গ্রীষ্মের তপ্ত দাবদাহের পর যখন খুব সুন্দর একটি মনোরম পরিবেশের সৃষ্টি হয়, তখন মনে কেমন যেন উৎসবের অনুভূতি জাগে। বিশেষ করে উত্তর ভারতের শহরগুলোতে, এই সময় খাবার ডেলিভারি কর্মীরা খুব ব্যস্ত হয়ে পরেন বাড়িতে বাড়িতে খাবারের যোগান দিতে আবার রেস্তোরাঁয় আসা সমস্ত অতিথিদের আপ্যায়নের জন্য তারা সর্বদা হাসিমুখে খাদ্য এবং পানীয় পরিবেশন করে চলে। গ্রীষ্মের তপ্ত পরিবেশ খুব কম সময়ের জন্য আরাম দেয়...
মুন্নার হিল স্টেশন
ভারতে গ্রীষ্মকালীন ঘুরতে যাওয়ার জন্য উপযুক্ত জায়গা যদি আপনি খুঁজতে চান; তাহলে হয়তো গুগলে মুন্নার-এর নাম খুব একটা শীর্ষ তালিকায় খুঁজে পাবেন না। কিন্তু মুন্নার-এর প্রাকৃতিক পরিবেশ যে কোনও পর্বতপ্রেমীকে প্রলুব্ধ করবে। সুতরাং সৌন্দর্য্যের রানি মুন্নারকে যদি গ্রীষ্মকালীন স্বল্প খরচের প্রধান পর্যটন স্থান বলা হয়, তাহলে হয়তো খুব ব্যতিক্রম হবে না।
ভ্রমণের আদর্শ সময় - জুন -অগাস্ট মাস
গন্তব্যে পৌঁছনোর সুলভ পথ
কোচি শহর থেকে ট্যাক্সি বা বাস ভাড়া করে গন্তব্যে খুব তাড়াতাড়ি পৌঁছনো যায়।
জিরো ভ্যালি ট্যুরিজম (অরুণাচল প্রদেশ)
ইন্টারনেটের দুনিয়ায় সৌন্দর্য্যবর্ধনকারী জায়গাগুলোর মধ্যে অন্যতম হল জিরো। উত্তর-পূর্ব ভারতের এই জায়গাটির ঘন সবুজ পাহাড়,অনন্য গ্রাম অথবা বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী এবং মনোমুগ্ধকর পরিবেশ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের এক প্রতিলিপি হিসেবে ধরা দেয়। যদি আপনি একজন দুঃসাহসিক অভিজ্ঞতা অর্জনকারী হন বা একজন চিত্রগ্রাহক, একজন প্রকৃতপ্রেমী কিংবা শান্তিপ্রিয় মানুষ হন; তবে অবশ্যই জিরোতে আপনার ঘুরতে যাওয়া দরকার, এবং এরপরই আপনি অনুভব করতে পারবেন স্বল্প খরচে এত সুন্দর জায়গা দেখার অনুভূতি।
ভ্রমণের আদর্শ সময় - মে-জুন মাসে
গন্তব্যে পৌঁছানোর সুলভ পথ -
গুয়াহাটি থেকে জিরো ভ্যালিতে যাওয়ার জন্য রাত্রিকালীন বাসে চেপে অথবা ইটানগর থেকে ক্যাবে যাওয়া যায়।
কাঁসার দেবী মন্দির
কোন পার্বত্য স্টেশনে আমরা শুধুমাত্র গ্রীষ্মের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যই যাই না,বরং প্রতিদিনের জীবনের একঘেয়েমি দূর করতে এবং শান্তির খোঁজে এইসব জায়গায় ভ্রমণ করে থাকি। উত্তর ভারতের সমস্ত পর্যটন স্থান কিন্তু সমানভাবে এই মনোরম শোভা দর্শনে সফল নয়। উত্তরাখণ্ডের আলমোড়ার কাছে অবস্থিত কুমাওনি গ্রামের অন্তর্গত কাঁসার দেবী অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র। কাঁসার দেবীর ক্র্যাংক'স রিজ থেকে নন্দা দেবী এবং পঞ্চচুলির সুদূরপ্রসারী দৃশ্য আপনাকে একটু শান্তি আর প্রশস্তির পথ দেখাবে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের দিক থেকে বিচার করলে এই পার্বত্য স্টেশনটিও খুবই স্বল্পব্যয়ী।
ভ্রমণের আদর্শ সময় - মে-জুন মাসে
গন্তব্যে পৌঁছানোর সুলভ পথ -
কাঠগোদাম স্টেশনে নেমে ট্যাক্সি বা বাসে করে আলমোড়া যাওয়া যায়। বাস স্ট্যান্ড থেকে আলমোড়া মাত্র ৮ কিলোমিটার।
লেপচা জগৎ
পশ্চিমবঙ্গের অন্তর্গত লেপচাঘাট জায়গাটির নাম হয়তো অনেকেই শুনে থাকবেন, কারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে ভরপুর এই ছোট্ট শহরটি পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং জেলা থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত, যা সর্বদা আপনার মনোরঞ্জন করে চলেছে। এই স্থানে অবস্থিত কাঞ্চনজঙ্ঘা শৃঙ্গ, ঘন সবুজে ঘেরা পর্বত, কুয়াশাচ্ছন্ন লেপচাঘাট ক্রমশ জায়গাটিকে করে তুলেছে আকর্ষণীয় যা দার্জিলিংয়ের লোকালয় থেকে এটিকে বিচ্ছিন্ন করে সম্পূর্ণ নতুন রূপ দান করেছে।
ভ্রমণের আদর্শ সময় - মে-জুন মাস
গন্তব্যে পৌঁছানোর সুলভ পথ
সড়কপথে দার্জিলিং থেকে ১৯ কিলোমিটার দূরে লেপচাঘাট অবস্থিত। এছাড়াও নিকটস্থ বিমানবন্দর বাগডোগরা থেকে এই পার্বত্য স্টেশনে পৌঁছনোর যায়।
উসমার্গ
গ্রীষ্মকালীন পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে কাশ্মীরে শ্রীনগর এবং গুলমার্গই শুধু বিখ্যাত নয়। দক্ষিণ শ্রীনগর থেকে মাত্র ৪৫ কিলোমিটার দূরে এবং ২৩৯০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত উসমার্গ মনোরম এবং জনমানবশূন্য একটি গন্তব্য স্থান, যা গ্রীষ্ম ঋতুর জন্য সুযোগ্য। এই জায়গায় আপনি শুধু সবুজ তৃণভূমি নয় তুষারে ঢাকা পর্বত এবং কাশ্মীরের আদর্শ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যকে উপলব্ধি করতে পারবেন এবং নদী পথ ধরে ৮ কিলোমিটার ট্রেকিং করতে পারবেন। কথিত আছে এই উসমার্গে ভগবান যীশুখ্রীষ্ট তাঁর জীবনের কিছুটা সময় কাটিয়ে ছিলেন। কিন্তু এখনো পর্যন্ত এই স্থান শ্রীনগর বা গুলমার্গ মত বিখ্যাত নয়।
ভ্রমণের আদর্শ সময় - মে- সেপ্টেম্বর মাসে
গন্তব্যে পৌঁছনোর সুলভ পথ -
শ্রীনগর বিমানবন্দর থেকে উসমার্গ মাত্র ৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। তাই বিমান পথে এসে পৌঁছনো সবথেকে সুবিধাজনক। এছাড়াও বাসে শ্রীনগর পৌঁছে সেখান থেকে আবার লোকালয়ের বাস বা ট্যাক্সি করে উসমার্গে পৌঁছনো যায়।
খাজ্জিয়ার
বিখ্যাত জায়গা ডালহৌসি থেকে মাত্র ২২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ছোট্ট পার্বত্য শহরটি "ভারতবর্ষে ক্ষুদ্র সুইজারল্যান্ড" হিসেবেই পরিচিত। হিমাচল প্রদেশের মানালি সিমলা এবং মকলেওড গঞ্জ-এর তুলনায় অপেক্ষাকৃত অনেক কম খরচায় এই স্থানের সৌন্দর্য্য উপভোগ করা যায়। সবুজ তৃণভূমি চারিদিকে ঘন পাইন গাছের মধ্যে খাজ্জিয়ার হ্রদটি অবস্থিত। ডালহৌসি থেকে খাজ্জিয়া যাওয়ার পথে দাইকুন্ড শৃঙ্গ দেখতে পাওয়া যায়। তাই পর্যটকদের কাছে এই জায়গাটি আর বাকি জায়গাগুলোর তুলনায় খুবই সস্তা বলে মনে হয়।
ভ্রমণের আদর্শ সময় - মে-জুলাই মাসে
গন্তব্যে পৌঁছানোর সুলভ পথ
বাস বা ট্যাক্সি করে ডালহৌসি পৌঁছে তারপর লোকাল বাস বা ট্যাক্সিতে খাজ্জিয়ার পৌঁছনো যায়।
তাওয়াং
সবশেষে বলবো অরুণাচল প্রদেশের পার্বত্য স্টেশন তাওয়াং এর কথা। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩০৪৮ মিটার উপরে অবস্থিত জাকজমকপূর্ণ এই শহরটি পর্যটকদের কাছে শুধুমাত্র ঘরে বসে মনোরম সৌন্দর্য্য উপভোগ করার জন্যই নয় বরং বহু পর্যটক এখানে শুধুমাত্র আসেন প্রাচীন বৌদ্ধ মন্দির দর্শনের জন্য। তাওয়াং,আগত পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় দ্বিতীয় গ্রীষ্মকালীন পর্যটন কেন্দ্র।
ভ্রমণের আদর্শ সময় - মে-জুলাই মাস
গন্তব্যে পৌঁছনোর সুলভ পথ
সড়কপথে একমাত্র তাওয়াং-এ পৌঁছানো যায়। সবথেকে ভালো হয় আসামের তেজপুর অথবা অরুণাচল প্রদেশের বোমদিল্লা থেকে ভাড়া করা ক্যাব করে ৯-১০ ঘণ্টার পথ পেরোলেই এই সুন্দর জায়গার দর্শন পাওয়া যাবে।
তাহলে, যদি আপনি ভেবে থাকেন এই গ্রীষ্মকালে আপনার নতুন করে খুঁজে বের করার মতো কোনও কিছুই নেই, তাহলে বলব এই সমস্ত স্বল্প ব্যয়ী স্থানগুলোকে দেখার জন্য ঝটপট গুছিয়ে ফেলুন আপনার ব্যাগটি, আর এরপর অবশ্যই আমাকে জানাবেন সত্যিই আমাদের ভারতবর্ষ কি সৌন্দর্য্যের দিক থেকে অতুলনীয় নয়?