পর্যটক হিসাবে আপনি অভিজ্ঞ হন বা অনভিজ্ঞ, আমরা নিশ্চিত যে ঘুরতে যাওয়ার নানান দিকের মধ্যে রোডট্রিপ আপনার ভীষণ ফেভারিট। মাখনের মতো রাস্তার ওপর গাড়ি ছুটিয়ে, মনের মতো গানের সঙ্গে গলা মিলিয়ে, টুকিটাকি স্ন্যাকস খেয়ে রোড ট্রিপে বেরিয়ে পরার মজাই আলাদা, কি বলেন? কিন্তু রোডট্রিপের মতো রোমাঞ্চকর আর রোমান্টিক ব্যাপারও কপালদোষে হয়ে উঠতে পারে বিভীষিকাময়! আসুন জেনে নেওয়া যাক ভারতবর্ষের এমন কয়েকটি হাইওয়ে আর রাস্তার খবর, যেগুলি ভূতুড়ে হিসেবে কুখ্যাত। কোনওদিন এই রাস্তাগুলোতে গাড়ি চালাতে চালাতে, বিশেষ করে রাতের বেলাতে, কোনও সাহায্যপ্রার্থীর ইশারায় না থামাই শ্রেয়।
কোথায় : মানালি - লেহ্ হাইওয়ে
প্রতিটি বাইকার আর পর্যটকেরই স্বপ্ন অন্তত একবার মানালি - লেহ্ হাইওয়েতে ট্রিপে যাওয়ার। কিন্তু প্রচন্ড হাই-অলটিটিউড এই দুর্গম রাস্তার খারাপ অবস্থা আর সর্পিল বাঁকগুলির মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে আরও এক বিপদ। এই হাইওয়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় অংশ হল গাতা লুপস। ২১টি আলপিনের মতো সরু বাঁক দিয়ে তৈরি এই পথসারি চলে যায় ১৫,৫৪৭ ফুট উঁচুতে অবস্থিত নাকিলা পাসে। শোনা যায়, এই গাতা লুপসেই আছে অশুভ আত্মাদের আনাগোনা। স্থানীয় গল্প অনুযায়ী এই আত্মা লেহ্-গামী এক ট্রাক ড্রাইভারের সহকর্মীর। মাঝরাস্তায় ট্রাক খারাপ হওয়ার, পরে ট্রাক ড্রাইভার বেরিয়ে পড়েন মেকানিক খুঁজতে, আর হঠাৎ করেই শুরু হয় অতি ভয়ানক এক স্নো-স্টর্মের। চূড়ান্ত ঠান্ডায় দিনের পর দিন সেই সহকর্মী খাদ্য বা পানীয় না পেয়ে আস্তে আস্তে ঢলে পড়েন মৃত্যুর কোলে। তাঁর দেহের সমাধি করা হয় ওইখানেই, গাতা লুপসের রাস্তাতে। তারপর থেকেই মাঝে মধ্যেই পর্যটকরা দেখেছেন সেই আত্মাকে, খাবার আর জলের সন্ধানে হাহাকার করতে। বর্তমানে তার স্মৃতির উদ্দেশ্যে গাতা লুপসে খোলা হয়েছে এক মন্দির, তার আত্মার শান্তিকামনা করে পর্যটকরা সেখানে রেখে আসেন খাবার বা জলের বোতল।
কোথায় : তামিলনাড়ু
দুর্ধর্ষ ডাকাত ভীরাপ্পানের খাস এলাকা ছিল যে জঙ্গল, তার মধ্যে দিয়ে বেড়াতে যাওয়ার আগে কিন্তু দু'বার ভাববেন। ন্যাশনাল হাইওয়ে ২০৯-এর অন্তর্গত এই সড়কপথ তামিলনাড়ুর সবচেয়ে ভূতুড়ে জায়গা হিসাবে পরিচিত। পর্যটকরা প্রায়ই এখানে দেখতে পেয়েছেন ভূত, উড়ন্ত লণ্ঠনের মতন দৃশ্যের, সারা রাস্তা জুড়ে শুনতে পেয়েছেন রক্ত জল করে দেওয়া আর্তনাদ।
কোথায় : মুম্বই
মুম্বই-এর সবচেয়ে ভূতুড়ে জায়াগা হিসেবে খ্যাত এই আরে কলোনিতে ভূতুড়ে কাজকর্মের সাক্ষী থেকেছেন বহু বহু মানুষ। দিনের বেলায় আরে কলোনি দেখতে যতই অতিসাধারণ হোক না কেন, রাত বাড়লেই আরে কলোনি হয়ে ওঠে ভয়াবহ। তখন শুধুই শুনশান অন্ধকার রাস্তা, চারপাশে উঁচু গাছের সারি, আর বিভীষিকাময় নিস্তব্ধতা। এরকম অন্ধকারের মধ্যেই নাকি দেখা পাওয়া গেছে এক মহিলার, একলা রাস্তায় যিনি পর্যটকদের কাছে চেয়েছেন লিফট। আপাতদৃষ্টিতে নিরিহ এই মহিলা নাকি গাড়িতে উঠেই তার ভয়ঙ্কর স্বরূপ ধারণ করেন। অনেকে এই রাস্তায় দেখতে পেয়েছেন মৃতদেহ, শুনতে পেয়েছেন শিশুদের অশুভ কান্নার আওয়াজ।
৪. দিল্লি ক্যান্টনমেন্ট রোড
কোথায় : দিল্লি
সম্ভবত দিল্লির সবচেয়ে বিখ্যাত ভূতুড়ে রাস্তা দিল্লি ক্যান্টনমেন্ট রোড। বহু মানুষ এই রাস্তাটি এড়িয়ে চলেন, কিন্তু বহু অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমী আবার ভূত দেখার নেশায় ছুটে আসেন এই রাস্তায়। গুজব বলে, মাঝরাতের পরে এই রাস্তায় গাড়ি চালালে নাকি দেখা মিলবে ভূতের গল্পের সেই অতিপরিচিত স্বরূপ, সাদা শাড়ি পরা এক রহস্যময়ী নারীর। এই গল্প তো আমাদের সবারই পরিচিত। বহু পর্যটকদের জবানিতে শোনা গেছে এই মহিলার লিফট চাওয়ার গল্পের। আপনি যদি লিফট না দিয়ে এড়িয়ে চলেন গাড়ি ছুটিয়ে, তাহলে দেখবেন গাড়ির গতির সাথে তাল মিলিয়ে আপনার সঙ্গেই ছুটে চলেছে সেই অশরীরী।
৫. কশেডি ঘাট
কোথায় : মুম্বই - গোয়া - কোচি হাইওয়ে
মুম্বই-গোয়া রোডট্রিপে যাওয়া হয়ে উঠেছে যেকোনও বন্ধুত্বের রীতি। জনপ্রিয় ফিল্ম আর মিডিয়ার সাহায্যে এই গোয়া ট্রিপের রোমান্টিসিজম হয়ে উঠেছে আমাদের একান্ত আপন। শহুরে গ্লানি থেকে অনেক দূরে অঢেল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে দুদিকে রেখে, এই রাস্তা হয়ে উঠেছে সত্যি অপরূপ সুন্দর। কিন্তু আপনি যদি এসে পড়েন কশেডি ঘাটের কাছে, তাহলে কিন্তু বলব হৈ হুল্লোড় থামিয়ে, যত তাড়াতাড়ি পারেন বেরিয়ে পড়ুন এই অঞ্চল থেকে। শোনা যায় এই ঘাটেই আছে এমন এক অতৃপ্ত আত্মা, যে চেষ্টা করবে আপনার গাড়ি থামানোর। আর আপনি যদি গাড়ি না থামান, তাহলে দুর্ঘটনা অবধারিত।
কোথায় : নাসিক, মহারাষ্ট্র
কাসারা ঘাটের রাস্তা দিয়ে যাওয়ার মানেই হচ্ছে ঘন সবুজ পারিপার্শ্বিক আর দিগন্ত বিস্তৃত পাহাড়ি পরিবেশের রূপে মোহিত হয়ে ওঠা। কিন্তু সাবধান, ভাগ্য খারাপ থাকলে হয়তো দেখতে পাবেন গাছের ডালে বসে একলা একলা খিলখিলিয়ে হেসে উঠছে মুণ্ডকাটা এক নারীমূর্তি। কথিত আছে এই রাস্তা তৈরি হওয়ার সময়েই বহু কর্মরত শ্রমিক তাদের প্রাণ হারান এবং তাদের অতৃপ্ত আত্মারা আজও এই জায়গার মায়া কাটিয়ে উঠতে পারেনি। অমাবস্যার সময় এই রাস্তায় ভূত দেখার সম্ভাবনা বেড়ে যায় বহুগুণ। তাই এই রাস্তায় থাকুন সদাসতর্ক, পারলে পরে যান পুরোপুরি এড়িয়ে।
কোথায় : ঝাড়খণ্ড
কখনও কোনও অভিশপ্ত রাস্তার কথা শুনেছেন? নিজের চোখেই দেখতে পাবেন এমন এক অশুভ রাস্তা যদি আপনি যান রাঁচি - জামশেদপুর ন্যাশনাল হাইওয়ে ৩৩-এর ওপর দিয়ে। ভূত আর আত্মাদের অশুভ শক্তির হাত থেকে বাঁচতে গেলে আপনাকে থামতে হবে এই রাস্তারই দু'পাশের দুই মুখোমুখি মন্দিরের মধ্যে। শোনা যায় এই দুটি মন্দিরেই পুজো না দিয়ে যদি আপনি এগিয়ে চলেন, তাহলে দুর্ঘটনা অবধারিত। নাস্তিক হন বা আস্তিক, এই রাস্তার উপর দিয়ে চলার সময়ে আপনার মতাদর্শগুলি একটু পাল্টে নেওয়াই ভাল।
তাই পরের বার যখন রোড ট্রিপে বেরোবেন, রুটটা কিন্তু সাবধানে বেছে নেবেন, কে জানে, বেড়াতে যাওয়ার রাস্তাই হয়তো হয়ে উঠতে পারে হাইওয়ে টু হেল!