খরচ : ৩৫০০ টাকা প্রতিদিন, দুই জনের জন্যে
বার্ডসং হোমে থাকতে বুকিং করতে পারেন এখান থেকে
আর্থি ডোয়েলিং, পশ্চিমবঙ্গ
কোথায় : ৮ মাইল গ্রাম, দার্জিলিং, পশ্চিমবঙ্গ
কাদের জন্যে : পরিবেশ সচেতন প্রকৃতি প্রেমিকদের জন্যে আদর্শ
বিশেষত্ব : শহুরে কোলাহলের বন্ধন কাটিয়ে একচিলতে প্রকৃতিকে ফিরে পেতে হলে চলে আসতে হবে ছিমছাম ছোট্ট এই হোম-স্টেতে। সম্পূর্ণরূপে হ্যান্ডক্রাফটেড এই বাড়িটি তৈরি করেছেন স্থানীয় শিল্পীরা, স্থানীয় কাঠ, বাঁশ এবং মাটি ব্যবহার করে। পুরনো দিনের শিল্পকলা এবং সংস্কৃতিকে মাথায় রেখে তৈরি এই মাটির ঘরগুলোতে প্রকৃতির পাশাপাশি আপনি পাবেন আধুনিক হলিডে হোমের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা।
খরচ : ৩৯০০ টাকা প্রতিদিন, দুই জনের জন্যে
আর্থি ডোয়েলিং-এ থাকতে বুকিং করতে পারেন এখান থেকে
প্যানোরামিক ভিউ সমৃদ্ধ লফ্ট, সিকিম
কোথায় : গ্যাংটক, সিকিম
কাদের জন্যে : পরিবার, দম্পতি বা বন্ধুবান্ধব
বিশেষত্ব : ভাবুন, পাহাড়ি শহরের পর্যটকদের ঠিক মাঝেই রয়েছে এমন এক জায়গা যেখানে পাবেন একরাশ শান্তি আর মুগ্ধতা, যা কিন্তু সেই পর্যটকদের ভিড় আর কোলাহলের থেকে মুক্ত। সিকিমের এই লফ্ট তৈরি হয়েছে সেভাবেই, ফ্লোর থেকে সিলিং অবধি উঁচু জানলা দিয়ে আপনি দেখতে পাবেন সম্পূর্ণ রানকা ভ্যালি আর কাঞ্চনজঙ্ঘার মায়াবী রূপ। গ্যাংটকের সকল প্রধান দ্রষ্টব্য হতে হাঁটা পথের দূরত্বে লুকনো এই লফ্টটি শহরের মধ্যে থেকেও প্রকৃতির বুকে হারিয়ে যাওয়ার এক ঠিকানা।
খরচ : ১০০০০ টাকা প্রতিদিন, দুই জনের জন্যে
লফ্ট বুকিং করতে পারেন এখান থেকে