ডিগবয় হল ভারতের উত্তর-পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত অসমের তিনসুকিয়া জেলার একটি শহর। ১৯ শতকের প্রায় শেষের দিকে, এক ব্রিটিশ ইঞ্জিনিয়ারের আনুকূল্যে সর্বপ্রথম এই অংশে অপরিশোধিত তেলের সন্ধান পাওয়া যায়। জীবাশ্ম জ্বালানিকেন্দ্র হওয়ার পাশাপাশি ডিগবয় শহরটি তাঁর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং তার কলোনিয়াল বা ঔপনিবেশিক আভিজাত্য নিয়ে স্ব-মহিমায় ভাস্বর।
ইংরেজ উপনিবেশ স্থাপনের প্রায় দেড়শ শতাব্দী পরেও, ঔপনিবেশিক প্রভাব এবং নিদর্শন শহরটি জুড়ে কম-বেশি ছড়িয়ে রয়েছে। ব্রিটিশ ধাঁচের আর্কিটেকচার বা স্থাপত্যের নমুনা চোখে পড়লেও শহরটির যত ভিতরে আপনি প্রবেশ করবেন, ততই আপনি দেখতে পাবেন শহরটিকে ঘিরে রয়েছে অসমিয়া বা অহমিয়া সংস্কৃতির এক সুনিপুণ প্রভাব… । এখানকার মানুষদের উষ্ণ আতিথেয়তা আপনাকে মুগ্ধ করবেই। পরিবেশ এবং প্রকৃতির অকৃপণ ছোঁয়া আপনি অনায়াসেই উপভোগ করতে পারবেন।
এখন আপনার মনে হতে পারে অসমের ডিগবয় ট্যুরিস্ট স্পট হিসেবে ঠিক কতখানি জনপ্রিয় ? সেই বিষয়েরই সামগ্রিক আলোচনা করা হল এই অংশে।
বৈজ্ঞানিক চিন্তার এক কেন্দ্রভূমি:
এশিয়ার প্রথম তেল কূপের আবাস বলে একে চিহ্নিত করা হয়, সম্ভবত ১৮৮৯ সালে এখানে প্রথম বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণা চালিয়ে তেল নিষ্কাশনের প্রক্রিয়া তৈরি করা হয়েছিল। এটি বিশ্বের প্রাচীনতম তেল উত্তোলক ক্ষেত্র এবং এখানে এখনও তেল উৎপাদন করা হয়ে থাকে, এই উদ্দেশেই ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন লিমিটেড (আইওসিএল) এখানে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং তাদের কারখানাটিও ঘুরে দেখার মতো। আপনি চাইলে তাঁরা আপনাকে একজন দক্ষ গাইডের মতো পুরো অঞ্চলঅই ঘুরে দেখাবে এবং আপনার বোধগম্য বৈজ্ঞানিক পরিভাষাতেই অপরিশোধিত তেল উত্তোলন এবং তেল পরিশোধনের বিষয়টি ব্যাখ্যা করবে। সুতরাং, এই স্থানটি দেখার মধ্যে দিয়ে আপনার নিঃসন্দেহে একধরনের বৈজ্ঞানিক অভিজ্ঞতার সঞ্চয় ঘটবে।
ঐতিহ্যপ্রেমীদের জন্য যথার্থ স্থান:
ভ্রমণপ্রেমী মানুষদের মধ্যে যারা ইতিহাসপ্রসিদ্ধ স্থান ঘুরতে ভালবাসেন, তাঁরা এখানকার শতবর্ষীয় যাদুঘরটি একবার ঘুরে দেখতে পারেন। জীবাশ্ম আবিষ্কারের ঐতিহাসিক ঐতিহ্যটিকে এক্ষেত্রে অত্যন্ত যত্ন সহকারে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। এছাড়াও রয়েছে ব্রিটিশদের ব্যবহৃত অনন্য প্রদর্শনী এবং সরঞ্জাম, সংগ্রহশালাটিতে প্রায় ১০০ বছরেরও প্রাচীন ইতিহাসকে অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে সংরক্ষণ করা হয়েছে।
যুদ্ধের ভয়াবহ স্মৃতি সংরক্ষণ:
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষিতে নির্মিত স্মৃতিসৌধটি এই অঞ্চলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল... একে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ঘটে যাওয়া সমস্ত কিছুর একটি স্মরণীয় স্মৃতি রূপে উল্লেখ করা যেতে পারে। কবরস্থানে প্রায় ১৯১ টি কবর শনাক্ত করা হয়েছে এবং যাঁদের মধ্য়ে আবার কয়েকজন অজ্ঞাত পরিচয় সৈন্যও অবশ্য রয়েছে, স্মৃতিস্তম্ভগুলির বেশিরভাগই ভারতীয় ও ব্রিটিশ সৈন্যদের, যারা জাপানিদের সঙ্গে লড়াই করে যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাণ হারিয়েছিলেন। বলাবাহুল্য সেইসকল স্মৃতি উদ্দেশেই এটি নির্মিত। সুতরাং, ইতিহাস বইয়ের পাতাতে পড়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রভাব কীভাবে ভারতীয় উপমহাদেশেও প্রভাব ফেলেছিল তা সরাসরি হদিশ খুঁজতে গেলে অবশ্যই স্থানটি ঘুরে দেখা প্রয়োজন।
স্থাপত্যশৈলী এবং ঐতিহাসিক সংস্কৃতির মিলন:
এক শতাব্দীরও বেশি পুরনো ডিগবয়ের ভিক্টোরিয়ান বাংলোগুলি সমৃদ্ধশালী ব্রিটিশ ঐতিহ্যের কথা আমাদের মনে করায়। তাঁদের বিশেষ স্থাপত্যশৈলী এবং শৈল্পিক নিদর্শন আপনাকে অবশ্যই মুগ্ধ করবে। বাংলোগুলোকে ঘিরে যেন রয়েছে না বলা অনেক ইতিহাসের কথা।
প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য আদর্শ জায়গা:
ডিগবয় জীববৈচিত্র্যের সমৃদ্ধ অঞ্চল রূপে বিশেষভাবে পরিচিত। ডিগবয় থেকে মাত্র ৬০ কিলোমিটার দূরেই অসমের বৃহত্তম ওয়াইল্ড লাইফ পার্ক রয়েছে, যেখানে প্রায় প্রতি বছর ৩০০টিরও বেশি পরিযায়ী পাখির সন্ধান পাওয়া যায়, সুতরাং পাখি পর্যবেক্ষকদের আস্তানা রূপে একে মান্যতা দেওয়া যায়। এটি বিশ্বের ১৯ টি জীববৈচিত্র্যের হটস্পটগুলির মধ্যে অন্যতম, এমনটাও বলা যায়
খাবারের বন্দোবস্ত
প্রথমেই বলে রাখা ভাল ডিগবয় একটি অত্যন্ত ছোট শহর। এখানে খাবার এবং থাকার জন্য বেশ সীমিত এবং বিকল্পের সন্ধান খুব কমই আপনার চোখে পড়বে, যদিও সাম্প্রতিককালে পর্যটকদের যাতায়াতের কারণে, তাঁদের সুবিধার্থে স্থানটির উন্নয়ন প্রক্রিয়া বেশ সচল এমনটা বলা যেতে পারে। আপনি যদি অল্প সময়ের জন্য থাকতে চান তাহলে এই শহরেই থাকতে পারেন, আর হাতে কিছুটা বেশি সময় থাকলে আশপাশের শহরগুলো ঘুরে দেখতে ভুলবেন না যেন!
শর্মা সুইটস অ্যান্ড রেস্তোরাঁ: আপনি যদি যথোপযুক্ত মিষ্টি এবং চা এর সঙ্গে স্ন্যাক্স সন্ধান করেন, তবে এটি আদর্শ জায়গা। অনেকে একে ডিগবয়ের একমাত্র জায়গা হিসাবে বিবেচনা করেন যেখানে সব থেকে সুস্বাদু মিষ্টি পাওয়া যায়। এছাড়া অন্যান্য খাবারের মধ্যে রয়েছে দোসা এবং পুরি-ভাজি ইত্যাদি।
প্রমস্ বার্গার: নাম দিয়ে এক্ষেত্রে দোকান বা দোকানির বিবেচনা করতে যাবেন না। এটি হ'ল একটি বিভিন্ন পদসমৃদ্ধ ফাস্ট ফুড রেস্তোরাঁ, আপনি চাইলে আপনা হোমস্টেতেও এরা খাবার ডেলিভারি করে দেবে। খাবারের পদগুলি একদিকে যেমন সুস্বাদু এবং তেমনই অন্যদিকে এদের পরিষেবাটিও ভাল। তাদের গ্রিলড চিকেন বার্গার এবং চিজবার্গার, কোনও একটি বৃষ্টির সন্ধ্যায় উপযুক্ত এমনটা বলতেই পারি।
সোয়াদ রেস্তোঁরা: প্রকৃতির মধ্যে, উন্মুক্ত পরিবেশে চা-খাওয়ার ইচ্ছে থাকলে অবশ্যই আপনি একবার সোয়াদ রেস্তোরাঁ ঘুরে দেখুন...
কীভাবে যাবেন ?
বিমান দ্বারা: নিকটতম বিমানবন্দরটি রয়েছে ডিব্রুগড়ে। গুয়াহাটি বিমানবন্দরও খুব ভাল বিকল্প বলা চলে। যদি আপনি খুব দূরের শহরগুলি থেকে ভ্রমণ করেন। এই বিমানবন্দরগুলি থেকে ডিগবয়তে সহজেই ক্যাব এবং বাস পেয়ে যাবেন।
ট্রেন দ্বারা: নিকটতম রেলস্টেশনটি গুয়াহাটিতে রয়েছে। আপনি সেখানে অবধি ট্রেন এবং সেখান থেকে একটি বাস বা ক্যাব নিতে পারেন।
রাস্তা দ্বারা: অন্যান্য রাজ্য থেকে বাসগুলি সরাসরি ডিগবয়তে চলাচল করে না। গুয়াহাটি বা ডিব্রুগড় এবং তারপরে সেখান থেকে স্থানীয় রাজ্য পরিবহণ পর্যন্ত আপনি একটি বাসে যেতে পারেন।
থাকবেন কোথায়?
Namdang House বা নামডাং হাউস
নামডাং হাউস ডিগবয়তে থাকার জন্য একেবারে উপযুক্ত জায়গা। এটি অনেকটাই হোমস্টের মতো এবং শিষ্টাচারী কর্মী, সুস্বাদু খাবার এবং সুবিধামত অবস্থিতি এবং সুন্দর পরিবেশ-পরিষেবা আপনি পাবেন। সাধারণত মরসুমের উপর এবং অন্যান্য অনেক বিষয়ের উপর নির্ভর করে এর প্রতিটি ঘরের ভাড়া ২০০০-৩০০০ টাকার মধ্যে।
নিজের বেড়ানোর অভিজ্ঞতা ট্রিপোটোর সঙ্গে ভাগ করে নিন আর সারা বিশ্ব জুড়ে অসংখ্য পর্যটকদের অনুপ্রাণিত করুন।
বিনামূল্যে বেড়াতে যেতে চান? ক্রেডিট জমা করুন আর ট্রিপোটোর হোটেল স্টে আর ভেকেশন প্যাকেজে সেগুলো ব্যাবহার করুন
(এটি একটি অনুবাদকৃত/ অনুলিখিত আর্টিকেল। আসল আর্টিকেল পড়তে এখানে ক্লিক করুন!)