ভারতের উত্তর পূর্ব প্রান্তের সেভেন সিস্টারের সম্বন্ধে কিছু অজানা তথ্য জেনে নেওয়া যাক!

Tripoto

আজকে চলুন আপনাকে ঘুরিয়ে নিয়ে আসি ভারতের উত্তর-পূর্ব প্রান্তের রহস্যে ঘেরা ৭টি রাজ্যের সঙ্গে। আমাদের দেশের এই অংশটি এখনও মূল ভারতের পর্যটনের নজর থেকে আড়ালে রয়েছে এবং নিঃসন্দেহে এই রাজ্যগুলিতে বেড়াতে গেলে আপনি একদম অনন্য অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হবেন।

Photo of ভারতের উত্তর পূর্ব প্রান্তের সেভেন সিস্টারের সম্বন্ধে কিছু অজানা তথ্য জেনে নেওয়া যাক! 1/1 by Saheli Bera
শহুরে পরিবেশের একটি দৃশ্য (ছবি সৌজন্যে : শান্তনু সেন)

এই ৭ টি রাজ্য বা সেভেন সিস্টারস বলতে ঠিক কোনগুলোকে বোঝানো হয়েছে এবং কেন এই রাজ্যগুলিকে একসঙ্গে সেভেন সিস্টার বলা হয়ে থাকে? এই নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে...

ত্রিপুরার একজন বিখ্যাত সাংবাদিক, জ্যোতি প্রকাশ সাইকিয়া ১৯৭২ সালের একটি রেডিও টক-শোতে 'ভারতের সেভেন সিস্টার' নামটি প্রথমবার উল্লেখ করেছিলেন। নামটি এই সাতটি রাজ্যের উদ্বোধনের সময়কালে সুন্দরভাবে মানিয়ে গিয়েছিল- অরুণাচলপ্রদেশ, মেঘালয়, অসম, মণিপুর, মিজ়োরাম, নাগাল্যান্ড এবং ত্রিপুরা। সাংবাদিক জ্য়োতিপ্রকাশ সাইকিয়া এই সাতটি রাজ্যের উপরে বইও লেখেন যার নাম 'ল্যান্ড অফ সেভেন সিস্টারস' এবং এই বইটির মাধ্যমেই 'সেভেন সিস্টার' নামটি পরবর্তী সময়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করে।

বৈচিত্রকে উপভোগ করতে গেলে অন্তত একবার হলেও ঘুরে আসতে হবে রাজ্যগুলো থেকে। যদিও রাজ্যগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক দিক দিয়ে অনেক সাদৃশ্য রয়েছে কিন্তু ভৌগোলিক দিক দিয়ে একটি অন্যটির থেকে একদম আলাদা এবং নিজের মতো করে সুন্দর।

যদিও এই সেভেন সিস্টারস মূল ভারতের মাত্র সাত শতাংশ এলাকা জুড়ে রয়েছে কিন্তু এখানকার সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় কিছু রীতি-নিয়মের সাদৃশ্যতা এই অঞ্চলগুলোতে দেখা যায়।

এখানে এই সাতটি রাজ্যের সম্বন্ধে কিছু মৌলিক তথ্য এখানে দেওয়া হল যাতে আপনি আলাদা ভাবে বা একসঙ্গে এই রাজ্যগুলি ঘুরে আসতে পারেন খুব সহজেই।

১। অসম

অসমের মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ (ছবি সৌজন্যে : ফ্লিকার)

Photo of Assam, India by Saheli Bera

বৃষ্টিভেজা পথের ছবি (ছবি সৌজন্যে : অশ্বিন কুমার)

Photo of Meghalaya, India by Saheli Bera

পাহাড়ি উপত্যকা ঘেরা অরুণাচল প্রদেশ (ছবি সৌজন্যে: ফ্লিকার)

Photo of Arunachal Pradesh, India by Saheli Bera

প্রকৃতির অকৃত্রিম ছোঁয়া (ছবি সৌজন্যে : ধীরজ দ্বিবেদী)

Photo of Mizoram, India by Saheli Bera

ঐতিহ্যঘেরা ত্রিপুরা ( ছবি সৌজন্যে: ফ্লিকার)

Photo of Tripura, India by Saheli Bera

৭। নাগাল্যান্ড

সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে ভরপুর নাগাল্যান্ডের একটি ছবি (ছবি সৌজন্যে : ফ্লিকার)

Photo of Nagaland, India by Saheli Bera

৪। মণিপুর

মণিপুর নামের অনুবাদ করলে দাঁড়ায় 'মণির দেশ ' ( ছবি সৌজন্যে : ফ্লিকার)

Photo of Manipur, India by Saheli Bera

আপনি যদি মূল ভারত থেকে যাত্রা করেন তাহলে অসম না পেরিয়ে আপনি সেভেন সিস্টারে প্রবেশ করতে পারবেন না। এই রাজ্যবাসীর উষ্ণ অভ্যর্থনা এবং সমৃদ্ধ ঐতিহ্য আপনাকে মুগ্ধ করবেই। এবং এই একই কারণে এই রাজ্যটি অহম নামেও পরিচিত। ব্রহ্মপুত্র নদীর তীরে অবস্থিত এই রাজ্যটির ভৌগোলিক পটভূমি মনোমুগ্ধকর, অত্যন্ত যত্ন সহকারেই পরিচর্যিত চা-বাগান এবং বিস্তীর্ণ প্রান্ত জুড়ে ধানের ক্ষেত দিয়ে সাজানো রয়েছে রাজ্যটি জুড়ে।

প্রসিদ্ধ : চা এবং রেশম

দর্শনীয় স্থান : গুয়াহাটি (কামাখ্যা মন্দির), কাজিরাঙা ন্যাশনাল পার্ক (বিখ্যাত একশৃঙ্গ গণ্ডারের জন্য), মাজুলি (এশিয়ার সরব বৃহৎ নদীর ক্ষয়কাজের ফলে তৈরি দ্বীপ)।

কী করবেন : বিহু নাচ অবশ্যই দেখবেন, যা ঋতু পরিবর্তন উদযাপনের সময় পালন করা হয়, একইসঙ্গে কামাক্ষ্যা দেবীর উদ্দেশ্যে নিবেদিত অম্বুবাচি মেলা থেকেও ঘুরে আসতে পারেন।

স্থানীয় ব্যঞ্জন : ধোঁয়া ওঠা অসম-টি এর কাপে এক চুমুক না দিলেই নয়। এক ধরনের সামুদ্রিক মাছ তেঙ্গার টক স্বাদের পদ খুব জনপ্রিয়। একবার স্বাদ নিয়ে দেখে নিতে পারেন সবথেকে ঝাল লঙ্কা ভুত ঝোলাকিয়া (তবে অবশ্যই নিজের দায়িত্বে)।

আবহাওয়া: শীতকালে তাপমাত্রা ৮-২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে আর গ্রীষ্মকালে ৩৫-৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে।

বেড়ানোর জন্যও সবথেকে ভাল সময় সারা বছর একথা নিঃসন্দেহে বলতে পারি।

মাথা পিছু গড় খরচ : ১১০০০ টাকা ৫ দিনের জন্য

কি ভাবে যাবেন : সবথেকে নিকটতম বিমানবন্দর হল গুয়াহাটির লোকপ্রিয় গোপীনাথ বরদলৈ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। দেশের সমস্ত বড় শহর থেকে এই বিমানবন্দরের মাধ্যমে যোগাযোগ রাখা সম্ভব হয়।

২। মেঘালয়

সারাবছরেই এখানে প্রবল বৃষ্টিপাতের জন্য এই রাজ্যটির নামকরণ বেশ যথার্থ বলতেই হবে... এ যেন সত্যিই কোনও এক 'মেঘের রাজ্য'। খুব স্বাভাবিকভাবে রাজ্যটি সবুজের চাদরে এবং ছোট বড়ো জলাশয়ে ঘেরা। যেহেতু জুন এবং সেপ্টেম্বর এর মধ্যে সর্বাধিক বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে তাই এই কয়েকটি মাস ছাড়া বছরের অন্যান্য সময় বিস্তীর্ণ সবুজ পাহাড়, চঞ্চল জলপ্রপাত এবং সীমাহীন গুহা দেখার জন্য আপনি বেছে নিতে পারেন। মেঘালয়ের মায়াবী সৌন্দর্য না দেখলে সেভেন সিস্টারের দেশে আপনার ভ্রমণ একেবারেই অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।

প্রসিদ্ধ : বৃষ্টিপাত এবং বিভিন্ন প্রকারের অর্কিড

দর্শনীয় স্থান : চেরাপুঞ্জি এবং মৌসিনরাম (পৃথিবীর আর্দ্রতম স্থান), শিলং (এলিফান্ত ফলস, মাওম্বুইন গুহা), উইলিয়মনগর (পরিযায়ী পাখি দেখার জন্য)

কী কী করবেন : শরতকালে দেখে আসুন ওয়াঙ্গালা ড্রাম উৎসব, পায়ে হেঁটে ঘুরে নিতে পারেন চেরাপুঞ্জির বিভিন্ন প্রাকৃতিক রুট ব্রিজগুলিতে।

স্থানীয় ব্যঞ্জন : মেঘালয়ে মঙ্গোলীয় আদিবাসী সম্প্রদায়ের বাস বিশেষভাবে লক্ষ করা যায়। স্বাভাবিক ভাবে এখানকার খাওয়াদাওয়া অন্যান্য রাজ্যগুলি থেকে একটু আলাদা।এখানে ঝাল মাংস এবং মাছের পদের উপরে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়।

আবহাওয়া : শীতকালে ৮-১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং গ্রীষ্মকালে ২০-৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে তাপমাত্রা থেকে থাকে।

বেড়ানোর জন্য সবথেকে ভাল সময় : এপ্রিল থেকে জুন

মাথা পিছু গড় খরচ : ১০,৫০০ টাকা ৫ দিনের জন্য

কীভাবে যাবেন : এখানকার নিকটতম বিমানবন্দর হল উমরই বিমানবন্দর যা শিলং থেকে প্রায় ৩০ কিমি দূরে অবস্থিত। এই বিমানবন্দরটিও দেশের সমস্ত বড় শহর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কলকাতা এবং গুয়াহাটির মাধ্যমে।

৩। অরুণাচল প্রদেশ

সেভেন সিস্টার রাজ্যগুলোর মধ্যে সবথেকে কম পরিচিত হয়তো এই রাজ্যটি। অরুণাচল প্রদেশকে রীতিমত 'সূর্যোদয়ে আলোকিত এক পাহাড়ের দেশ' নামেও পরিচয় দেওয়া হয়ে থাকে। এই রাজ্যের ২৬টি আদিবাসী গোষ্ঠী বিস্তীর্ণ সবুজে মোড়া এলাকাতে শান্তিপূর্ণভাবে একে অন্যের সঙ্গে বসবাস করে। দুর্গম পর্বতশ্রেণী এবং ঘন জঙ্গলের এর মধ্যে সূর্যাস্তের প্রবেশ একেবারেই দুরূহ বিষয়। অরুণাচল প্রদেশের এক মায়াবী জগত বরাবর পর্যটকদের হাতছানি দিতে থাকে।

প্রসিদ্ধ: বৌদ্ধ মনেস্ট্রি এবং জ়িরো উৎসব

দর্শনীয় স্থান : জ়িরো উপত্যকা (এখানে ভারতের সবথেকে নির্জন সঙ্গীত উৎসব), তাওাং মনেস্ট্রি (একটি অসাধারণ তাওাং মনেস্ট্রি, যা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১০,০০০ ফুট উপরে অবস্থিত), সেলা পাস (বরফে জমা হ্রদ এবং অজানা অচেনা পাহাড়ি রাস্তা )

কী কী করবেন : কামেং নদীতে ওয়াটার রাফটিং এবং সাংটি উপত্যকাতে পাখি পরিদর্শন করার মতো বিষয়গুলো হল এখানকার জনপ্রিয় ট্রাভেল প্রোগ্রামগুলোর মধ্যে অন্যতম।

স্থানীয় ব্যঞ্জন: সেভেন সিস্টারের অন্যান্য রাজ্যগুলির মত এখানেও ভাত হচ্ছে এখানকার প্রধান খাদ্য। চাল থেকে এখানে একধরনের বিয়ার তৈরি করা হয়, যা আপং নামে পরিচিত। এই পানীয় এখানে খুবই জনপ্রিয়। স্বাদ নিয়ে নিন পিকা পিলার যা এখানকার একটি স্থানীয় আচার যেটি বাঁশের অঙ্কুর থেকে তৈরি হয়।

আবহাওয়া : শীতকালে ১৫-২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং গ্রীষ্মকালে ৩২-৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে তাপমাত্রা থেকে থাকে।

বেড়ানোর জন্য সবথেকে ভাল সময় : অক্টোবর থেকে মার্চ

মাথা পিছু গড় খরচ : ১২,০০০ টাকা ৫ দিনের জন্য

কীভাবে যাবেন : যদিও অরুণাচল প্রদেশে কোনও বড় এয়ারপোর্ট এখনও পর্যন্ত নেই কিন্তু তাহলেও রাজ্যটি বাকি দেশের সঙ্গে বেশ ভাল ভাবে যুক্ত। নিকটতম বিমানবন্দর অসমের লীলাবাড়ি নাহারলাগুন থেকে ৫৭ কিমি এবং রাজধানী ইটানগর থেকে ৬৭ কিমি দূরে অবস্থিত। কলকাতা থেকে তেজপুর (ইটানগর থেকে ২১৬ কিমি) এবং দিল্লি থেকে গুয়াহাটির সরাসরি বিমান পাওয়া যায় খুব সহজেই।

যে স্থানের নামের অনুবাদ করলে অর্থ দাঁড়ায় 'মনির দেশ' সেই স্থান অবশ্যম্ভাবী ভাবেই অনন্য এবং অতুলনীয় হবেই। বিভিন্ন ধরনের ক্রীড়া থেকে জিভে জল আনা ব্যঞ্জন, সংস্কৃতি থেকে সংরক্ষণযোগ্য ঐতিহ্য সবকিছু মিলিয়ে মিশিয়ে মণিপুর নামেতেই সর্বোতভাবে যথাযথ। রাজ্যটির বেশিরভাগ ঘন জঙ্গলে ঘেরা হওয়ার কারণে এটি অনেক বিরল প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণীকুলের বাসস্থান এবং একই সঙ্গে এখানে গোরিলা বাহিনির জন্য বেশ বিখ্যাত। আপনি যদি মণিপুর ভ্রমণে যান তবে সবসময় চেষ্টা করবেন সাথে অন্তত কমপক্ষে একজন স্থানীয় বাসিন্দা যেন অবশ্যই থাকে।

প্রসিদ্ধ: শাস্ত্রীয় নৃত্য এবং অসাধারণ হস্তশিল্প

দর্শনীয় স্থান : ইম্ফল (কাংলা দুর্গ ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ), মইরাং (কেইবুল লামজাও, বিশ্বের একমাত্র জলে ভাসমান ন্যাশনাল পার্ক), আন্দ্র (একটি প্রাচীন মণিপুরি গ্রাম যা মৃৎশিল্প এবং পুতুল প্রদর্শনীর জন্য বিখ্যাত)।

কী কী করবেন : কেইবুল লামজাও পার্কে দেখে নিন বিলুপ্তপ্রায় সাঙ্গাই। জমিয়ে শপিং করুন ইমা কেইথাল মার্কেট থেকে, যেটি বিশ্বের মধ্যে একটি অন্যতম বৃহৎ বাজার, যা পুরোপুরি মহিলাদের জন্যই।

স্থানীয় ব্যাঞ্জন: ভারতের অন্যান্য জায়গা থেকে মনিপুরের খাওয়াদাওয়া একেবারেই আলাদা। এখানকার বেশির ভাগ খাবারই খুব স্বাস্থ্যকর এবং লঙ্কা, গোলমরিচ ও নুন্যতম তেলের ব্যাবহার এখানে বিশেষ ভাবে লক্ষ্য করা যায়। স্বাদ নিয়ে দেখে নিতে পারেন নংরি, যা মাছ পচিয়ে বানান হয়।

আবহাওয়া : শীতকালে ০-১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং গ্রীষ্মকালে ৩৫-৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে তাপমাত্রা থেকে থাকে।

ঘুরতে যাওয়া জন্য সবথেকে ভাল সময় : অক্টোবর থেকে মার্চ

মাথা পিছু গড় খরচ : ৯৫০০০ টাকা ৫ দিনের জন্য

কীভাবে যাবেন : এখানকার প্রধান বিমানবন্দর হল ইম্ফল বিমানবন্দর। আইজ়ল, বাঙ্গালোর, দিল্লি, কলকাতা এবং শিলচর থেকে এখানে সরাসরি আপনি বিমান পেয়ে যাবেন।

৫। মিজ়োরাম

ঠিক যেই মুহূর্তে আপনি মিজোরামে প্রবেশ করবেন এখানকার বাতাসে আপনি পেয়ে যাবেন মুক্তির স্বাদ। জাতপাত, লিঙ্গবৈষম্যর সঙ্কীর্ণতা থেকে এই রাজ্য নেই এবং এখানকার মহিলাদের সবসময় আত্মবিশ্বাসে ভরপুর চলাফেরা এবং জীবনযাত্রা দেখলে সহজেই বোঝা যায় যে নিয়মের গণ্ডিতে আটকে বেঁধে রাখার সমাজব্যবস্থা এখানে একেবারেই নেই। মনভাল করা গানের সুর এবং মনোমুগ্ধকর পাহাড়ে ঘেরা এই রাজ্য নিজের সীমান্ত ভারতের থেকে মায়ানমারের সঙ্গে বেশি ভাগ করে।

প্রসিদ্ধ: খ্রিস্টান ধর্ম এবং শিক্ষিতের হার

দর্শনীয় স্থান : ফংপুই পাহাড় যা স্থানীয় ভাবে দেবতার পাহাড় হিসেবে পরিচিত এবং মিজ়োরামের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ, আইজ়ল (ছিংপুই স্মৃতিসৌধ, ফুল্পুই কবর), ভান্তাওয়াং জলপ্রপাতও অন্যতম দেখার মতো জায়গা।

কী কী করবেন : কেইবুল লামজাও পার্কে দেখে নিন বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী সাঙ্গাই। জমিয়ে শপিং করুন ইমা কেইথাল মার্কেট থেকে, যেটি বিশ্বের মধ্যে একটি অন্যতম বৃহৎ বাজার যা পুরোপুরি মহিলাদের জন্য।

স্থানীয় ব্যাঞ্জন: ভারতের অন্যান্য জায়গা থেকে মনিপুরের খাওয়াদাওয়া একেবারেই আলাদা। এখানকার বেশির ভাগ খাবারই খুব স্বাস্থ্যকর এবং লঙ্কা, গোলমরিচ ও নুন্যতম তেলের ব্যবহার এখানে বিশেষ ভাবে লক্ষ করা যায়। স্বাদ নিয়ে দেখে নিতে পারেন একটি স্থানীয় পদ নংরির, যা সামুদ্রিক মাছ পচিয়ে বানানো হয়।

আবহাওয়া : শীতকালে ০-১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং গ্রীষ্মকালে ৩৫-৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে তাপমাত্রা থেকে থাকে।

বেড়ানোর জন্য সবথেকে ভাল সময় : অক্টোবর থেকে মার্চ

মাথা পিছু গড় খরচ : ৯৫০০ টাকা ৫ দিনের জন্য

কীভাবে যাবেন : এখানকার প্রধান বিমানবন্দর হল ইম্ফল বিমানবন্দর। আইজ়ল, বাঙ্গালোর, দিল্লি, কলকাতা এবং শিলচর থেকে এখানে সরাসরি আপনি বিমান পেয়ে যাবেন।

৬। ত্রিপুরা

আপনি যদি এখনও পর্যন্ত ত্রিপুরা না গিয়ে থাকেন তাহলে খুব সম্ভবত আপনি একটি দারুণ সুযোগ হাতছাড়া করতে চলেছেন। কারণ এখানকার রাজকীয় গরিমায় সমৃদ্ধ রাজপ্রাসাদ এবং মন্দির খুব শীঘ্রই সারা পৃথিবীর নজর কাড়তে চলেছে। যদিও রাজ্যটি খুবই সীমিত পর্যটন ব্যবস্থাতেই আপাতত সীমাবদ্ধ আছে কিন্তু তাহলেও এখানে বেড়াতে আসার জন্য অনুমতি পাওয়ার জন্য তেমন বিশেষ কোন ঝামেলা নেই। এই ইন্টারনেটের যুগেও রাজ্যটি এখনো পর্যন্ত যে এতটা অনাবিষ্কৃত হয়ে রয়েছে এটাই এই ত্রিপুরাকে অন্যান্য জায়গার থেকে একদম আলাদা করে তোলে।

প্রসিদ্ধ: আনারস

দর্শনীয় স্থান : আগরতলা ( তাক লাগিয়ে দেওয়া স্থাপত্য যেমন উজ্জয়ন্ত প্রাসাদ, নীরমহল, কুঞ্জাবন), উনাকতি (পাথর কেটে বানান ভাস্কর্য শিল্পের জন্য), কুমারঘাট (আনারস চাষ এবং কামাল সাগর হ্রদ )

কী কী করবেন : হ্রদের ঠিক মাঝখানে বানান প্রাসাদ নীরমহলের চারিদিকে নৌকাভ্রমণের অভিজ্ঞতা খুবই সুন্দর। স্থানীয় আদিবাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে ট্রেক করে উঠে যান জাম্পুই পাহাড়ে। জুলাই মাসে খারছি পুজোতে অংশগ্রহণ করতে পারেন।

স্থানীয় ব্যঞ্জন: ত্রিপুরাতে নিরামিষ এবং আমিষ দুই ধরনের ব্যঞ্জনই বেশ বিখ্যাত তবে এখানকার শুকনো মাছের চাটনি অবশ্যই খেয়ে দেখবেন।

আবহাওয়া : শীতকালে ৫-১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং গ্রীষ্মকালে ৩২-৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে তাপমাত্রা থেকে থাকে।

বেড়ানোর জন্য সবথেকে ভাল সময় : সারা বছর

মাথা পিছু গড় খরচ : ৮০০০ টাকা ৫ দিনের জন্য

কি ভাবে যাবেন : এখানকার প্রধান বিমানবন্দর হচ্ছে আইজ়ল এবং গুয়াহাটি, ইম্ফল এবং কলকাতা থেকে এখানকার নিয়মিত বিমান পাওয়া যায়।

নাগদেবতা অর্থাৎ সাপের দেশ হল নাগাল্যান্ড- এখানকার সৌন্দর্যতে লুকিয়ে রয়েছে সূক্ষ্ম থেকে সূক্ষ্মতম জিনিসের মধ্যে। এখানকার বেশির ভাগ বাড়ি কাঠের তৈরি এবং চারিদিকে পাহাড়ে ঘেরা উপত্যকার মধ্যে ছবির মত ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে এই ছোট্ট বাড়িগুলো। দেশের একেবারে সীমান্তে অবস্থিত হওয়ার জন্য রাজ্যটিতে রাজনৈতিক অশান্তি মাঝেমধ্যে লেগেই থাকে।সুতরাং নাগাল্যান্ডে পাড়ি দেয়ার আগে অবশ্যই একবার দেখে নেবেন তাৎক্ষনিক রাজনৈতিক অবস্থা।

প্রসিদ্ধ: নাগা গোষ্ঠী এবং হর্নবিল উৎসব

দর্শনীয় স্থান : কিসামা (ডিসেম্বর মাসে এখানেই হরনবিল উৎসব পালিত হয়), জৌকু ভ্যালি (সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২৫০০ মিটার ওপরে অবস্থিত এই স্থানটি থেকে চারিদিকের পাহাড়ের অভূতপূর্ব দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়) দিমাপুর (কাচারির ঐতিহাসিক ভগ্নাবশেষ)

কী কী করবেন : হাইক করে উঠে যান এখানকার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ জাপফু পিকে। তুফেমা গ্রামে নাগা গোষ্ঠীর মত স্থানীয় জীবনযাপন করুন। বাঘ দেখতে হলে ঘুরে আসুন ইন্তাঙ্কি অভয়ারণ্য থেকে।

স্থানীয় ব্যঞ্জন: এখানকার স্থানীয় বাসিন্দারা অতীতের একটি বিশাল সময় জুড়ে শিকারিদের মত জীবনযাপন করত। খুব স্বাভাবিক ভাবেই এখানে বিভিন্ন রকমের মাংস এবং মাছের পদের প্রাধান্য পাওয়া যায়। এখানে আপনি খেয়ে দেখতে পারেন সাবেকি নাগা থালি যা ভাত, বাসি মাছ এবং স্থানীয় চাটনি তাথুর সঙ্গে পরিপূর্ণ হয়।

আবহাওয়া : রাজ্যটিতে প্রায় সারা বছরই আর্দ্র জলবায়ু থেকে থাকে এবং বছরে গড়ে ২৫০০ মিমি বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। তবে তবে যদি ভারি বৃষ্টিপাত না হয় তাহলে আবহাওয়া সাধারণত আরামদায়ক থাকে।

বেড়ানোর জন্য সবথেকে ভাল সময় : অক্টোবর থেকে মে মাস।

মাথা পিছু গড় খরচ : ৮৭০০ টাকা ৫ দিনের জন্য।

কীভাবে যাবেন : এখানকার নিকটতম বিমানবন্দর হচ্ছে দিমাপুর এবং গুয়াহাটি এবং কলকাতা থেকে নিয়মিত বিমান পাওয়া যায়।

সুতরাং এখন আপনি আমাদের দেশের সেভেন সিস্টার সম্বন্ধে মোটামুটি অবগত হয়ে গেছেন। আপনি কি এই রহস্যে ঘেরা রাজ্যগুলির উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়তে প্রস্তুত?

নিজের বেড়ানোর অভিজ্ঞতা ট্রিপোটোর সঙ্গে ভাগ করে নিন আর সারা বিশ্ব জুড়ে অসংখ্য পর্যটকদের অনুপ্রাণিত করুন।

বিনামূল্যে বেড়াতে যেতে চান? ক্রেডিট জমা করুন আর ট্রিপোটোর হোটেল স্টে আর ভেকেশন প্যাকেজে সেগুলো ব্যাবহার করুন।

(এটি একটি অনুবাদকৃত/অনুলিখিত আর্টিকেল। আসল আর্টিকেল পড়তে এখানে ক্লিক করুন!)

Further Reads