হয়তো অজানা অচেনা জায়গা চিনে নেবার তাগিদ থেকেই আমাদের মনে জন্ম নেয় সেই সকল জায়গায় ঘুরে আসার ইচ্ছা। কিন্তু তার জন্যে লোক দেখিয়ে এক গাদা পয়সা খরচ করে আন্তর্জাতিক ডেস্টিনেশনেই যেতে হবে, তা কিন্তু নয়। ভারতেও আছে এমন অনেক জায়গা। নর্থ ইস্ট ইন্ডিয়ার নির্যাসটুকু উপভোগ করতে চাইলে চলে আসতে পারেন অরুণাচল প্রদেশ - যার সৌন্দর্য এবং খ্যাতি এখনও ছড়িয়ে পড়েনি।
মখমলের মতন বিছানো সবুজ ঘাসের গালিচার উপর দু-দণ্ড বসতে চাইলে বা দেখতে চাইলে কিছু প্রাচীন তিব্বতি গুম্ফা বা শুধু ছুঁতে চাইলে অ্যাডভেঞ্চারের পরশ, তাহলে অরুণাচল প্রদেশ আপনার জন্য একেবারে আদর্শ জায়গা।
দেখে নিই, অরুণাচল প্রদেশে কোথায় যাবেন আর কী করবেন
তাওয়াং
গুদপি এবং চং চুগমী পর্বতমালার বুকের মধ্যে নিহিত তাওয়াং সিঞ্চিত তাওয়াং চু নদীর জলে। সমগ্র এলাকাটিই ভ্রমণপিপাসুদের মনের মতো জায়গা।
গালদেন নামগে লাহত্সে বা তাওয়াং গুম্ফা ভারতবর্ষের বৃহত্তম এবং সমগ্র বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম গুম্ফা। ১১৩ ফিট লম্বা, ৮০ ফিট চওড়া এই গুম্ফাটি বৌদ্ধ মন্দির রূপে ব্যবহৃত হয়। বৌদ্ধ ধর্মের তান্ত্রিক ভাববিচারের গোপন সব সূত্র রক্ষা করে আসার জন্যেও এই গুম্ফাটিকে আলাদা মর্যাদা দেওয়া হয়।
ইন্দো চাইনা
পর্যটকদের কাছে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হল ভারতবর্ষ এবং চিনদেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চল।
কী কী দেখবেন : যশওয়ানত গড়, তাওয়াং ওয়ার মেমোরিয়াল, তাওয়াং ক্রাফট সেন্টার, ব্রহ্মা-দুং-চুং, অনি গোমপা, উর্গেলিং গোমপা, মাধুরী লেক এবং অনির্বচনীয় সৌন্দর্যের অধিকারী পাঙ্গাতেনগ সো লেক। বাপ টেং কাঙ এবং নুরানাঙ জলপ্রপাতের শোভা দেখতেও ভুলবেন না।
কখন যাবেন : মে মাস
কীভাবে পৌঁছবেন : তেজপুর বিমানবন্দর বা রাঙ্গাপাড়া রেলস্টেশনে নেমে, সেখান থেকে বাস বা ট্যাক্সি নিয়ে এগোতে পারেন।
জিরো
অ্যাডভেঞ্চার অনুরাগীদের জন্যে আছে জিরো, যেখানে পাবেন অসাধারণ সব ট্রেকিংয়ের পথ। হাইকিং ভাল লাগলে অরুণাচল প্রদেশের পাহাড়ি মালভূমির উপর অবস্থিত অসাধারণ সুন্দর এই উপত্যকাটি আপনার অবশ্যই যাওয়া উচিত। পাহাড়ি ধানের ক্ষেতের পাশের জঙ্গলঘেরা রাস্তা দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে মনের মধ্যে নেমে আসবে অসাধারণ প্রশান্তি।
কী কী দেখবেন : তাললে ভ্যালি, আর তাললে বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে দেখা পাবেন এক ঝাঁক বিরল পশুপাখির। কার্ডো পাহাড়েও যেতে পারেন আরও বন্যপ্রাণী দেখতে। সমগ্র জিরো ভ্যালিটিকে উপর থেকে দেখতে চাইলে চলে আসতে পারেন জিরো পুটু পয়েন্টে।
কখন যাবেন : অক্টোবর থেকে মার্চ
কীভাবে পৌঁছবেন : জিরোর সবথেকে নিকটবর্তী বিমানবন্দর তেজপুর হয়ে যেতে পারেন।
ইটানগর
অরুণাচল প্রদেশের রাজধানী ইটানগর টুরিস্টদের জন্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় জায়গা, এখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থাও বেশ ভাল। শহরটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম এবং দেখার জন্যেও আছে বিভিন্ন জায়গা। সাংস্কৃতিক দিক থেকে অরুণাচল প্রদেশকে চিনতে এবং তার মানুষজনকে বুঝতে চাইলে ইটানগর যেতেই হয়। ইটানগরের কেন্দ্র থেকে মাত্র ৬ কিমি দূরে অবস্থিত ঐতিহ্যমণ্ডিত গঙ্গা লেক (গ্যাকার সিনবী) একটি জিনপ্রিয় পিকনিক স্পট।
কী কী দেখবেন : জওহরলাল নেহেরু মিউজিয়াম, গোমপা বৌদ্ধ বিহার, ক্রাফট সেন্টার ও এম্পোরিয়াম থেকে কিনতে পারেন স্থানীয় হ্যান্ডিক্রাফটস বা দেওয়াল সজ্জার চিত্রহার। অল্প হাঁটাহাঁটি করতে চাইলে ঘুরে আসুন পোলো পার্ক, ইন্দিরা গান্ধী পার্ক বা জুলজিকাল পার্ক।
কখন যাবেন : অক্টোবর থেকে এপ্রিল
কীভাবে যাবেন
বাসে করে : গুয়াহাটি থেকে রেগুলার আর লাক্সারি বাস পাওয়া যায়, তবে সময় লাগে প্রায় ১১ ঘণ্টা
বিমানপথে : গুয়াহাটি থেকে ইটানগরের নাহারলাগুন পবন হংস হেলিকপ্টার সার্ভিস ব্যবহার করে সহজেই পৌঁছতে পারেন, না হলে তেজপুর সবথেকে নিকটবর্তী বিমানবন্দরে।
রোয়িং
অরুণাচল প্রদেশের গহীনে আপনি বন্ধুদের সাথেই যান বা পছন্দের মানুষটির সাথে, রোয়িং-এর আনন্দ আপনাকে দেবে নতুন জগতের সন্ধান। দিব্যাং নদীর তীরে এই ছবির মতন সুন্দর উপত্যকাটি আপনার ভিতরের ফটোগ্রাফারকে বের করে আনতে বাধ্য। ভাল ছবি তুলতে চাইলে এখানে অবশ্যই আসতে হবে।
কী কী দেখবেন : নেহেরু বন উদ্যান নামক অরণ্য উদ্যানটি খুব আকর্ষণীয় একটি স্পট।
কখন যাবেন : অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি
কীভাবে পৌঁছবেন : রেলপথে তিনসুকিয়ার ডিব্রুগড় টাউন রেলস্টেশনে নামতে পারেন, গুয়াহাটি, হাওড়া, চেন্নাই, নিউ দিল্লির সাথে সু-যোগাযোগ আছে।
অরুণাচল প্রদেশে পৌঁছনো
অরুণাচল প্রদেশ যাওয়ার জন্য বহু ট্রেন এবং প্লেন বর্তমানে লভ্য। কলকাতা, মুম্বই, দিল্লি, সমস্ত বড় শহরের সঙ্গেই যোগাযোগ ব্যবস্থা যথেষ্ট ভাল।
কোথায় থাকবেন
থাকার জায়গা নিয়েও আছে আপনার বাজেট মতন বিভিন্ন বিকল্প, ছোট্ট বাজেট হোটেল, গেস্ট হাউস, হোম স্টে থেকে লাক্সারি হোটেল, সবই পাবেন। হোটেল অশোকা, হোটেল সুবানসিরি, হোটেল দোলমা, হোটেল তাওয়াং লজ ইত্যাদি কিছু সুপরিচিত থাকার জায়গা। আপনি www.arunachaltourism.com থেকেও থাকার জায়গার ব্যাপারে বিশদ বিবরণ পেয়ে যাবেন।