আই এন ডি আই এ, ইন্ডিয়া! এই পাঁচটি অক্ষর কেবল একটি জাতির জন্য একটি দেশের নাম তৈরি করে না, বরং একত্রে সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, ইতিহাস, আতিথেয়তা এবং আরও অনেক কিছুর যৌথ সমষ্টিকে তুলে ধরে। আমাদের দেশ পৃথিবীর প্রাচীনতম সভ্যতার মধ্যে একটি, আর তাই বরাবরই বিশ্বজুড়ে আকর্ষণের কেন্দ্রস্থল। এর প্রথম দিনগুলোতে, এটি মশলার ব্যবসার জন্য বিশ্বের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র ছিল। যা একসময় বিদেশিদের কাছে ছিল শুধুই সাপ আর বিপদসঙ্কুল জন্তুর দেশ, সেই ভারত বিশ্বের দ্রুত বর্ধমান অর্থনীতির একটিতে রূপান্তরিত হয়েছে।
ভারত হল ঐতিহ্য আর সংস্কৃতির রঙিন সংমিশ্রণ। কিন্তু এই দেশে এখনও কয়েকটি আকর্ষণীয় রহস্য রয়েছে যা এখনও গবেষক ও বৈজ্ঞানিকরা ভেদ করতে পারেননি। বেশিরভাগ পর্যটকের কাছে যদিও ভ্রমণের অর্থ হল তাজমহল বা ইন্ডিয়া গেট দেখা। কিন্তু আমরা নিয়ে এসেছি এমন দশটি জায়গা, যেখানে শুধু আমোদ প্রমোদ করতে গেলে হবে না, যেতে হবে রহস্য সন্ধানেও।
স্থানীয়দের আলাদা করে জিজ্ঞাসা করুন বা অনলাইনে এই সম্পর্কে পড়ুন, ভারতে (এবং বিশ্ব) সর্বাধিক ভূতুড়ে স্থানগুলির তালিকা ভানগড় দুর্গ ছাড়া কখনই সম্পূর্ণ হতে পারে না। রাজস্থান রাজ্যে অবস্থিত, রাজধানী জয়পুর থেকে প্রায় ৩২ মাইল দূরে (ভারতের রাজধানী, দিল্লি থেকে ১৫০ মাইল দূরে), এই সতেরশ শতাব্দীর দুর্গটি যে ভুতুড়ে সেই ধারণা গড়ে ওঠার পিছনে অনেক কাহিনি আছে। যার মধ্যে একটি হল এমন এক তান্ত্রিকের যিনি কালা জাদু জানতেন বা পিশাচসিদ্ধ ছিলেন। স্থানীয়রা বিশ্বাস করেন যে এই তান্ত্রিকের দুষ্ট আত্মা এই জায়গাটিকে ঘেরাও করে রেখেছে এবং গভীর রাতে যারা অপরাধ করার চেষ্টা করে তাকে হত্যা করে থাকে। ভারতের প্রত্নতাত্ত্বিক সংস্থা বা এএসআই এই দুর্গ অঞ্চলের বাইরে একটি সাইন বোর্ডও রেখেছিল যেখানে সূর্যাস্তের পরে দুর্গে প্রবেশ না করার বিষয়ে স্পষ্টভাবে সতর্ক করে দিয়েছে।
বেশ কিছু গবেষণা দল (ডিস্কভারি চ্যানেল সহ) চেষ্টা করেছে এই দুর্গের রহস্য ভেদ করার, কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে। দুর্গটি সম্ভবত ভারতের একমাত্র সরকারি ভূতুড়ে স্থান।
আপনার কি পাহাড়ে চড়ার নেশা আছে? তাহলে লাদাখ হল আপনার জন্য সেরা জায়গা। ভারতে বেশ কয়েকটি বাইকার গোষ্ঠীর পছন্দের জায়গাও হল লাদাখ। লাদাখ হল জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের ভারত প্রশাসিত অংশের একটি উচ্চতা বিশিষ্ট অঞ্চল।
এই ম্যাগনেটিক হিল প্রশস্ত এবং উন্মুক্ত। এটি যথেষ্ট প্রসারিত, চারদিকে লম্বা এবং পাথুরে পাহাড় দ্বারা বেষ্টিত। লেহ্ শহর থেকে জেলা শহর কারগিলের দিকে ভ্রমণ করার সময় এরকমই দেখা যায়। লেহে্র বাইরে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে রাস্তার একটি প্রসারিত রাস্তা রয়েছে যা চড়াই এর দিকে উঠেছে। বলা হয়ে থাকে যে সেই প্রসারিত অবস্থায়, আপনার গাড়িটির ইঞ্জিন যখন বন্ধ করে দেওয়া হয় তখনও সামনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। এটি এই কারণে হয়, সম্ভবত কোনও শক্তিশালী চৌম্বকীয় ডিভাইস আশেপাশে আছে। যার জন্য কোনও গাড়িও সামনে এগিয়ে যেতে পারে। এই প্রসারিত অঞ্চলটি অতিক্রম করার সময় এমন অনেক মানুষ আছেন যারা এই অভিনব ঘটনার সাক্ষী ছিলেন। যদিও, এই চৌম্বকীয় প্রভাবের পিছনে স্থানীয়দের নিজস্ব যুক্তি আছে। তাঁরা বলেন যে এটা অপটিকাল ইলিউশনের জন্য হয়। যে রাস্তাকে চড়াই বলে মনে হয় আসলে সেটা উতরাই। চোখের ভুলে আর পাহাড়ি রাস্তার অন্য ধাঁচের নকশার জন্য এরকম মনে হয়।
বৈজ্ঞানিক বা অতিপ্রাকৃত, রহস্য সর্বদাই কৌতূহল সৃষ্টি করে। তবে, কখনও কখনও, এমন কয়েকটি রহস্য রয়েছে যা আপনাকে দুঃখ, শূন্যতা এবং হতাশায় ভরিয়ে দেয়। ভারতের পূর্বাঞ্চলের একটি ছোট্ট গ্রামের এই রহস্য সেরকমই একটি বিষয়।
অসম রাজ্যে অবস্থিত, জাটিঙ্গা গ্রামে আকাশ থেকে নিরলসভাবে বিভিন্ন পাখির প্রজাতির একটি বিশাল গণহত্যার ঘটনা ঘটে চলে। বলা হয়ে থাকে যে এই ঘটনাটি এখন বহু দশক ধরে প্রতি বছর, বর্ষা ঋতুর পরে (কখনও অক্টোবরের ) ঘটেছিল। কুয়াশাচ্ছন্ন সন্ধ্যার সময় (সন্ধ্যা ৬ টা থেকে রাত ৯ টার মধ্যে) পাখিগুলো গ্রাম অঞ্চলের দিকে উড়ে যাওয়ার সময় মারা যায়। বলা হচ্ছে এই পাখিরা আত্মঘাতী। অনেক গবেষক এই রহস্য খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছেন। অনুমান করা হচ্ছে জাটিঙ্গা গ্রামের মানুষরাই এদের হত্যা করে। তবে কারণ যাই হোক, এই দৃশ্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক।
মাটি থেকে প্রায় ৫০২৯ মিটার উচ্চতায়, একটি প্রশান্ত ও দৃষ্টিনন্দন হিমবাহ লেক রূপকুণ্ড হ্রদ নামে পরিচিত। এটি ভারতের হিমালয় অঞ্চলের সর্বাধিক বিখ্যাত ট্রেকিং ট্রেল। এই হিমশীতল হ্রদ খুলি এবং মানুষের হাড় দ্বারা আচ্ছাদিত।
রূপকুণ্ড অঞ্চলে একজন ব্রিটিশ বনরক্ষী ১৯৪৪ সালে প্রথম আবিষ্কার করেন। এই হ্রদটি তখন থেকেই বেশ কয়েকটি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক প্রত্নতাত্ত্বিকদের কাছে মনোযোগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতগুলি মাথার খুলি এবং হাড়ের রহস্য উন্মোচনের জন্য কয়েক দশক ধরে প্রচুর গবেষণা ও পরীক্ষা করা হয়েছিল। কয়েক বছর বিশ্লেষণের পরে (চুল এবং মাংস বরফের নীচে সংরক্ষণ করা হয়েছিল), গবেষকরা অবশেষে জানতে পেরেছিলেন যে এই হাড়গুলো প্রায় ৮৫০ খ্রিস্টাব্দের গোড়ার দিকে মানবদেহের অন্তর্গত ছিল তবে তাদের মৃত্যুর কারণটি এখনও অস্পষ্ট । স্থানীয় গ্রামবাসীদের কাছে এই মৃত্যুর কারণ হল একটি ভারি শিলাবৃষ্টি। এই মানুষগুলির উপর ২৩ সেন্টিমিটারের মতো বড় বরফ খণ্ড এসে পড়ে। খুলিতে কিছু ফাটল দেখে হত্যার ধারণাও অমূলক নয় সেটাও বলেছেন গবেষকরা।
মানুষ দেব দেবী, পশু পাখি থেকে শুরু করে প্রকৃতি অনেক কিছুই পুজো করে।কিন্তু কেউ একটি বাইক পুজো করছে শুনেছেন কখনও। রাজস্থানের একটি গ্রামেই ঘটেছে এই বিরল ঘটনা।
১৯৮৮ সালের ঘটনা। ওম বান্না নামে গ্রামের এক যুবক বাড়ি ফেরার পথে দুর্ঘটনায় নিহত হন। বান্নার রয়্যাল এনফিল্ড বাইক পুলিশ স্টেশনে নিয়ে যাওয়া হয়।পরের দিন সেটি নিখোঁজ হয়ে যায়। দেখা যায় যে বাইক সেই দুর্ঘটনার জায়গায় ফিরে গেছে। এরকম দুই তিনবার হওয়ার পর গ্রামবাসীরা ওমের স্মৃতিতে একটি মন্দির করে দেন। যোধপুর শহর থেকে ৩০ মাইল দূরে চোতিলা বলে একটি গ্রামে ওম বান্না বা বুলেট বাবার মদনির আছে।
রাজস্থান ভারতের অন্যতম দর্শনীয় রাজ্য এবং এটি রাজকীয় প্রাসাদ, মন্ত্রমুগ্ধ মরুভূমি ( থর), প্রাকৃতিক দৃশ্য, হস্তশিল্প, হ্রদ (উদয়পুর হ্রদের শহর হিসাবে পরিচিত) এবং আরও অনেক কারণে বিখ্যাত। তবে কুলধারা এক অন্য স্বাদের আকর্ষণ।
জয়সলমীর শহরের বাইরে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে (থরের প্রবেশপথ হিসাবে পরিচিত) কুলধারা নামে একটি বিচ্ছিন্ন গ্রাম অবস্থিত। প্রায় ৩ শতাব্দী ধরে গ্রামটি পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে বলে জানা গেছে। একসময় স্থানীয় ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের শত শত লোকের বাস ছিল এই গ্রাম। আপাতত এটি আরকিওলজিকাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার তত্ত্বাবধানে থাকা এক নিছক ধ্বংসাবশেষ। এই গ্রামকে কেন্দ্র করে চারপাশে প্রচুর গল্প রয়েছে, তবে গোটা গ্রাম কেন খালি তার আসল কারণ আজ পর্যন্ত অজানা।
কেউ জানে না রাতারাতি কীভাবে একটি গ্রামের মানুষ অদৃশ্য হয়ে গেল। যারা এই গ্রামের আশেপাশে থাকতেন তাঁরা অলৌকিক কর্ম কাণ্ডের জেরে অন্য জায়গায় চলে গিয়েছেন।
অন্ধ্রপ্রদেশের ছোট্ট একটি গ্রাম লেপাক্ষী। এখানে আছে ১৬ শতকের একটি মন্দির যা বিখ্যাত বিশেষ স্থাপত্যের জন্য। এই মন্দিরে আছে ৭০ টি স্তম্ভ। আর এই স্তম্ভের বৈশিষ্ট্য হল এগুলি সিলিং থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় আছে। মাটি থেকে এক চুল উপরে আছে এই স্তম্ভগুলি। এই ফাঁক দিয়ে পাতলা কাপড় বা কাগজ যে কোনও কিছু বের করে নেওয়া যায়।
বিকানের শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে দেশনোক গ্রাম। এখানেই আছে করনি মাতার মন্দির। এই মন্দিরে হেসে খেলে বেড়ায় প্রায় ২০ হাজার ইঁদুর। এখানে কেউ ইঁদুর মারে না, উল্টে এদের দেখভাল করে খেতে দেওয়া হয়। ইঁদুরের এঁটো করা প্রসাদও খাওয়া হয়। আজ পর্যন্ত সেই খেয়ে কেউ অসুস্থ হয়নি। এত ইঁদুর থাকে বলে এঁকে র্যাট টেম্পলও বলা হয়। করনি মাতা তাঁর জীবদ্দশায় একজন সিদ্ধ মহিলা ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর বিকানেরের রাজা হিজ হাইনেস গঙ্গা সিং মার্বেল দিয়ে এই মন্দির তৈরি করে দেন।
মণিপুরের এই হ্রদের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কোনও জবাব নেই। কিন্তু অন্যান্য হ্রদের চেয়ে এই হ্রদ আলাদা কেন জানেন? এই হ্রদ ধারণ করেছে একটা গোটা দ্বীপ, যাকে বলে ফুমদিস। ফুমদিসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল কেইবুল নামজাও জাতীয় উদ্যান। এটি বিশ্বের একমাত্র ভাসমান জাতীয় উদ্যান।
সাদামাটা একটি গ্রাম। আলাদা করে বলার কিছু নেই। তাহলে এই গ্রামের নাম এই তালিকায় কেন? কারণ এখানে ২ হাজার পরিবারের মধ্যে সর্বমোট ২২০ জন যমজ আছে! এই গ্রামকে সেইজন্য যমজদের গ্রাম বা ভিলেজ অব টুইন্স বলা হয়। কেন এখানে ঘরে ঘরে যমজ সন্তান জন্ম নেয় সেটা কেউ বলতে পারেনি।
নিজের বেড়ানোর অভিজ্ঞতা ট্রিপোটোর সঙ্গে ভাগ করে নিন আর সারা বিশ্ব জুড়ে অসংখ্য পর্যটকদের অনুপ্রাণিত করুন।
বিনামূল্যে বেড়াতে যেতে চান? ক্রেডিট জমা করুন আর ট্রিপোটোর হোটেল স্টে আর ভেকেশন প্যাকেজে সেগুলো ব্যাবহার করুন
(এটি একটি অনুবাদকৃত আর্টিকেল। আসল আর্টিকেল পড়তে এখানে ক্লিক করুন!)