আমরা ছয় বন্ধু মিলে দীঘা গেছিলাম এই বছরের শুরুর দিকে। আমাদের মাথা পিছু খরচা হয়েছিল মাত্র ২০০০ টাকা। অবাক হয়ে গেলেন তো? ভাবছেন, কিভাবে সম্ভব?
চলুন তাহলে, দুইদিনের জন্য ঘুরে আসা যাক দীঘা থেকে মাত্র ২০০০ টাকায়।
প্রথমে কলকাতা থেকে স্টেট বাস ধরলাম দীঘার উদ্দেশ্যে। কলকাতা থেকে দীঘা বাস ভাড়া হলো মাত্র ১৫০ টাকা। আমরা দীঘা বাসস্টপ অর্থাৎ নিউ দীঘাতে নেমেছিলাম।
দীঘা বাসস্টপ থেকে নিউ দীঘা সি- বীচ অনেক কাছে, প্রায় ৫ মিনিটের হাঁটা পথ। নিউ দীঘা সি- বীচের কাছেই সস্তায় থাকার হোটেল পেয়ে যাবেন। মাথা পিছু আমাদের রুম ভাড়া পড়েছিল প্রতি রাত২২৫ টাকার মতো - তাও আবার এসি রুম। রুমগুলো যথেষ্ট ভালো ছিল - সঙ্গে টিভি ও অ্যাটাচ বাথরুম ছিল। ডেইলি রুম সার্ভিস এর ব্যবস্থা আছে।
আমাদের কলকাতা থেকে দিঘাতে পৌঁছাতে সময় লেগেছিল প্রায় ৫ ঘণ্টার মতো। যখন দীঘায় ঢুকি তখন ঘড়িতে বাজে দুপুর ৩ টে। প্রথমে আমরা লাঞ্চ সেরেনি। বাস স্টপে অনেক হোটেল আছে। সেখানে ভালো খাবার পেয়ে যাবেন। ওখানে আপনার খরচ হবে খুব বেশী ৫০-৭০ টাকার মতো। আমরা ডিম ভাত খেয়েছিলাম। মাথা পিছু খরচা হয়েছিল ৪০ টাকার মতো।
আমাদের হোটেলটা আগে থেকে ঠিক করা ছিল। আপনারাও বিভিন্ন মোবাইল অ্যাপ এর মাধ্যমে হোটেল আগে থেকে বুকিং করে রাখতে পারেন। অথবা ওখানে গিয়েও বুকিং করতে পারেন। আমরা গুগল সার্চিং করে হোটেল খুঁজে বের করে। সেখানে ফোন করে বুকিং করেছিলাম। এতে আরও সস্তায় পাওয়া যায় অ্যাপ এর বুকিং এর তুলনায়।
হোটেলে যখন পৌঁছে প্রথমে চেক ইন করি। এরপর সবাই নিজের নিজের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়। তারপর সবাইমিলে একটু আড্ডা হয়। এই করতে করতে সন্ধ্যে ৬ টা হয়ে যায়। আমরা বেরিয়ে পরি বীচের উদ্দেশ্যে। হোটেল থেকে মাত্র ১-২ মিনিটের রাস্তা। বীচে গিয়েই প্রথমে আমরা চা খাই। এরপর নেমে পরি সন্ধ্যার ঢেউএর সৌন্দর্য দেখতে।
সমুদ্রসৈকতে মজা নেওয়ার পর আমরা বেরিয়ে পরি মার্কেট পরিদর্শনের জন্য। সমুদ্রসৈকতের ওপরেই আছে এই মার্কেট। এখানে হরেক রকমের সুস্বাদু খাবার, সামুদ্রিক মাছ থেকে শুরু করে সরঞ্জাম সব পাওয়া যায়। আমরা এখানে পমফ্রেট মাছ ভাজা খেয়েছিলাম। মাথা পিছু ৩০ টাকা করে পড়েছিল। মার্কেটটা একটু ভুলভুলাইয়ার মতো। হোটেলে যাওয়ার রাস্তা হারিয়ে যেতে পারেন। আমরা তো ৩-৪ বার গোল গোল করে মার্কেটে টা ঘুরেছিলাম। হাস্যকর বিষয়।
এরপর রাতের খাবার খেয়ে ফিরে যান নিজেদের রুমে। রুমেও খাবার নিয়ে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে খেতে পারেন। আমরা চিকেন ভাত খেয়েছিলাম। মাথা পিছু পড়েছিল ৬০ টাকার মতো।
তাহলে প্রথমদিনের খরচ হল:-
১) বাস ভাড়া-১৫০ টাকা
২) হোটেল- ২২০ টাকা
৩) দুপুরের খাবার-৪০ টাকা
৪) পমফ্রেট মাছ ভাজা-৩০ টাকা
৫) রাতের খাবার-৬০ টাকা
৬) চা + অন্যান্য-৫০ টাকা
টোটাল খরচ হল-৫৫০ টাকা
দ্বিতীয় দিন
পরের দিন ভোরে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে পরি। ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে পরি সূর্যোদয় দেখতে। তখন ঘড়িতে বাজে ভোর ৪:৩০ টে। সি - বীচের কাছে থাকার এটা একটা খুব বড়ো সুবিধা- যখন খুশি খুব কম সময়ের মধ্যেই সমুদ্রসৈকতে হাজির হওয়া যায়।
সমুদ্রসৈকতে গিয়ে খুব মজা করি। সকালের অপরূপ সৌন্দর্য দেখে আমাদের মন মুগ্ধ হয়ে যায়। সূর্যের আলোর আভায় চারিদিক আলোকিত হয়ে ওঠার দৃশ্য যেনো এখনো আমাদের চোখে ভেসে আসে। প্রকৃতির সৌন্দর্য অপূর্ব। না দেখলে চরম মিস করবেন।
রুমে যখন ফিরে আসি ঘড়িতে তখন বাজে সকাল ৭ টা। এসে তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট করতে বেরিয়ে পরি। নিজের নিজের পছন্দমতো সবাই ব্রেকফাস্ট করেনি। খুব বেশি হলে ৫০ টাকার মতো খরচা হবে। তারপর একটু আড্ডা দিয়ে বেরিয়ে পরি দীঘার সমুদ্রতট- এর উদ্দেশ্যে ঢেউয়ের সঙ্গে খেলা করার জন্য। ঘড়িতে তখন বাজে সকাল ৯ টা।
দুপুর ১ টা পর্যন্ত খুব আনন্দ করি সবাই মিলে নিউ দীঘা সি বীচ-এ। ডাবের জল খায়। একটা ফুটবলও কিনেছিলাম সমুদ্রসৈকতে খেলার জন্য। ৩০-৫০ টাকার মতো খরচা হয় সবমিলিয়ে।
আমরা রুমে এসে আবার স্নান করি। কারণ সমুদ্রের জল হল লবণাক্ত। স্নান সেরে দুপুরের লাঞ্চ সেরেনি। সামুদ্রিক মাছের ঝোল দিয়ে ভাতটা সেরা লেগেছিল। যদিও মাছের নামটা মনে পড়ছে না। মাথা পিছু ১৪০ টাকার মতো খরচা হয়েছিল।
এরপর আমরা বেরিয়ে পরি সাইটসিন দেখার জন্য। একটা টোটো করে নেবেন। কাছাকাছি প্রায় সব জায়গা ঘোরা হয়ে যাবে।
কি কি দেখবেন নিউ দীঘার কাছাকাছি এরিয়ার মধ্যে?
১) অমরাবতী পার্ক:- এটা নিউ দীঘা বাস স্টপ থেকে অনেক কাছে। হেঁটেও যাওয়া যাবে। এখানে একটা লেক আছে যার নাম অমরাবতী লেক। এছাড়া এখানে পার্ক আছে, রোপওয়ে এর ব্যবস্থা আছে, বোটিং এর ব্যবস্থা আছে, ক্যান্টিন আছে ইত্যাদি সব মিলিয়ে বেশ ভালো ঘোরার জায়গা। এন্ট্রি ফি মাত্র ১০ টাকা।
2) ওয়ান্ডারল্যান্ড কাজল দীঘি:- এটা একটা আমিউজমেন্ট পার্ক। এখানে টয়ট্রেন আছে ও আরও খেলার সামগ্রী আছে। এটা বাচ্চাদের জন্য বেশ ভালো জায়গা। এন্ট্রি ফি ৫ টাকা। পার্ক আছে এবং বোটিং এর ব্যবস্থা আছে।
৩) তালসিরি সি বীচ:- এই স্থানটি লাল কাঁকড়ার জন্য বিখ্যাত। এখানে অবশ্যই যাবেন। নিউ দীঘা থেকে মাত্র ৮ কিমি রাস্তা।
৪) উদয়পুর সি বীচ:- নিউ দীঘা থেকে মাত্র ৮-১০ কিমি রাস্তা। উড়িষ্যার বালেরশ্বর জেলা ও বাংলার সীমানায় অবস্হিত এই সমুদ্রতট।
৫) শিবমন্দির, চন্দনেশ্বর:- নিউ দীঘা থেকে মাত্র ৬ কিমি রাস্তা দূরে এই শিবমন্দির অবস্হিত।
৬) দীঘা সাইন্সেস সেন্টার:- এটা নিউ দীঘায় অবস্হিত। খুব ভালো জায়গা। এন্ট্রি ফি ২৫ টাকা মাথা পিছু।
৭) মারিন স্টেশন/ অ্যাকুয়ারিয়াম অফ জুলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া:- বেশ আকর্ষণীয় জায়গা এটা। বেশিরভাগ টুরিস্টরা এখানে একবার অবশ্যই আসেন। এটা হলো ইন্ডিয়ার সবথেকে বড়ো ইনবিল্ট অ্যাকুয়ারিয়াম। নিউ দীঘা বাস স্টপ থেকে মাত্র ৩-৪ মিনিটের হাঁটা পথ।
৮) শংকরপুর বীচ:- হাতে যদি সময় থাকে তাহলে অবশ্যই এখানে একবার ঘুরে আসবেন। নিউ দীঘা থেকে একটু দূরে অবস্থিত- প্রায় ১৭-১৯ কিমি এর রাস্তা।
আমরা যখন হোটেলে ফিরলাম তখন ঘড়িতে বাজে রাত আটটা। এরপর ফ্রেশ হয়ে একটু নিজেদের জন্য ও ফ্যামিলির জন্য যে যার নিজের মতো মার্কেটিং করতে শুরু করলাম। কিছু স্বরনীয় করে তো রাখতে হবে!
দ্বিতীয় দিনে খরচার হিসাব:-
১) ব্রেকফাস্ট-৫০ টাকা
২) লাঞ্চ-১৪০ টাকা
৩) টোটো + পরিদর্শন স্থানগুলোর এন্ট্রি ফি+ মার্কেটিং-৩০০ টাকা
৪) রাতের খাবার-৫০ টাকা
৫) চা+অন্যান্য-১০০ টাকা
৬) হোটেল-২২০ টাকা
টোটাল খরচ হলো-৮৬০ টাকা
পরের দিন সকালের বাস ভাড়া ধরে নিলে হবে = ৮৬০+১৫০= ১০১০ টাকা
তাহলে দুইদিনের টোটাল খরচ হল= ১৫৬০ টাকা।
আপনার হাতে এখনো পড়ে আছে = ২০০০-১৫৬০= ৪৪০ টাকা।
তাহলে দেখলেন তো কতো আরামে ২০০০ টাকার মধ্যে দুইদিন দীঘায় কাটিয়ে চলে এলেন।